টিসিবির ট্রাকে প্যাকেট ৩০০, লাইনে ৭০০’র বেশি মানুষ, অধিকাংশ পরিবহন শ্রমিক

আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে রাজধানীর গাবতলীতে টিসিবির ট্রাকের সামনে কয়েকশ লোকের ভিড় দেখা যায়। লাইনে যারা দাঁড়িয়ে আছেন তাদের অধিকাংশই পরিবহন শ্রমিক ও তাদের পরিবারের লোকজন। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

সকাল ১০টার আগেই গাবতলী টার্মিনালের সামনে রাস্তার ওপরে এসে দাঁড়িয়েছিলেন সাথী বেগম। ছোট সন্তানকে কোলে নিয়ে স্বল্পমূল্যে টিসিবির পণ্য পাওয়ার আশায় আগেই এসে লাইনে দাঁড়ান তিনি।

কিন্তু সকাল ১০টায় টিসিবির ট্রাক আসার পরপরই কয়েকশ লোকের ধাক্কাধাক্কিতে লাইন থেকে ছিটকে পড়েন সাথী।  

'বাচ্চা কোলে নিয়ে এই ধাক্কাধাক্কিতে দাঁড়াতে পারি নাই। উনাদের অনেক অনুরোধ করছি কিন্তু কেউ শোনে না,' দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন তিনি।

গাবতলী বড়বাগ এলাকায় স্বামী ও ৩ সন্তান নিয়ে থাকেন সাথী বেগম। তার স্বামী একজন বাসচালক। টানা অবরোধের কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় অভাবে অনটনে দিন পার করছেন তারা।

সাথী বলেন, 'অবরোধে বাস চলে না। স্বামীর ইনকাম নাই। ঘরে বাজারও নাই। ট্রাকের জিনিস পেলে কয়টা দিন খেতে পারতাম। ২ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু কেউ কথা শোনে না। বলছে, লাইনের বাইরে কাউকে জিনিস দেওয়ার নিয়ম নাই।'

আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে রাজধানীর গাবতলীতে টিসিবির ট্রাকের সামনে কয়েকশ লোকের ভিড় দেখা যায়। লাইনে যারা দাঁড়িয়ে আছেন তাদের অধিকাংশই পরিবহন শ্রমিক ও তাদের পরিবারের লোকজন।

ঢাকা টু চুয়াডাঙ্গার জিডি পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আলমগীর হোসেন বলেন, 'অবরোধের মধ্যে প্রতিদিনই কাউন্টার খুলে বসছি। কিন্তু যাত্রী নাই। বাস চলে না। বাস বন্ধ থাকলে মজুরিও বন্ধ। সপ্তাহে ৩ দিন কিছুটা ইনকাম হলেও, ৪ দিন কোনো ইনকামই হচ্ছে না।'

'আমি বাসা ভাড়া দিতেও এখন হিমশিম খাচ্ছি। বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারছি না। সকাল ১০টা থেকে ২ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। এই প্রথম টিসিবির জিনিসের জন্য লাইনে দাঁড়ালাম,' বলেন তিনি।

একই কথা জানান ঢাকা-বরিশাল রুটের সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার রিপন। তিনি বলেন, 'হরতাল-অবরোধে অবস্থা খারাপ। স্ত্রী, সন্তান মিলে ৪ সদস্যের পরিবার। আমার প্রতি মাসে বাসাভাড়া দিতে হয় ৫ হাজার টাকা। এই মাসে বাসাভাড়া দিতে পারি নাই। বাকি করে চলছি। এখন কেউ বাকিও দিতে চায় না। ছেলেমেয়েদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না।'

'মান সম্মানের কথা না ভেবে তাও অভাবের তাড়নায় দেড় ঘণ্টা ধরে এই ধাক্কাধাক্কির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। তাও যে জিনিস পাবো সেটারও গ্যারান্টি নাই। যদি পাই, এগুলো দিয়ে কিছুদিন চালাতে পারব—এই আশায় দাঁড়িয়ে আছি।' বলেন তিনি।

টিসিবি ট্রাকে ৩০০ লোককে দেওয়ার মতো পণ্য থাকলেও লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন প্রায় ৭০০ লোক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিসিবি ট্রাকের বিক্রেতা বলেন, 'এখানে প্রচুর মানুষের লাইন। ৩০০ প্যাকেট ৩০০ জনকেই দিতে পারি। লোক আছে ৬০০-৭০০। ধাক্কাধাক্কি হচ্ছে, প্যাকেট নিয়ে কাড়াকাড়ি হচ্ছে। যারা প্যাকেট পাচ্ছে না তাদের কেউ কেউ মারমুখি হয়ে উঠছে। এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার আগে হয়েছি। আমাকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এখন পুলিশ আছে।'

'এই ভিড়ের ভেতরে লাইনের বাইরে থাকা কাউকে পণ্য দেওয়ার সুযোগ নেই,' বলেন তিনি।  

রাজধানীর স্বল্প আয়ের মানুষকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য দিতে ট্রাকে পণ্য বিক্রি করছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। টিসিবি ট্রাকে ২ লিটার সয়াবিন তেল ১০০ টাকায়, মসুর ডাল কেজি ৬০ টাকায়, পেঁয়াজ কেজি ৫০ টাকায় ও আলু প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি ট্রাক থেকে প্রতিদিন ৩০০ লোক পণ্য নিতে পারেন। তবে কেউ ২ কেজির বেশি পণ্য নিতে পারবেন না।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh 2025-26 budget

Budget to shrink amid fiscal strain

Bangladesh’s interim government is preparing to unveil a rare contractionary budget on June 2, driven by a sharp rise in interest payment that is crowding out fiscal space and forcing spending cuts.

12h ago