অক্সিজেন নল লাগিয়ে আর রিকশা চালাতে হবে না সেন্টুকে, কর্মসংস্থানের আশ্বাস জেলা প্রশাসনের

ঋণের টাকা শোধ করতে অক্সিজেন লাগিয়ে রিকশা চালাতে হয়েছে সেন্টুকে। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি রিকশাচালক মাইনুজ্জামান সেন্টুর যথাযথ চিকিৎসা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন।

গত দুই মাস ধরে তীব্র শ্বাসকষ্টে ভোগা সেন্টুকে গত সপ্তাহে নাকে অক্সিজেন নল লাগিয়ে রিকশা চালাতে দেখা গেছে। এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে গত রোববার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

আজ বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে তাকে দেখতে যান রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। তিনি সেন্টুর যথাযথ চিকিৎসা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতের আশ্বাস দেন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আল ওয়াদুদ দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, সেন্টুর মেডিকেল টেস্ট ও ওষুধের জন্য কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে।

ওয়াদুদ বলেন, 'আমরা (জেলা প্রশাসন) তার খবরাখবর রাখছি। তার সঠিক চিকিৎসা, একটি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর এবং সুস্থ জীবনযাপনে বিকল্প কর্মসংস্থানের প্রয়োজন। তার জন্য যা যা করা দরকার আমরা সবকিছু বিবেচনা করছি।'

রামেক হাসপাতালে ভর্তি সেন্টুকে দেখতে যান রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা তাকে সাহায্য করার কথা ভাবছি। সেন্টুকে আর অক্সিজেন সাপোর্ট নিয়ে রিকশা চালাতে হবে না। আমরা তার জন্য একটি বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ খুঁজে বের করব।'

সেন্টুর মেয়ে আঁখি খাতুন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, পাঁচ বছর আগে ৮০ হাজার টাকা ঋণ করে রিকশা কিনেছিলেন সেন্টু। দুই বছর পর রিকশাটি চুরি হয়ে যায়। তখন তিনি আরেকটি রিকশা কিনতে আবার ঋণ করেন।

এর মধ্যে হার্নিয়া অপারেশনের জন্য তাকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিতে হয়।

আঁখি বলেন, 'বাবাকে প্রতি সপ্তাহে ১ হাজার ৩৫০ টাকা ঋণের কিস্তি দিতে হয়। তার প্রতিদিন ৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগে এবং ওষুধের জন্য প্রতিদিন ৬০০ টাকা খরচ হয়।'

'ঋণের বোঝা টানতে ও সংসার চালাতে তিনি ঘরে বসে না থেকে নাকে অক্সিজেন নল লাগিয়েই রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। রিকশা চালাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে গত রোববার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়,' বলেন আঁখি।

রামেক অধ্যাপক হাসান তারিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেন্টু দীর্ঘস্থায়ী পালমোনারি ডিজিজ, যক্ষ্মা ও হৃদরোগে ভুগছিলেন। সঠিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে তার অক্সিজেন কনসেনট্রেটর প্রয়োজন। শহরের রাস্তার দূষিত বাতাসে তার রিকশা চালানো ঠিক নয়।'

জেলা প্রশাসন জানায়, সেন্টু রিকশা বিক্রি করে দেবেন বলে জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসন থেকেও তাকে কিছু টাকা দেওয়া হবে। এগুলো দিয়ে তিনি ঘরে বসেই ছোটখাটো কোনো ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।

Comments