ঢাকার প্রবেশপথে তল্লাশি, আটক

ঢাকার প্রবেশপথে তল্লাশি, আটক
তল্লাশী ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অন্তত ৬০ জনের বেশি মানুষকে আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতালের ভেতর নিয়ে যেতে দেখা যায়। ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/স্টার

রাজধানীতে ২ দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আজ শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকার প্রবেশমুখ আমিনবাজারে জেলা পুলিশের তল্লাশি কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে। 

এতে কিছুক্ষণ পরপর ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার এলাকার ঢাকামুখি লেনে দেড় থেকে ২ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট তৈরি হচ্ছে।

সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার এলাকায় পুলিশের চেকপোস্ট ঘুরে দেখা যায়, দূরদূরান্ত থেকে আসা ঢাকাগামী বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের তল্লাশি করছে পুলিশ।
 
এ সময় ওয়াকিটকি হাতে সাদা পোশাকধারী একদল ব্যক্তিকে পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তিকে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেশ কয়েকজনকে চেকপোস্টের কাছে আমিনবাজার ২০ শয্যার হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

ঢাকার প্রবেশপথে তল্লাশি, আটক

তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনার সময় পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কিছু সদস্যকে সক্রিয় ভূমিকায় থাকতে দেখা গেছে। সাদা পোশাকধারী ওয়াকিটকি হাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে অপেশাদার আচরণ করতেও দেখা গেছে। বাস আটকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ার দৃশ্য ভিডিও ধারনের পরপরই দ্য ডেইলি স্টারের সাভার প্রতিবেদক আকলাকুর রহমান আকাশকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আটকে রাখার হুমকি দেয় সাদা পোশাক পরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য।

অন্যদিকে চেকপোস্ট থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অন্তত ৬০ জনের বেশি মানুষকে আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতালের ভেতর নিয়ে যেতে দেখা যায়।

আটককৃতদের পরে একটি প্রিজন ভ্যানে তুলে সাভার থানার পথে নিয়ে যাওয়া হয়।

জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি শেষে আমিনবাজার ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ভেতরে আটকে রাখা বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি স্টার।

সেখানে আটক থাকা ফজলুল হক নামে এক ব্যক্তি বলেন, 'আমরা ২ জন সকালে ব্যবসার কাজে খেলনা মালামাল কিনতে চন্দ্রা থেকে একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেই। গাড়ি চেকপোস্টে আসলে পুলিশ থামিয়ে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশ পরে মোবাইল চেক করে আমার ফেসবুকে বিএনপির সমাবেশের একটি ছবি পাওয়ায় আমাদের দুজনকে এখানে আটকে রেখেছে, কোথাও যেতে দিচ্ছে না। মোবাইলও নিয়ে গেছে।

রংপুর থেকে ঢাকার পথে চেকপোস্টে আটক হওয়া সোহেল নামে এক ব্যক্তি বলেন, 'ব্র্যাকে একটি ট্রেইনিং থাকায় আমরা ২ বন্ধু বাসে করে রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হই। সকালে চেকপোস্টে আসলে পুলিশ কোথায় যাচ্ছি জানতে চায়। পরে আমার কাছে পরিচয়পত্র না থাকায় পুলিশ আমাকে আটক করে। আমার বন্ধুর কাছে ব্র্যাকের কার্ড থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।'

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি আমাদের নিয়মিত চেকপোস্ট কার্যক্রমের অংশ, পাশাপাশি যেহেতু রাজধানীতে দুটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি রয়েছে এবং মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা আমাদের দায়িত্ব, তাই আমরা অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কেউ যেন কোনো অরাজক পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ না পায়, সেজন্য তল্লাশি কার্যক্রমে জোর দিচ্ছি।'

আটক প্রসঙ্গে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, 'আটক বা গ্রেপ্তার ঠিক না, যাদের সন্দেহ হচ্ছে আমরা তাদের চেকব্যাক করছি। যাচাই-বাছাই, জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এর সব কিছুই করা হচ্ছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।'

তবে ঠিক কতজনকে সকাল থেকে আটক করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো পরিষ্কার ধারণা দেননি পুলিশের এই কর্মকর্তা।
 
অন্যদিকে চেকপোস্টে সাদা পোশাকধারী প্রসঙ্গে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, 'সাদা পোশাকে আমাদের কেউ নেই, ডিবির যারা রয়েছেন, তাদের পরনে ডিবির জ্যাকেট রয়েছে। যাদের কথা বলছেন তারা আমাদের পুলিশের কেউ না, বিষয়টি দেখছি আমি।'

সাদা পাশাকধারীরা সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধার সৃষ্টি করছে এবং পরিচয় জানার পরও এই প্রতিবেদককে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আটকে রাখার হুমকি দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি দেখছি। এরকমতো হওয়ার কথা নয়।
 
সাধারণ মানুষের ভোগান্তি
 
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঠিকানা এক্সপ্রেস লিমিটেড নামের একট বাস চেকপোস্টে আটকে যাত্রীদের নামিয়ে দিতে দেখা যায়। এ সময় বাসটি থেকে নারী ও বয়স্কসহ বেশ কয়েক জন যাত্রীকে গাবতলীর উদ্দেশে হেঁটে দেখা যায়।

কয়েকজন যাত্রী বলেন, 'পুলিশ বাস আটকে দিল। এখন হেঁটে যেতে হবে। এইটা কোনো নিয়ম হলো। কী বলব, আমাদের কপালে ভোগান্তি ছাড়া আর কিছুই নেই।'

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

4h ago