ক্ষতিপূরণ ও নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে মামলা: মেয়র তাপসের আইনজীবী

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের আইনজীবী মেজবাহুর রহমান বলেছেন, আইনি নোটিশের জবাবে দ্য ডেইলি স্টারের দেওয়া ব্যাখ্যা সম্পূর্ণরূপে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, ডেইলি স্টার নিঃশর্ত ক্ষমা চায়নি এবং মানহানির জন্য ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়নি।
দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত রম্য রচনার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবির পর ডেইলি স্টার নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ শনিবার কারওয়ান বাজারে নিজ চেম্বারে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মেজবাহুর রহমান।
তিনি বলেন, 'আপনারা জানেন, ডেইলি স্টার একটি লেখা প্রকাশ করে এবং সেই লেখায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও করপোরেশনের মেয়রকে ইমপ্লিকেট করে, হেয় করে একটি লেখা প্রকাশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠাই গত ৫ জুন।'
'কতগুলো প্রতিকার চেয়ে আমরা লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলাম। গত ৮ জুন ডেইলি স্টার লিগ্যাল নোটিশের জবাব তাদের নিউজ পেপারে প্রকাশ করে। জবাবে তারা তাদের যে লেখাটা সেটাকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করেছে। লিগ্যাল নোটিশে যে প্রতিকারটা আমরা চেয়েছিলাম—অনলাইনে যে লিংকটা রয়ে গেছে সেটা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিমুভ করতে, এটা ওনারা করেছেন। আমরা আরও চেয়েছিলাম লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে একটি রিপোর্ট পাবলিশ করতে, যেটা এখনো করা হয়নি। এ ছাড়া, আমরা আরও বলেছিলাম, লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে মানহানিকর এই লেখাটা প্রকাশ করার জন্য ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য। সেটাও এখনো করা হয়নি,' বলেন তিনি।
মেজবাহুর রহমান বলেন, 'ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও সিটি করপোরেশনের মেয়রকে হেয় করে সারা পৃথিবীর কাছে এই লেখাটা পৌঁছে দিয়েছে তারা। লিগ্যাল নোটিশটি আমরা পাঠিয়েছি ৫ জুন এবং ওনারা পেয়েছেন ৬ জুন। এখনো ৭ দিন অতিবাহিত হয়নি। ৭ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরে মেয়রের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে বা কোনো পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে তারা যদি নিঃশর্ত ক্ষমা চায় এবং মেয়র ক্ষতিপূরণ বাবদ যে অর্থ দাবি করেছেন, সেটা যদি তারা দিয়ে দেন, অর্থাৎ লিগ্যাল নোটিশের চাওয়াটা যদি তারা পূরণ করেন, তাহলে হয়তো পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার আর কোনো প্রয়োজন হবে না।'
ক্ষতিপূরণ না দিলে মামলা করা হবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, '৭ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা এবং নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দেওয়া না হলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে। সেটা অবশ্যই মামলা করার ব্যাপারে।'
তিনি আরও বলেন, 'ডেইলি স্টার তাদের জবাবে যে লেখাটা প্রকাশ করেছে, সেই লেখাটাকে বিভিন্নভাবে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করেছেন। সব শেষে ওনারা দুঃখ প্রকাশ করেছেন, কিন্তু নিঃশর্ত ক্ষমা চাননি। এটার সঙ্গে সঙ্গে ওনারা বলেছেন, "অ্যাজ এ জেসচার অব গুড উইল" ওনারা অনলাইনে যে লিংকটা ছিল, সেটা রিমুভ করে দিয়েছেন। লিগ্যাল নোটিশে আমাদের যেটা চাওয়া ছিল—নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া—সেটা তারা করেননি। ক্ষতিপূরণের যে সময়সীমা, সেটাও পার হয়নি। ওনারা ৬ তারিখে পেয়েছেন, ১৩ জুন ৭ দিন পার হবে। এই ৭ দিন পার হওয়ার পরে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে।'
উল্লেখ্য, গত ১৩ মে দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি রম্য রচনায় মানহানি হয়েছে দাবি করে ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন শেখ ফজলে নূর তাপস।
এ বিষয়ে মেজবাহুর রহমান প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ডেইলি স্টার তাদের প্রিন্ট ও অনলাইন সংস্করণে 'কাটিং ট্রিজ টু মেক ওয়ে ফর এয়ার' শিরোনামে একটি 'কলাম' প্রকাশ করেছে। কলামে ঢাকা সাউথ সিটি করপোরেশনের নাম বিকৃত করে 'ধোকা সাউথ টাউন করপোরেশন' করা হয়েছে। যিনি 'কলাম'টি লিখেছেন, তিনি তার নিজের বক্তব্য উদ্ধৃতি চিহ্ন দিয়ে মেয়রের বক্তব্য বলে চালিয়েছেন, বিকৃত করে উপস্থাপন করেছেন। পেনাল কোডের বিদ্যমান আইনে এমন বক্তব্য মানহানিকর।
আইনি নোটিশ এবং পরবর্তী ব্রিফিংয়ের প্রতিক্রিয়ায় দ্য ডেইলি স্টারের বক্তব্য হচ্ছে, 'এটি কোনো 'প্রতিবেদন' বা 'কলাম' নয়, বরং একটি রম্য রচনা, যা বেশিরভাগ মূলধারার সাংবাদিকতায় প্যারোডি আকারে প্রকাশিত হয়। কৌতুক ও নির্মোহ হাস্যরস রম্য রচনার ভিত্তি। সারা বিশ্বেই গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষমতাবান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে এমন রম্য রচনা লেখা হয়। রাজনৈতিক নেতা, নোবেলজয়ী, বিখ্যাত লেখক এবং প্রখ্যাত অ্যাক্টিভিস্টরা এমন রম্য রচনার বিষয় হন। এটি প্রমিত সাহিত্য ও সাংবাদিকতার অনুশীলন।'
'তবে এটি জেনে আমরা খুবই বিস্মিত যে, আমাদের সম্পূর্ণভাবে ভুল বোঝা হয়েছে। আমাদের নিবন্ধটি কোনোভাবেই কাউকে অপমান, হেয় বা আঘাত করার উদ্দেশ্যে ছিল না। এটি কেবল একটি রম্য রচনা ছিল যা আমাদের সাপ্তাহিক স্যাটায়ারডে-তে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রসঙ্গটি নিয়ে জনগণের আগ্রহ থাকায় এবং এ নিয়ে অনেক প্রতিবেদন, নিবন্ধ এবং সম্পাদকীয় প্রকাশ হওয়ায় আমরা বিষয়টি বেছে নেই।'
'সাংবাদিকতায় এটি দীর্ঘদিন ধরে চর্চিত এবং সারা বিশ্বে বহুল প্রচলিত যে, গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা রম্য রচনার বিষয় হন। এই লেখাটি জনসাধারণের উদ্বেগের একটি বিষয়ে আরও মনোযোগ আকর্ষণ করতে এবং কর্তৃপক্ষকে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা ও পুনরায় মূল্যায়ন করতে সহায়তার জন্য লেখা হয়েছিল। আমরা আবারও বলছি, কোনোভাবেই কাউকে আঘাত করার জন্য এটি লেখা হয়নি। এটি কোনোভাবেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল না।'
'তবুও, আমাদের রম্য রচনাটি নোটিশ প্রদানকারীর মনে কষ্ট দিয়েছে জেনে আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি।'
'সদিচ্ছার নিদর্শন স্বরূপ, আইনি নোটিশ পাওয়ার পর আমরা অনলাইন থেকে রম্য রচনাটি সরিয়ে নিয়েছি।'
Comments