মালয়েশিয়ায় সামাজিক ব্যবসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করলেন প্রফেসর ইউনূস

আল বুখারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এর চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর ইউনূস। একটি সামাজিক ব্যবসা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা পর্যায় থেকে তিনি এর সঙ্গে জড়িত।
নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী এবং আলবুখারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনে বক্তৃতা দিচ্ছেন। ছবি: সংগৃহীত

মালয়েশিয়ার প্রখ্যাত আল বুখারি (সামাজিক ব্যবসা) বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

থাই সীমান্তের মাত্র ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে মালয়েশিয়ার কেদাহ রাজ্যের আলোর সেতারে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির কনভোকেশন হলে গত ১৬ ডিসেম্বর এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।

আল বুখারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এর চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর ইউনূস। একটি সামাজিক ব্যবসা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা পর্যায় থেকে তিনি এর সঙ্গে জড়িত।

নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী এবং আলবুখারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ফিলিস্তিন থেকে আগত এআইইউর স্নাতক শিক্ষার্থীর হাতে সনদ তুলে দিচ্ছেন। তার গায়ে জড়ানো রয়েছে ফিলিস্তিনের পতাকা। ছবি: সংগৃহীত

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর, সদ্য স্নাতক শিক্ষার্থী, অনুষদ সদস্য, সাতজন রাষ্ট্রদূত, পরিচালনা পরিষদ ও সিনেট সদস্য, স্নাতকদের অভিভাবক ও পরিবারের সদস্যসহ প্রায় এক হাজার ব্যক্তির উপস্থিতিতে ব্যবসায় প্রশাসন, প্রাথমিক শিক্ষা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে ২৩১ জন সদ্য স্নাতকের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন প্রফেসর ইউনূস।

এ ছাড়া, প্রফেসর ইউনূস স্নাতকদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বোচ্চ পুরস্কার চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মোখতার আল বুখারির মায়ের নামে নামকরণ করা শরীফাহ রোকিয়া পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার প্রদান করেন।

এ বছরের স্নাতকদের মধ্যে একজন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী গুফরান জাগমুত তার দেশে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্মম অত্যাচার এবং এ বিষয়ে ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলোর সম্পূর্ণ নীরবতার প্রতিবাদে সমাবর্তন গাউনের ওপর ফিলিস্তিনের পতাকা জড়িয়ে সনদ গ্রহণ করতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন।

এ ছাড়া, এটি ছিল আল বুখারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুলায়মান আবু আনজার হত্যার বিরুদ্ধে তার সহপাঠীদের প্রতিবাদ। আবু আনজার গত অক্টোবরে ইসরাইলি আগ্রাসনের সময় স্নাইপারের গুলিতে নিহত হন। তিনি সেমিস্টার বিরতিতে গাজায় তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এবং গাজাবাসীর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে দেশে গিয়েছিলেন। পুরো ক্যাম্পাস তার এই হত্যাকাণ্ডে ক্ষোভে ফেটে পড়ে।

গাজায় ইসরায়েলি স্নাইপারের গুলিতে সম্প্রতি নিহত আলবুখারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সুলাইমান আবু আনজা। ছবি: সংগৃহীত

সদ্য স্নাতকদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রফেসর ইউনূস বলেন, এই পৃথিবীতে তাদের উপস্থিতি অসামান্য গুরুত্ব বহন করে এবং বর্তমান সভ্যতা মানুষের মধ্যে বিভেদের যে দেয়াল গড়ে তুলেছে তা ধ্বংস করে শান্তির এক সভ্যতা গড়ার তারাই প্রধান সৈনিক।

সামাজিক ব্যবসার নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত আল বুখারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি একটি অলাভজনক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কোর্স ও পাঠ্যক্রমে সামাজিক ব্যবসার দর্শনকে অঙ্গীভূত করা হয়েছে। সম্পূর্ণ আবাসিক ক্যাম্পাস ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী অসচ্ছল পরিবারের বিদেশি তরুণ-তরুণী। বিশ্ববিদ্যালয় এই শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়ার খরচসহ তাদের আবাসন, খাবার খরচ, পকেট মানি এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য সব খরচ বহন করে।

প্রায় ৪৬ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত ক্যাম্পাসটি জেরুজালেমের ডোম অব দ্য রক, বুখারার সিটাডেল, মরক্কোর আল কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয় এবং তুরস্কের সুলেমানিয়ে মসজিদের মতো ধ্রুপদী সব বিস্ময় থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে স্থাপত্যগতভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। পৃথিবীর ৬০টি দেশের এক হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে।

গাজায় ইসরায়েলি স্নাইপারের গুলিতে নিহত আলবুখারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সুলাইমান আবু আনজারের স্মরণে গত ১৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্মরণসভার আয়োজন করে শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

আল বুখারি বিশ্ববিদ্যালয় থ্রি জিরো ক্লাব সৃষ্টিকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক জিরো ক্লাবের অধিকারী।

থ্রি জিরো ক্লাবের মিশন হচ্ছে শূন্য নীট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও শূন্য বেকারত্বের একটি পৃথিবী সৃষ্টি করা।

আলবুখারি বিশ্ববিদ্যালয় গত জুলাইয়ে ইউনূস সেন্টারের বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন '১৩তম সামাজিক ব্যবসা দিবস'র আয়োজন করে, যেখানে ৩১টি দেশ থেকে ৬০০ জনের বেশি প্রভাবশালী বিশ্ব ও জাতীয় নেতা, নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী, সামাজিক ব্যবসায়ে উৎসাহী ও সামাজিক ব্যবসা অনুশীলনকারী এবং চেঞ্জমেকাররা অংশগ্রহণ করেন।

Comments