‘ত্বকী এখন বিচারহীনতার প্রতীক’

দীর্ঘ ১১ বছরেও নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচার শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা বলেছেন, ‘বিচার বিলম্বিত করা মানে ন্যায়বিচারকে অস্বীকার করা। ত্বকী এখন বিচারহীনতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
ত্বকী হত্যা
তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ ১১ বছরেও নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচার শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা বলেছেন, 'বিচার বিলম্বিত করা মানে ন্যায়বিচারকে অস্বীকার করা। ত্বকী এখন বিচারহীনতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।'

ত্বকী হত্যার ১১তম বার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ নগরীর চাষাঢ়ায় শহীদ মিনারে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সমাবেশে এসব কথা বলেন তারা। ২০১৩ সালের ৬ জুন অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা করা হয় ১৭ বছর বয়সী ত্বকীকে।

সংগঠনের আহ্বায়ক ও ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক, সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান মাসুম, সিপিবি জেলা শাখার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাসদের জেলা শাখার সমন্বয়ক নিখিল দাস, ন্যাপ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন প্রমুখ।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, 'রাষ্ট্র আর অপরাধীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা যাচ্ছে না। এ কারণে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাদের বিচার চাইতে হচ্ছে। ত্বকী হত্যার পাশাপাশি প্রাসঙ্গিকভাবে তনু ও সাগর-রুনির কথাও আসছে। বছরের পর বছর তদন্তের সময় বাড়ানোর জন্য সময় চাইবে আর আদালতও তা অনুমোদন দিয়ে দেবে; নির্লজ্জতার একটা সীমা থাকা দরকার।'

'রাষ্ট্র ত্বকী হত্যার বিচার হতে দিচ্ছে না, এইখানে এই কথাটি বারবার উচ্চারিত হয়েছে। আমরা যখন বিচার শব্দটি শুনি তখন আদালতের কথা মাথায় আসে। তাহলে সবাই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে কেন? কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে বিচার করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্রীয় সংস্থা তদন্ত করে প্রমাণ সংগ্রহ করে প্রতিবেদন দেয়। এরপর বিচারক সিদ্ধান্ত নেন। বিচারক সন্তুষ্ট না হলে অধিকতর তদন্তের নির্দেশও দিতে পারেন।'

ফৌজদারি কার্যবিধির প্রসঙ্গ টেনে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আরও বলেন, 'আইন অনুযায়ী ১২০ দিনের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তদন্ত শেষ করতে হবে। ১১ বছরে কয়টি ১২০ দিন থাকে? সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে না পারলে তাকে জবাবদিহির অধীনে আনার মতো রাষ্ট্র কী আমাদের আছে? আমরা যে রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে আছি তাতে পরিষ্কার বোঝা যায়, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে কারও সম্পর্ক থাকলে তাকে আইনের মুখোমুখি করা যাবে না, বিচার পাওয়া যাবে না।'

ত্বকীর পরিবার বিচার পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে- মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'বিচার পাওয়ার যে সাংবিধানিক অধিকার তা ৩০ বছর পর পেয়ে কী লাভ? যতদিন একজন পিতাকে তার সন্তান হত্যার বিচারের জন্য রাস্তায় নেমে বিচারের দাবি জানানোর প্রয়োজন হবে না ততদিন আমরা লড়াই করব সেই শপথ করা উচিত।'

মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, 'যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, খুনিদের শাস্তি হবেই। ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

রফিউর রাব্বি বলেন, 'শুধু ত্বকী নয়, এই ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জে আরও অনেককে হত্যা করেছে। কিন্তু সরকার এবং প্রশাসন তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে। শামীম ওসমানও সাত খুনে জড়িত ছিল। কিন্তু তিনি আইনের আওতায় আসেননি। ওসমান পরিবারের কারও নাম দেখলে পুলিশ থানায় অভিযোগ নেয় না। তারা এমন জুলুমের রাজত্ব কায়েম করেছে।'

'বাংলাদেশে এর আগেও অনেক স্বৈরাচার সরকার ছিল কিন্তু এই আওয়ামী লীগ সরকারের মতো নির্লজ্জ কেউ ছিল না। তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য খুনিদের ওপর নির্ভরশীল।'

সমাবেশ শেষে ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে নগরীতে বিক্ষোভমিছিল বের হয়।

Comments