‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে মানুষকে সঞ্চয় ভাঙতে হচ্ছে ঋণ করতে হচ্ছে’

ক্যাব
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য এখন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। অনেকে সঞ্চয় ভেঙে, ধার-কর্জ করে অতি প্রয়োজনীয় পণ্য কিনছে।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে 'দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও করণীয়' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান এ কথা বলেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, 'আপাত দৃষ্টিতে বাজারে সরবরাহে ঘাটতি নেই। তা সত্ত্বেও দেশে উৎপাদিত এবং বিদেশ থেকে আমদানিকৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের মূল্য হুহু করে বাড়ছে। অধিকাংশ পণ্যের মূল্য এখন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। অনেকে সঞ্চয় ভেঙে আর ধার-কর্জ করে অতি প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করছে। অনেক চাহিদাই পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। জীবনমানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।'

তিনি বলেন, 'আগের বছরের বাজেটে মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে নির্ধারণ করা হয় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের কয়েকদিনের মধ্যে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেখা যায়, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ০২ শতাংশ, যা গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ।'

'টিসিবির বাজার দর পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত ১ বছরে অনেক পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি। অনেকে মনে করেন সাধারণ মানুষের জীবনে মুদ্রাস্ফীতির আঁচ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না,' যোগ করেন তিনি।

পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ক্যাব সভাপতি বলেন, 'সরকারের ধারণা, করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ সংকট, বর্ধিত চাহিদা, জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে পণ্যমূল্য বেড়েছে। এছাড়া ১ বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তবে অর্থনীতিবিদদের অনেকে মনে করেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক, বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ গ্রহণের ফলে মুদ্রা সরবরাহ বেড়েছে, যা মুদ্রাস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। আর ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যাহত হচ্ছে, সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হচ্ছে এবং মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে।' 

গোলাম রহমান বলেন, 'চাহিদা-সরবরাহের ফারাক, আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য অথবা মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি, কোনো ব্যাখ্যাই সাধারণ মানুষের জন্য প্রাসঙ্গিক নয়। তারা মূল্যবৃদ্ধিতে কষ্টে আছে। তাদের জীবনমানের অবক্ষয় হচ্ছে। তারা মনে করে সরকারের ব্যর্থতার কারণে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে।' 

তিনি বলেন, 'জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার তদারকি এবং অভিযান পরিচালনা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, উৎপাদক, পরিশোধনকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা ও দেন-দরবারের মাধ্যমে কিছু পণ্যের মূল্য নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে সফলতা লাভ করেছে।'

তবে তা সার্বিক মূল্যস্ফীতির লাগাম টানায় কোনো অবদান রাখছে না বলে মনে করেন ক্যাব সভাপতি। 

তার মতে, সরবরাহ সংকট অথবা চাহিদা বৃদ্ধির কারণে মূল্য বাড়ছে এমন সরল ব্যাখ্যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে সঠিক নয়।

গোলাম রহমান বলেন, 'অর্থনীতির সূত্র অনুযায়ী অর্থ সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়ে। বারবার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিও মুদ্রাস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স থেকে বৈদেশিক মুদ্রার আয় আমদানি ব্যয় থেকে পরিমাণে অনেক কম হওয়ায় গত ১ বছরের কিছু বেশি সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য ২৫ শতাংশের অধিক হ্রাস পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মূল্যবৃদ্ধির কারণে টাকায় আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বহুলাংশে বাড়ছে। পাশাপাশি টাকার অংকে কর-ভ্যাটও বাড়ছে। ফলে পণ্য মূল্য বাড়ছে। এ অবস্থায় বিশ্ববাজারে পণ্যের দর পতনের সুফল থেকেও বাংলাদেশের ভোক্তারা বঞ্চিত হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'সারা বিশ্ব মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যে সব ব্যবস্থা নিয়েছে, বাংলাদেশ তা থেকে বিরত থেকেছে। পৃথিবীর সর্বত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বৃদ্ধি করাকে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সালে ব্যাংক আমানতের সর্বোচ্চ হার ৬ শতাংশ এবং ঋণের সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে এবং সময়ের সঙ্গে সংশোধন না করে তা অনুসরণ করে এসেছে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অর্থ মন্ত্রণালয় বিগত অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১ লাখ ১ হাজার কোটির বেশি টাকা ঋণ নিয়েছে। টাকশালে টাকা ছাপিয়ে এই ঋণ দেওয়া হয়েছে, অর্থনীতিবিদদের ধারণা এতে অর্থনীতিতে মুদ্রা সরবরাহ ৫ গুণ অর্থাৎ ৫ লাখ কোটি টাকা বেড়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
Pharmaceutical raw material import dependency Bangladesh

Heavy import reliance leaves pharma industry vulnerable

Despite success, Bangladesh's pharma industry hinges on imported raw materials

13h ago