শ্রমিক-সর্দার দ্বন্দ্বে স্থবির বুড়িমারী স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম

বুড়িমারী স্থলবন্দর
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে শ্রমিক-সর্দার দ্বন্দ্বের কারণে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ আছে। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কার মাধ্যমে মজুরি নেওয়া হবে—তা নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে মালামাল ওঠানো-নামানোর কাজ বন্ধ রেখেছেন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের শ্রমিকরা। ফলে গত ছয় দিন ধরে এই স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ আছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে বন্দরে একই পরিস্থিতি দেখা গেছে।

এ অবস্থায় ভারত ও ভুটান থেকে আমদানি করা পণ্য নিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক ট্রাক অপেক্ষা করছে বুড়িমারী স্থলবন্দরে। এতে বিপাকে পড়েছেন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন সরকার অন্তত ৫০ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বুড়িমারী স্থলবন্দরে তিন হাজার শ্রমিক মালামাল ওঠানো-নামানোর কাজ করেন। সাধারণ শ্রমিকদের দাবি, তারা সরাসরি লেবার হ্যান্ডেলিং ঠিকাদারের মাধ্যমে মজুরি গ্রহণ করবেন। কিন্তু শ্রমিকদের সর্দারদের দাবি, আগের নিয়মে তাদের কাছ থেকেই মজুরি নিতে হবে।

বুড়িমারী স্থলবন্দর
বুড়িমারী স্থলবন্দরে ভারত ও ভুটান থেকে আমদানি করা পণ্য নিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক ট্রাক অপেক্ষা করছে। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

এমন পরিস্থিতিতে স্থলবন্দরে কর্মরত শ্রমিকরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। যার জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে ঘটেছে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও।

শ্রমিকদের একটি পক্ষের ভাষ্য, সর্দাররা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেন না। গত কয়েকবছর ধরে শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের কোনো হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। শ্রমিকদের মজুরি আত্মসাৎ করে সর্দাররা বিত্তশালী হয়েছেন। কিন্তু শ্রমিকদের ভাগ্যের কোন উন্নতি হয়নি। এ অবস্থায় লেবার হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার সরাসরি শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করলে শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি পাবেন।

অন্যদিকে সর্দারদের বক্তব্য, শ্রমিকদের কখনোই ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করা হয় না। কয়েকমাস আগে হঠাৎ বুড়িমারী স্থলবন্দরে শ্রমিক লীগ নাম দিয়ে একটি সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়। সাজ্জাদ হোসেন নামের এক যুবক বুড়িমারী স্থলবন্দর শ্রমিক লীগের সভাপতি সেজে শ্রমিকদের বিভক্ত করেন। তিনি সাধারণ শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে স্থলবন্দরে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি করছেন।

অবশ্য সাজ্জাদ হোসেনের দাবি, তিনি নিজেও একজন শ্রমিক। তার লড়াই সাধারণ শ্রমিকদের জন্য।

সাজ্জাদ বলেন, 'আমরা শ্রম দেই আর লাভবান হন শ্রমিক সর্দাররা। আমরা সরাসরি লেবার হ্যান্ডেলিং ঠিকাদারের মাধ্যমে মজুরি পেলে বঞ্চিত হবো না। আমরা কোনো সর্দারের মাধ্যমে মজুরি পেতে চাই না।'

তাদের এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা কাজে ফিরবেন না বলেও মন্তব্য করেন সাজ্জাদ।

এদিকে বুড়িমারী স্থলবন্দর সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সফর উদ্দিনের অভিযোগ, সাজ্জাদ হোসেন কিছু শ্রমিককে নিয়ে সবার মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছেন। নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে না পেরে তিনি শ্রমিকদের নানাভাবে উসকানি দিচ্ছেন।

বুড়িমারী স্থলবন্দর
বুড়িমারী স্থলবন্দরে শ্রমিক-সর্দার দ্বন্দ্বের কারণে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় বিপাকে ব্যবসায়ীরা। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

বিষয়টি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান সফর উদ্দিন।

বুড়িমারী স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সায়েদুজ্জামান সায়েদ জানান, শ্রমিকদের দ্বন্দ্বের কারণে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ আছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

সায়েদুজ্জামান বলেন, 'আমি দুই পক্ষের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কোন পক্ষই তাদের দাবি থেকে সরছে না। জেলা প্রশাসনের গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটিও কথা বলেছে শ্রমিকদের সঙ্গে। তাতেও কাজ হয়নি।'

বুড়িমারীতে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) গিয়াস উদ্দিন বলছেন, 'এই স্থলবন্দরে দীর্ঘদিন ধরেই লেবার হ্যান্ডেলিং ঠিকাদাররা সর্দারদের মাধ্যমে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করে আসছেন। আমরা শ্রমিকদের মাঝে সৃষ্ট অসন্তোষ নিরসনে কাজ করছি। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সরকার প্রতিদিন ৫০ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।'

অচলাবস্থা নিরসনে শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা জানিয়ে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলাম বলেন, 'আশা করছি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে। আমাদের অনুরোধে শ্রমিকরা যদি কাজে যোগ না দেন, তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
corruption-extortion-illustration-biplob-chakroborty

‘Now it’s our turn’ mindset fuelling abuse of power: TIB

While reforms are publicly touted, an ongoing culture of dominance, illegal occupation, and extortion resulting from "power abuse" by certain political parties is undermining public aspirations to build a democratic "New Bangladesh", it says

38m ago