‘ডেঙ্গু-ডাবের’ ডাবল সেঞ্চুরি

‘দাম বেশি হওয়ার জন্য কেবল ডেঙ্গু রোগীর আত্মীয়-স্বজন ছাড়া অন্য কেউ তেমন ডাব কিনতেসে না। শখ কইরা ডাব খাওনের সুযোগ এখন কম।’
শিশু হাসপাতালের সামনে ডাব বিক্রেতার ব্যস্ত সময় কাটে প্রায় সারা দিনই। ছবি: স্টার

ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যে এ রোগের কার্যকরী 'পথ্য' হিসেবে পরিচিত ডাবের দাম আকাশ ছুঁয়েছে।

রাজধানীর হাসপাতালগুলোর সামনে একেকটি বড় আকারের ডাব সর্বোচ্চ ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি ও ছোট আকারের ডাব বিকোচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকায়।

বিক্রেতারা বলছেন, এমনিতে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ডাবের ফলন কম থাকে। এ ছাড়া, বৃষ্টির কারণে পিচ্ছিল গাছে উঠে ডাব পাড়ার ক্ষেত্রে প্রতিবদ্ধকতার জন্য বাজারে এর সরবরাহ আরও কমে গেছে। কিন্তু ডেঙ্গুর প্রকোপে চাহিদা তৈরি হয়েছে ব্যাপক। সবকিছু মিলিয়েই ডাবের দামের এমন ঊর্ধ্বগতি।

আজ সোমবার সকাল থেকে আগারগাঁও, শ্যামলী, সংসদ ভবন এলাকা, ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজারের অন্তত ১০ জন খুচরা ও পাইকারি ডাব বিক্রেতার সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের।

তাদের ভাষ্য, দেড় সপ্তাহ আগেও পাইকারি পর্যায়ে আকারভেদে ১০০ ডাবের দাম ছিল ৮ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকার মধ্যে। এখন সেই ডাব পাইকারিতেই বিক্রি হচ্ছে ১৪ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকায়।

আজ সকালে টিপ টিপ বৃষ্টির মধ্যে আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের সামনে কথা হয় ডাব বিক্রেতা দীপংকর বর্মনের সঙ্গে। তিনি তার ভ্যানে থাকা ছোট আকারের একেকটি ডাবের দাম চাইলেন ১২০ টাকা করে। মাঝারি আকারের ডাবের দাম চাইলেন ১৪০ টাকা আর সবচেয়ে বড় আকারের ডাবের দাম চাইলেন ২০০ টাকা।

এই বাড়তি দামের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বাজারে মাল (ডাব) কম। কিন্তু ডেঙ্গুর জন্য চাহিদা অনেক। তাই দাম এমন বেশি।'

প্রাকৃতিক পানীয় হিসেবে তো বটেই, রোগীর পথ্য হিসেবেও ডাবের বেশ কদর রয়েছে। সে জন্য হাসপাতালকেন্দ্রিক ডাবের একটা বড় বাজার আছে। ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে ডাবের নাম থাকে সর্বাগ্রে।

শ্যামলী শিশু হাসপাতালের সামনে ডাব বিক্রেতা হারুণ অর রশীদ যেমন বললেন, 'এখনকার ডাবরে ডেঙ্গু-ডাব কইতে পারেন। দাম বেশি হওয়ার জন্য কেবল ডেঙ্গু রোগীর আত্মীয়-স্বজন ছাড়া অন্য কেউ তেমন ডাব কিনতেসে না। শখ কইরা ডাব খাওনের সুযোগ এখন কম।'

হারুনের ভ্যানে বড় আকারের ডাবই ছিল বেশি। বিক্রি করছিলেন ২০০ টাকায়। তার ভাষ্য, এর প্রতিটি ডাবে অন্তত ২ গ্লাস করে পানি হবে।

হারুনের সঙ্গে কথোপকথনের সময়েই সেখানে ডাব কিনতে আসেন এক নারী। জানালেন তার মেয়ে শিশু হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি। ভ্যান থেকে অনেক বেছে মাঝারি আকারের ২টি ডাব তিনি কিনলেন ৩০০ টাকায়। খানিকটা উষ্মার স্বরেই বললেন, 'সবাই সুযোগ খোঁজে। এই আকারের দুটো ডাবের দাম কোনোভাবেই ১০০ টাকার বেশি হতে পারে না। এখন মেয়ের জন্য উপায় না পেয়ে কিনতে হচ্ছে।'

একইভাবে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনেও বিক্রেতার সঙ্গে ক্রেতাদের ডাবের দাম নিয়ে মুলামুলি করতে দেখা গেল।

হাসপাতাল এলাকার বাইরে ডাবের দাম কিছুটা কম। ছবি: স্টার

হাসপাতাল এলাকার বাইরে দাম খানিকটা কম

খেয়াল করে দেখা গেল, হাসপাতাল এলাকার বাইরের বাজার কিংবা মহল্লাগুলোতে ডাবের দাম আকারভেদে অন্তত ৩০-৪০ টাকা কম।

আগারগাঁও তালতলা বাজারের কাছে ডাব বিক্রেতা একরামুল ছোট আকারের প্রতি পিস ডাব বিক্রি করছিলেন ৮০ টাকায়। খেজুরবাগান এলাকায় মাঝারি আকারের ডাব ১০০ টাকাতেও পাওয়া গেল।

কারওয়ান বাজার এলাকার একাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী জানালেন, ঢাকায় ডাবের মূল জোগান আসে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর ও বাগেরহাট থেকে। এখন লক্ষ্মীপুর ও বাগেরহাটের ডাব রাজধানীতে আসছে বেশি। অন্য জেলা থেকে এখন ডাব খুব বেশি আসছে না। ডাবের দাম বেড়ে যাওয়ার এটিও একটি কারণ।

ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ বললেন, 'এইডা তো বানায়া দেওয়ার জিনিস না। অন্য জায়গা থেইক্যা আইলে না আমরা পামু। একে ফলন কম, তার ওপর বৃষ্টি। তাই দাম এমনিতেই বেশি। ডেঙ্গুর জন্য দাম আরও বাড়ছে।'

Comments