হরতাল-অবরোধে বিপর্যস্ত নিম্ন আয়ের মানুষ

গাবতলী বাস টার্মিনালে ফল বিক্রির আশায় বসে আছেন বাবুল মাতবর। ছবি: রাফিউল ইসলাম/ স্টার

রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে ফল বিক্রি করে কোনোভাবে সংসার চালান বাবুল মাতবর। ফল বিক্রি থেকে যা লাভ হয় তার কিছুটা দিয়ে নিজের প্রতিদিনের ব্যয় মিটিয়ে বাকিটা পাঠান গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচরে।

কয়েকদিন আগেও প্রতিদিন প্রায় ১৫-২৫ কেজি পর্যন্ত ফল বিক্রি করতে পারতেন বাবুল। কিন্তু গত রোববার বিএনপির ডাকা হরতালের দিন মাত্র আধা কেজি আপেল বিক্রি করতে পারেন তিনি।

এর মধ্যেই আজ মঙ্গলবার থেকে তিন দিনের অবরোধ শুরু করেছে বিএনপি। অবরোধের মধ্যে কোনোভাবে সকাল সকাল টার্মিনালে পৌঁছান তিনি।

কিন্তু গাবতলীতে নেই দূরপাল্লার যাত্রী। জনশূন্য টার্মিনালে সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত একটি ফলও বিক্রি করতে পারেননি বাবুল।

৫৫ বছর বয়সী বাবুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জানি না কীভাবে আমার পরিবার বাঁচবে। সামনের কয়েকদিন রাজনৈতিক ঝামেলা মনে হয় চলতেই থাকবে।'

দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বাবুলের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

এমনিতেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে তাদের যেমন নাভিশ্বাস উঠে গেছে। এরমধ্যেই এমন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রতিদিনই কমে যাচ্ছে বেচাকেনা, আয় নেই ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের।

তারা জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষ ইতোমধ্যে ফল, পোশাক, খেলনা জাতীয় জিনিসপত্র কেনা কমিয়ে দিয়েছে। তারওপর বিএনপি ও জামায়াতের চলমান অবরোধ ও হরতালে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।

বিজয়নগর এলাকায় ইউসুফ আলীর জুসের দোকান। ছবি: রাফিউল ইসলাম/স্টার

বায়তুল মোকাররমের গেটে ফুটপাতের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার জন্য লড়াই করে। আর এর মূল্য দেই আমরা। তারা সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না।'

'নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে আমরা এমনিতেই ভয়াবহ বিপদে পড়ে গেছি,' বলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'রোববার সমাবেশে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা আতঙ্কে আছি। হরতালের দিন কিছু বিক্রি করতে পারিনি।'

'প্রতিদিন দোকান খুললেই ৫০০ টাকার বেশি খরচ আছে। তাই দোকান খুলতে চাই না। এখানে এলাম যেন কেউ দোকানের ক্ষতি করতে না পারে বা পুড়িয়ে না দেয়,' বলেন ৬৫ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ী।

এই প্রতিবেদক আজ রাজধানীর পল্টন, ফার্মগেট, দৈনিক বাংলা মোড়, শাহবাগ, দারুসসালাম ও তেজগাঁওসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রায় সবাই একই কথা বলেছেন।

দৈনিক বাংলা মোড় এলাকার দোকানদার বকুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা সহিংস রাজনীতি চাই না। আমরা নিজেরা ও আমাদের পরিবারকে বাঁচাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখতে চাই।'

বিজয়নগর এলাকায় জুসের দোকান ছিল ইউসুফ আলীর। ঈদুল আজহার আগে সিটি করপোরেশন তার দোকানটি ভেঙে দেয়। পরে তিনি আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা ধার নিয়ে একটি ভ্যান কেনেন।

আজ সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত জুস বিক্রি করে মাত্র ৬০ টাকা আয় করতে পেরেছেন। ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'ধারের টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। কিন্তু পরিবারকে বাঁচাতে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।'

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমেও বেচাবিক্রি হয়নি ইউসুফের। জানান, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় তার গ্রামের বাড়ি। তার মা বাড়িতে অসুস্থ। ডাক্তার তাকে প্রতিদিন ডালিম খাওয়াতে বলেছেন।

ইউসুফ বলেন, 'জানি না কীভাবে মায়ের ওষুধ ও ফলের টাকা জোগাড় করব।'

গুলিস্তান এলাকায় পুরোনো কাপড় ও ব্যাগ বিক্রি করেন ইউনুস। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হরতাল-অবরোধ চলতে থাকলে আমাদের দুর্দশার সীমা থাকবে না।'

Comments

The Daily Star  | English

No active militant presence in Bangladesh: home adviser

The reports of suspected extremists' deportation from Malaysia shows no links to local terrorist networks, he says

1h ago