বিক্ষোভ করায় টিআরজেড কর্তৃপক্ষের মামলা, গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন শ্রমিকরা

শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে টিআরজেড কর্তৃপক্ষ। ছবি: স্টার

বকেয়া পাওনার দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে গাজীপুরের গাছা এলাকার টিআরজেড পোশাক কারখানা। কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কারখানার শ্রমিকরা।

আজ শুক্রবার টিআরজেড কারখানার শ্রমিকরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, পুলিশের ভয়ে তারা বাসার বাইরে রাত কাটাচ্ছেন। অর্ধশতাধিক শ্রমিকের নামে মামলা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।

গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইব্রাহিম হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, বিক্ষোভ করার কারণে টিআরজেড পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নামে মামলা দায়ের করেছে।

শ্রমিকদের ভাষ্য, বেতন, বোনাস, ইফতার, টিফিন ও রাতের খাবারের বকেয়া পাওনার দাবিতে তারা বিক্ষোভ করেন। গত রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কারখানার বাইরেও তারা বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভের পর সেদিন সন্ধ্যার দিকে কিছু শ্রমিককে পে-স্লিপ অনুযায়ী শুধু আগস্টের বেতন দেওয়া হয়েছে।

শ্রমিকরা আরও জানান, সোমবার তারা জানতে পারেন যে, কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের নামে মামলা করেছে। গত রোববার সুপারভাইজারদের তিন মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করায় সুপারভাইজাররাও কারখানার ভেতর বিক্ষোভ করেন।

শ্রমিকদের বরাত দিয়ে আজ সকালে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের গাজীপুর জেলা সভাপতি জিয়াউল কবীর খোকন ডেইলি স্টারকে জানান, টিআরজেড প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা নিজেরাই চেয়ার উল্টিয়ে ছবি তুলেছে। পরে এসব ছবি দিয়ে থানায় শ্রমিকদের নামে মামলা করেছে।

টিআরজেড কারখানার শ্রমিক মোমতাজ, সুজন ও ওসমানের ভাষ্য, গত জুলাইয়ের বেতন তিন বারে (৮, ২৭ ও ২২ তারিখ) পরিশোধ করা হয়েছে। আন্দোলনের পর আগস্টের ওভারটাইম ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধ না করে শুধু এক মাসের বেতন পরিশোধ করেছে কর্তৃপক্ষ।

'বেতন পেয়ে লাভ কী হলো? এখন তো পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি', বলেন এক শ্রমিক।

শ্রমিক লুৎফা ও ফিরোজা জানান, গত ২৮ আগস্ট টিআরজেড কর্তৃপক্ষ তাদের ডেকে নিয়ে বলেছে যে, তাদের চাকরি নেই, ছাঁটাই করা হয়েছে। একইদিন আরও ৮০০ শ্রমিককে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়।

টিআরজেড কারখানার সুপারভাইজার বিপ্লব মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার জুলাই ও আগস্টের বেতন বকেয়া আছে।'

জানা গেছে, গত সোমবার থেকে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। টিআরজেড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এইচআর অ্যান্ড কমপ্লায়েন্সের (উপ-মহাব্যবস্থাপক) সই করা এক নোটিশ থেকে কারখানা বন্ধের তথ্য জানা যায়।

নোটিশে বলা হয়েছে, 'শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে বেআইনি ও অবৈধভাবে ধর্মঘট করে ফ্যাক্টরির ভেতর মারাত্মক ভাঙচুর ও বিপুল পরিমাণ মালামালের ক্ষয়ক্ষতি করেছে। এমন ক্ষতিগ্রস্ত ফ্যাক্টরির কার্যক্রম চালু রাখা সম্ভব নয়।'

সেদিন সকাল ১০টায় কারখানা শ্রমিক জসিমসহ কয়েকজন নারী শ্রমিক ডেইলি স্টারকে জানান, তারা কারখানার পাশে গাছা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান করছেন। কারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় তারা সড়কে অবস্থান নেন।

সেদিন সকাল ৮টা থেকে টিআরজেড পোশাক কারখানার সামনে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার শ্রমিক বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন।

এর আগে, গত শনিবার শ্রমিকরা জানান যে, বেতন দেবে বলে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের সবাইকে কারখানার সামনে বসিয়ে রাখা হয়। সন্ধ্যায় বেতন পরিশোধ না করেই কারখানার মেইন গেটে তালা দিয়ে চলে যান কর্মকর্তারা।

টিআরজেড কারখানার শ্রমিক সবুজ মিয়া ও রুমা জানান, জুলাইয়ের ১৫ দিনের বেতন বকেয়া রয়েছে। আগস্ট মাসের বেতন এখনো দেওয়া হয়নি। সেপ্টেম্বরও শেষ হয়ে আসছে। গত ঈদের বকেয়া টাকাও এখনো বাকি আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিআরজেডের এক কর্মকর্তা (সুপারভাইজার) ডেইলি স্টারকে জানান, তারা তিন মাসের বকেয়া বেতন পাবেন।

শ্রমিক নেতা জিয়াউল কবীর খোকন ও আজিজুল ইসলাম জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ চলাকালে বিকেল ৫টায় শ্রমিক প্রতিনিধি হয়ে তারা মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। এতে ফলপ্রসূ কোনো আলোচনা না হওয়ায় ১৭ সেপ্টেম্বর আবার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন।

১৭ সেপ্টেম্বর গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক জহিরুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের জন্য বিক্ষোভ করছে। আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি নিজেও মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। মালিক পক্ষ বলেছে, বেতন পরিশোধ করবে। কিন্তু তারা পরিশোধ করবে কি না, তা আমি বলতে পারব না।'

এ বিষয়ে টিআরজেড পোশাক কারখানার ব্যবস্থাপক ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলার বাদী তানভীর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শ্রমিকরা তাদের মতো করে আন্দোলন করেছে। কর্তৃপক্ষও তাদের মতো করে মামলা করেছে। আমি কেবল কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালন করেছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Hasnat calls for mass rally after Juma prayers demanding AL ban

The announcement came during an ongoing protest programme that began last night in front of Jamuna.

4h ago