হজ এজেন্সির প্রতারণা:  হোটেল ভাড়া বাঁচানোর জন্যে হাজিদের রাত কাটল বাসে

হজ এজেন্সি নূর-ই-মদিনা ট্রাভেলসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলমগীর হাসান। ছবি: সংগৃহীত

হাজিদের নিয়ে মক্কা থেকে মদিনায় যাত্রার সময় নির্ধারিত ছিল সৌদি সময় বিকেল ৩টা। তারপর বলা হয় বাস ছাড়বে বিকেল ৫টায়। অবশেষে বাস ছাড়ে রাত ৮টা ২৪ মিনিটে। মক্কা-মদিনা সড়ক পথের দুরত্ব ৬ ঘণ্টার। সে হিসেবে মদিনায় পৌঁছানোর কথা রাত ৩টার দিকে। প্রথম দফায় হাজিদের সঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারের কথা হয় সৌদি সময় ভোর ৬টার দিকে। তখনো তারা বাসে, রাস্তায়। বলা হয়, মদিনায় পৌঁছাতে আরও ২-৩ ঘণ্টা লাগবে।

নূর-ই-মদিনা ট্রাভেলসের তত্ত্বাবধানে সৌদি আরবে যাওয়া ১৯০ জন হাজি এভাবেই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

বাসে থাকা হাজিরা টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, নির্ধারিত সময়ের সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর বাস ছাড়া হলেও যাত্রাপথে আরও অন্তত ৩ জায়গায় কারণে-অকারণে বাস থামিয়ে রাখা হয়। খুব ধীর গতিতে বাস চালানো হয়।

হাজিদের ধারণা, রাতের সময়টা পথে কাটিয়ে ১ দিনের হোটেল ভাড়া বাঁচানোর জন্যই এই কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন নূর-ই-মদিনা ট্রাভেলসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলমগীর হাসান, যিনি নিজেও ওই বাসে আছেন। এতে বাসে থাকা বিভিন্ন বয়সী হাজিরা অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

১ দিনের হোটেল ভাড়া বাঁচাতেই ধীরে চলার এই কৌশল নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে আলমগীর হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মদিনায় হোটেল বুকিং দেওয়া ছিল। কিন্তু একটি সমস্যা হয়েছে।'

পথে বিলম্বের কারণ সম্পর্কে তার ভাষ্য, 'রাতের বেলায় গাড়ি আস্তে চলে। নামাজসহ বিভিন্ন কারণে পথে থামতে হয়েছে। এতে দেরি হলে আমার কি করার আছে?'

এই হাজিরা আগামী ২০ তারিখ পর্যন্ত আলমগীর হাসানের তত্ত্বাবধানে থাকবেন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে যাত্রার শুরুর পর থেকে প্রতারণা, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে তারা যে লাগাতার ভোগান্তির শিকার হয়েছেন, তা অব্যাহত থাকবে কি না- জানতে চাইলে আলমগীর বলেন, 'আমি কথা দিচ্ছি আর কোনো সমস্যা হবে না।'

এখন পর্যন্ত হাজিদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা কতটা মানবিক হলো- জানতে চাইলে আলমগীর আরও বলেন, 'আমি দুঃখিত। আমরা আর কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যাব।'

তবে বাসে থাকা এক হাজির সঙ্গে ডেইলি স্টারের সর্বশেষ কথোপকথনে জানা যায়, তারা সৌদি সময় সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে মদিনার হোটেলে পৌঁছেছেন। সব মিলিয়ে মক্কা থেকে রওনা দেওয়ার পর মদিনার হোটেল পর্যন্ত পৌঁছাতে তাদের ১৩ ঘণ্টা ১৬ মিনিট সময় লেগেছে।

এর আগে হজ প্যাকেজে ঘোষিত প্রতিশ্রুতি পূরণ না করে প্রতারণা, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিভিন্ন অভিযোগ আসে এই এজেন্সির বিরুদ্ধে।

এজেন্সির তত্ত্বাবধানে যাওয়া হাজিরা বিজ্ঞাপন অনুসারে তাদের মক্কার হারাম শরিফ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বের হোটেলে না রাখা, খাবার বণ্টনে অনিয়ম ও অপর্যাপ্ত খাবার পরিবেশন, হোটেলে পানি-বিদ্যুতের সমস্যা ও যে কক্ষে ১ জনের থাকার কথা সেখানে কমপক্ষে ৪ জনকে রাখার মতো বিভিন্ন অভিযোগ করেছিলেন দ্য ডেইলি স্টারের কাছে।

এ নিয়ে গত ১০ জুলাই ডেইলি স্টারে 'হাজিদের সঙ্গে এজেন্সির প্রতারণা: হোটেলে পানি-বিদ্যুৎ থাকছে না, অপর্যাপ্ত খাবার, ১ জনের কক্ষে ৪ জন' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সেখানে হাজিরা জানান, হজ প্যাকেজের শর্ত অনুসারে তাদের মক্কার হারাম শরিফ থেকে ৫০০-৭০০ মিটার দূরত্বের একটি থ্রি স্টার মানের হোটেলে রাখার কথা ছিল। কিন্তু তাদের ২ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বের 'তারা আজইয়াদ' নামে নিম্নমানের ওই হোটেলে রাখা হয়, যেখানে শনিবার ৩ দফায় ৫ ঘণ্টা পানি ছিল না। এর আগের দিন শুক্রবারও ২ দফায় পানি ছিল না।

হোটেলের ১ জন থাকার কক্ষে ৪ জন হাজিকে রাখার অভিযোগ করে তারা বলেন, 'এক্ষেত্রে নারীদের অবস্থা আরও করুণ। হোটেল কক্ষের অতি সংকীর্ণ জায়গায় বিছানাতেই নামাজ পড়তে হচ্ছে তাদের।'

হাজিরা আরও বলেন, পানির অভাবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওয়াশরুম ব্যবহারের জন্য ২ কিলোমিটারের বেশি হেঁটে অন্য জায়গায় যেতে হচ্ছে তাদের।

এছাড়া শর্ত অনুসারে হজের ৫ দিন মক্কা-মিনা-আরাফা-মুজদালিফা রুটে উন্নতমানের সার্ভিস বাস দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। আরও জানান, হজের সময় তাদের সঙ্গে কোনো গাইডও দেওয়া হয়নি।

এই হাজিদের ভাষ্য, নূর-ই-মদিনা ট্রাভেলস তাদের তত্ত্বাবধানে থাকা হাজিদের নিয়ে একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলেছিল। অনেকে যখন বিভিন্ন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা নিয়ে ওই গ্রুপে অভিযোগ জানাতে শুরু করেন তখন সেখানে মন্তব্য লেখার অপশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া এজেন্সির পক্ষ থেকে তাদের বলা হয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় কিংবা সৌদি দূতাবাসে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হবে না।

Comments

The Daily Star  | English
government decision to abolish DSA

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

11h ago