কুয়াকাটা

শ্রেণিকক্ষকে গেস্ট হাউস বানিয়ে ভাড়া দেন শিক্ষকরা

শ্রেণিকক্ষকে গেস্ট হাউস বানিয়ে ভাড়া দেন শিক্ষকরা
শ্রেণিকক্ষকে গেস্ট হাউস বানিয়ে ভাড়া দেন শিক্ষকরা। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি শ্রেণিকক্ষে গেস্টরুম বানিয়ে ভাড়া দেওয়া হয় পর্যটকদের কাছে। নাম দেওয়া হয়েছে, 'কুয়াকাটা বি বি গেস্ট হাউস'। দীর্ঘদিন ধরে এ কাজটি করে আসছিলেন পটুয়াখালীর কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

কুয়াকাটা পৌর এলাকার একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় এটি। প্রায় ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে এখানে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর অভিভাবক জেলে ও দিন মজুর শ্রেণির।

স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়ের একটি ভবনের ৪টি কক্ষে খাটসহ আনুষঙ্গিক আসবাবপত্র দিয়ে সাজিয়ে গেস্ট হাউস বানানো হয়েছে। ভাড়া দেওয়া হচ্ছে পর্যটকদের কাছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর কুয়াকাটায় পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাড়াও হচ্ছে নিয়মিত। প্রতিটি কক্ষ ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়। 

তবে গেস্ট হাউজটির ভাড়ার টাকা বিদ্যালয়ের কোনো খাতে জমা দেওয়া হয় না এবং টাকাগুলো কোথায় ব্যয় হচ্ছে তারও কোনো হিসাব নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

স্থানীয়দের দাবি, যেসব পর্যটক সেখানে রুম ভাড়া নেন, তাদের অনেকেই কক্ষের বাইরে বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে ধুমপান করেন।

বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী কুয়াকাটা পৌর ছাত্রলীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ কাওছার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ঈদের ছুটির পর রোববার বিদ্যালয়টি খুলেছে। বিকেলে বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত খেলাধুলা দেখতে গিয়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সামনে কয়েকজন পর্যটককে ধূমপান করতে দেখেন। বিষয়টি জানতে চাইলে পর্যটকরা জানান, তারা বিদ্যালয়ের কক্ষে স্থাপিত গেস্ট হাউস ভাড়া নিয়ে থাকছেন।

তিনি বলেন, 'বিদ্যালয়ের কক্ষ পর্যটকদের কাছে ভাড়া দিয়ে আর্থিক লাভবান হওয়ার বিষয়টি কোনভাবেই কাম্য নয়।' 

এ নিয়ে কুয়াকাটা পৌর কৃষকলীগের নেতা তুহিন দেওয়ান গত ৯ জুলাই রাতে তার ফেসবুক পেজে ওই গেস্ট হাউজের বেশ কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন পোস্ট নিয়ে ফেইসবুকে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অভিভাবক দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, স্কুলটি এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ভর্তি বাবদ ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফিও বেশি নেওয়া হয়। বিদ্যুৎ বিল, ইন্টারনেট বিল, মসজিদের চাঁদা, কোচিং ফি, বেতনসহ বিভিন্ন খাতেও অনেক অর্থ নেওয়া হয়।' 

সোমবার সকালে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সরেজমিনে বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে বিদ্যালয়ের কক্ষে গেস্ট হাউস ভাড়া দেওয়ার বিষয়টির সত্যতা পান। তাৎক্ষণিক তিনি গেস্ট হাউসের সাইনবোর্ড খুলে ফেলেন এবং রুমে থাকা খাট, ফার্নিচার অপসারণ করে ওই গেস্ট হাউসটি বন্ধ করে দেন।

বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 

এ বিষয়ে খলিলুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূলত বিভিন্ন সময় শিক্ষা বিভাগ থেকে অনেক কর্মকর্তা কুয়াকাটা সফরে আসেন, তাদের জন্য অনেক সময় হোটেলে রুম পাওয়া যায় না। তাই গেস্ট হাউস হিসেবে কয়েকটি রুম করা হয়েছে। এগুলো কখনো সাধারণ মানুষের কাছে ভাড়া দেওয়া হয় না।' 

বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে গেস্ট হাউস বানানোর আইনগত ভিত্তি আছে কি না জানতে চাইলে সহকারী প্রধান শিক্ষক কোনো উত্তর দেননি। এ ছাড়া অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারেক মোল্লা এ বিষয়ে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্কুলের ক্লাস রুমে গেস্ট হাউস বানিয়ে ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় খলিলুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু জানি না।'

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিষয়টি জানতে পেরে সোমবার বিদ্যালয়ে গিয়ে গেস্ট হাউস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Hasnat calls for mass rally after Juma prayers demanding AL ban

The announcement came during an ongoing protest programme that began last night in front of Jamuna.

4h ago