বাংলাদেশের উন্নয়ন সাফল্য থেকে অনেক দেশ শিখতে পারে: বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে আমরা দেশটির আয় বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাসে এর অগ্রগতিকে স্বাগত জানাই
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেছেন, 'বাংলাদেশের উন্নয়ন সাফল্য থেকে অনেক দেশ শিখতে পারে। উদ্ভাবনী পদ্ধতির মাধ্যমে রেকর্ড সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, ব্যাপক বিদ্যুতায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য দেশটি অন্যদের থেকে আলাদা।'

আজ মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন 'বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে আমরা দেশটির আয় বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাসে এর অগ্রগতিকে স্বাগত জানাই। এদেশের ব্যবসা পরিবেশের সংস্কার, করের আওতা বাড়ানো, আর্থিক খাত শক্তিশালী করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক ও জলবায়ু অভিঘাতের প্রতি সহনশীলতা বাড়াতে আমরা সহায়তা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'

এ ছাড়া ডেভিড ম্যালপাস বাংলাদেশ এবং এর জনগণের জন্য বিশ্বব্যাংকের দৃঢ় সহায়তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস সোমবার বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারত্ব উদযাপন করেন। 

এই অংশীদারত্ব লাখ লাখ বাংলাদেশিকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করেছে এবং এ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে সহায়তা করেছে। আঞ্চলিক যোগাযোগ, বন্যা দুর্যোগ মোকাবিলা, সবুজ, অভিঘাত সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, পরিবেশ ব্যবস্থপনার উন্নয়ন ও মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজ সেক্টরকে কম দূষণকারী এবং আরও জলবায়ু- সহনশীল হতে সাহায্য করতে বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংক মোট ২২৫ কোটি ডলার সহায়তা করেছে।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দরিদ্রতম দেশ থেকে ২০১৫ সালে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ করে। দেশটি এখন পৃথিবীর দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর অন্যতম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, '১৯৭১ সালে বাংলাদেশের যখন জন্ম হয় তখন অনেক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ এ দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে আশা সঞ্চারণ করেছেন, তা সঙ্গে নিয়ে আমাদের জনগণ বিশ্বকে দেখিয়েছে যে, দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে কঠিনতম চ্যালেঞ্জও উত্তরণ সম্ভব। বাংলাদেশ এর অর্থনীতিকে রূপান্তর করেছে এবং অধিকতর অভিঘাত সহনশীল করেছে যার নিদর্শন কেভিড-১৯ অতিমারির সময়ে দেখা গেছে। 

তিনি বলেন, 'এ দেশের যাত্রা সব সময় সহজ ছিল না, কিন্তু আমরা কখনো সাহস হারাইনি। গত ৫০ বছরে, বিশ্বব্যাংক আমাদের অবিচল উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ছিল এবং আমাদের আকাঙক্ষাকে সমর্থন করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জনে আমরা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আশা করছি।'

প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট একটি মাল্টিমিডিয়া ফটো প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন যা গত ৫ দশকে বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প তুলে ধরে এবং ৫০ বছরের অংশীদারত্বের প্রতিফলন করার জন্য একটি সেমিনারে যোগ দেন।

বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে মোট ২২৫ কোটি ডলারের ৫টি অর্থায়ন চুক্তিও স্বাক্ষর করে। আঞ্চলিক সংযোগের উন্নতি, স্থলভূমিতে বন্যা মোকাবিলায় দুর্যোগ প্রস্তুতি জোরদার, সবুজ ও জলবায়ু-সহিষ্ণু উন্নয়নের দিকে স্থানান্তর, পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা ও সবুজ বিনিয়োগ জোরদার এবং ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলোকে কম দুষণকারী ও অধিক জলবায়ু-সহিষ্ণু হওয়ার জন্য সহায়তা দিতে এই অর্থায়ন করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা এবং ডেভিড ম্যালপাস বাংলাদেশের গত ৫ দশকের উন্নয়নের ওপর একটি মাল্টিমিডিয়া আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারত্ব বিষয়ে এক সেমিনারে যোগ দেন।

১৯৭২ সালের আগস্টে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সদস্য হয় এবং একই বছরের নভেম্বরে বিশ্বব্যাংক প্রথম প্রকল্প অনুমোদন করে, যার মাধ্যমে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পরিবহন ও যোগাযোগ, কৃষি এবং শিল্প খাতের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নির্মাণ ও বিদ্যুৎখাতে সহায়তার জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলারের জরুরি পুনরুদ্ধার ঋণ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংক ৪টি প্রকল্প পুনরায় চালু করে, যা স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে অনুমোদিত হয়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত দরিদ্র দেশের জন্য বিশ্বব্যাংকের তহবিল ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) বাংলাদেশকে অনুদান, সুদবিহীন ঋণ এবং নমনীয় ঋণ হিসেবে ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বর্তমানে ৫৬টি চলমান প্রকল্পে প্রায় ১৬.৩ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ আইডিএ কর্মসূচি চলমান রয়েছে।

Comments