খেয়াং ভাষার বর্ণমালা উদ্ভাবন, লেখা যাবে কম্পিউটারেও

খেয়াং ভাষার বর্ণমালা ‘হোয়ো’ ব্যবহার করে কম্পিউটারেও লেখালেখি করা যাবে। ছবি: স্টার

বান্দরবানের খেয়াং জনগোষ্ঠীর নিজেদের ভাষার বর্ণমালা তৈরি করা হয়েছে। এই বর্ণমালার নাম দেওয়া হয়েছে 'হোয়ো'। এই বর্ণমালা দিয়ে কম্পিউটারেও লেখালেখি করা যাবে।

শনিবার এ উপলক্ষে বান্দরবানের সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের গুংগুরুমুখ খেয়াং কমিউনিটি সেন্টারে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। 

বর্ণমালা উদ্ভাবন অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নিজেদের ভাষায় লিখিত রূপ ব্যবহার করে মনের ভাব প্রকাশ ও তথ্য বিনিময় করতে পারা গর্বের বিষয়। এই কর্মযজ্ঞে যারা যুক্ত ছিলেন খেয়াং জনগোষ্ঠীর মানুষ তাদের বংশপরম্পরায় স্মরণ রাখবে। এ ঋণ কোনোদিন শোধ হওয়ার নয়।

তারা খেয়াং ভাষার প্রচলন ও চর্চা বাড়াতে নতুন উদ্ভাবিত বর্ণমালা ব্যবহার করে কবিতা, উপন্যাস ও গল্প লেখার আহ্বান জানান।

এতদিন খেয়াংদের ভাষার কোনো বর্ণমালা ছিল না। এ কারণে এই ভাষার কোনো লিখিত রূপও ছিল না। গত কয়েক বছর ধরে রোমান হরফে এই ভাষা লেখা হচ্ছিল। কিন্তু এতে খেয়াং ভাষার সবগুলো ধ্বনির ও উচ্চারণে মিল রেখে লেখা সম্ভব হচ্ছিল না। এ কারণে নতুন বর্ণমালা উদ্ভাবন করার প্রয়োজন দেখা দেয়। ফ্রেন্ডস অব এন্ডেঞ্জার্ড এথনিক ল্যাংগুয়েজেস (ফিল) নামের একটি সংগঠন এই ভাষাটিকে কম্পিউটারে ব্যবহার উপযোগী করতে কারিগরি সহায়তা করে। দুই মাসের চেষ্টায় তারা এই কাজে সফলতা পেয়েছেন।

'হোয়ো' বর্ণমালার আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খেয়াং জনগোষ্ঠীর নিজস্ব মাতৃভাষায় বর্ণমালা উদ্ভাবনী কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ম্রাসা খেয়াং। সভাপতিত্ব করেন খেয়াং জনগোষ্ঠীর সমাজকর্মী অংসাউ খেয়াং। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন (ফিল)-এর ভাষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক মৃদুল সাংমা, ভাষার প্রযুক্তিবিদ সমর এম সরেন, এথনোগ্রাফি ও কমিউনিকেশন এক্সপার্ট রিবেং দেওয়ান, প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি বুদ্ধজ্যোতি চাকমা, শিক্ষিকা হ্লা ক্রই প্রু খেয়াং এবং শিক্ষক চিংহ্লা উ খেয়াং প্রমুখ।

ফিল-এর সদস্যরা জানান, তারা গত দুই বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের তিনটি ভাষার বর্ণমালা কম্পিউটারে ব্যবহার করার উপযোগী করতে সক্ষম হয়েছেন। আরও ১৬টি ভাষার বর্ণমালা কম্পিউটারে ব্যবহার উপযোগী করার কাজ চলছে।

ফিল-এর রিবেং দেওয়ান বলেন, তারা দেশের বিপন্ন ভাষাগুলোর বর্ণমালা তৈরি করে কম্পিউটার ও স্মার্টফোনের কি-বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

খেয়াং ভাষার বর্ণমালার উদ্ভাবন দলের অন্যতম সদস্য ঞো জাই উ খেয়াং বলেন, 'হোয়ো' বর্ণমালায় স্বরবর্ণ ১১টি আর ব্যঞ্জনবর্ণ ২১টি। ধ্বনির সঙ্গে মিল রেখে এই বর্ণমালা শেখা খুবই সহজ। দু এক বছর আগেও আমাদের এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেয়াং ভাষা শেখানো হয়েছিল। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ বর্ণমালা না থাকায় তখন ওই উদ্যোগ থেমে যায়। 

তিনি আরও বলেন, তিন বছর আগে রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলায় বসবাস করা আমাদের খেয়াং জাতিগোষ্ঠীর কয়েকজন রোমান হরফে খেয়াং ভাষার লিখিত রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সে রোমান হরফের সঙ্গে খেয়াং ধ্বনির মিল নেই। এরপর আমাদের গ্রামে শিক্ষিত ও মাতৃভাষায় অভিজ্ঞদের নিয়ে উচ্চারণ ও ধ্বনি অনুযায়ী হরফ উদ্ভাবনের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। প্রায় পাঁচ বছরের চেষ্টায় তারা আমাদের খেয়াং ভাষার বর্ণমালা তৈরি করতে সক্ষম হন। 

খেয়াং ভাষার বর্ণমালার উদ্ভাবকেরা হলেন- ঞো জাই উ খেয়াং, চিং হ্লা উ খেয়াং, ক্য উ প্রু খেয়াং, মং হ্লা প্রু খেয়াং এবং চিং সা থুই খেয়াং।

Comments

The Daily Star  | English

Hasnat calls for mass rally after Juma prayers demanding AL ban

The announcement came during an ongoing protest programme that began last night in front of Jamuna.

4h ago