৭ দিন ধরে বন্ধ আমদানি-রপ্তানি, ৫০০ পণ্যবোঝাই ট্রাক রেখে ফিরে গেছেন চালকরা
শ্রমিক-সর্দার দ্বন্দ্বে স্থবির বুড়িমারী স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। পাঁচশর মতো পণ্যবোঝাই ট্রাক আটকা পড়ে আছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে। পণ্যবোঝাই এসব ট্রাক রেখে দেশে ফিরে গেছেন ভারতীয় ট্রাকচালকরা।
তাদের মধ্যে মাত্র ১০-১২ জন ভারতীয় ট্রাকচালক রয়েছেন বুড়িমারী স্থলবন্দরে।
শ্রমিক-সর্দার দ্বন্দ্বে শ্রমিকরা গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ রাখায় বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বুড়িমারী স্থলবন্দর সফরে আসেন। তার সঙ্গে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিমন্ত্রী বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকা ঘুরে দেখেন। এরপর তিনি রাতে বুড়িমারী স্থলবন্দর হলরুমে শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের কাজে যোগদানের নির্দেশ দেন।
এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে তদন্ত করে খুব দ্রুত শ্রমিকদের সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেন তিনি।
বুড়িমারী স্থলবন্দর শ্রমিকলীগের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী শ্রমিকদের কাজে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা বুড়িমারীতে কর্মরত সব শ্রমিকের সঙ্গে আলোচনা করে আজ বুধবার কাজে যোগদানের বিষয়ে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা হয়তো কাজে যোগদান করব, কিন্তু খুব দ্রুত আমাদের সমস্যা সমাধান না হলে আমরা আবারও কর্মবিরতিতে ফিরব।'
তবে শ্রমিকদের সর্দার সফর উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী শ্রমিকদের কাজে যোগদানের জন্য বলা হয়েছে। স্থলবন্দরে অবৈধভাবে শ্রমিকলীগ সংগঠন তৈরি করে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে তদন্ত করছে।'
বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে ভারতীয় ট্রাকচালক কৃষ্ণ দাস (৪৫) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে বুড়িমারীতে আটকা পড়েছেন। সেখানে এখনো ১০-১২ জন ভারতীয় ট্রাকচালক রয়েছেন। ৫০০ ট্রাকচালকের বাকিরা সবাই ভারতে ফিরে গেছেন। শ্রমিকরা লোড-আনলোডের কাজ শুরু করলে ট্রাকচালকরা চলে আসবেন।'
তিনি আরও বলেন, 'শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে আমরা পণ্যবোঝাই ট্রাক নিয়ে চরম ভোগান্তিতে আছি।'
নিতেশ মণ্ডল (৫০) নামে আরেকজন ভারতীয় ট্রাকচালক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি পাথরবোঝাই ট্রাক এনে বুড়িতেমারীতে আটকে পড়েছি। বাকি ট্রাকচালকরা দেশে ফিরে গেছেন। বুধবার থেকে শ্রমিকরা লোড-আনলোড কাজ শুরু করলে হয়তো দুএক দিনের মধ্যে তিনি দেশে ফিরতে পারবেন।'
বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, শ্রমিক ও সর্দারদের মাঝে মজুরি পরিশোধ নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। শ্রমিকদের দাবি, তারা সরাসরি লেবার হ্যান্ডলিং ঠিকাদারের মাধ্যমে মজুরি নেবেন। কিন্তু শ্রমিক সর্দারদের দাবি লেবার হ্যান্ডলিং ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এ কারণে শ্রমিকদের এ কারণে সর্দারের মাধ্যমে মজুরি নিতে হবে।
বুড়িমারী স্থলবন্দরে ২ হাজার ৩০০ জন তালিকাভুক্ত লোড-আনলোড শ্রমিক রয়েছেন। অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছে প্রায় ৫-৬ হাজার। শ্রমিকদের সর্দার রয়েছেন ২২ জন।
বুড়িমারী স্থলবন্দরে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপেক্ষর সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) গিয়াস উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যার সমাধান করেছেন। আজ বুধবার থেকে শ্রমিকদের কাজে যোগদান করবেন।
তিনি আরও বলেন, পণ্যবোঝাই ট্রাক রেখে চলে যাওয়া ভারতীয় ট্রাকচালদের খবর পাঠানো হয়েছে। বন্দরে প্রায় ৫০০ পণ্যবোঝাই ট্রাক রয়েছে। অধিকাংশ ট্রাকে রয়েছে পাথর আর কিছু ট্রাকে রয়েছে ভুট্টা।
আজ শ্রমিকরা কাজে যোগদান না করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
Comments