আমাদের পুলিশ আমেরিকান স্টাইলে আন্দোলন দমানোর ব্যবস্থা নিতে পারে: প্রধানমন্ত্রী

‘গরম পড়াটা কিন্তু খুব নতুন কিছু না। এর আগেও কিন্তু এই হিট স্ট্রোক হয়েছে এবং সব সময় হয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

বাংলাদেশের পুলিশ এখন আমেরিকান স্টাইলে আন্দোলন দমানোর ব্যবস্থা নিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় গণভবনে থাইল্যান্ড সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি দুইজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, এ ব্যাপারে আপনি প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে এর বিচার দাবির কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না? দুদিন আগে আপনি বলেছেন, অতি বাম-অতি ডান মিলে সরকারের বিরুদ্ধে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে। আপনি জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, বাংলাদেশের মানুষ তখন শঙ্কিত; সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আপনার বার্তা কী? হিট স্ট্রোকে সারা বাংলাদেশ আক্রান্ত। এটাকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করলে যাদের মৃত্যু হয়েছে তারা এক ধরনের সরকারি সুবিধা পায়। এ বিষয়ে আপনার ভাবনা কী—গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'গরম পড়াটা কিন্তু খুব নতুন কিছু না। এর আগেও কিন্তু এই হিট স্ট্রোক হয়েছে এবং সব সময় হয়। তবে সাধারণত বৈশাখ মাসে কালবৈশাখী হতো, এবার কালবৈশাখীটা পিছিয়ে গেছে। যার জন্য প্রচণ্ড গরম।'

তিনি বলেন, 'আমাদের দলের পক্ষ থেকে, সহযোগী সংগঠন থেকে শুরু করে সকলে পানি বিতরণ করা, মানুষকে নানা রকমের সহযোগিতা দেওয়া, আমরা কিন্তু সেটা দিয়ে যাচ্ছি। আর যারা মারা গেছে, অবশ্যই এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে আমরা সবাইকে সাবধান করে দিচ্ছি যে, চলাফেরা সব কিছুর সময় যেন সাবধানতা অবলম্বন করে থাকে। বেশিক্ষণ রোদে না থাকা, ছায়ায় থাকা। বিশেষ করে প্রচুর পানি খাওয়া। আমরা স্যালাইন, পানি, ছোট ছোট ছাতা, ক্যাপ; আমাদের দলের এবং সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব আমরা কিন্তু মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। সরকারের পক্ষ থেকেও সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।

'এখন প্রকৃতির সাথে তো কিছু বলার নেই। পাশাপাশি আবার যেহেতু এই গরমের জন্য হিমালয়ের বরফ গলছে, পানিও আসছে। যেসব নদীতে পানি থাকতো না, তিস্তায় কিন্তু প্রায় দ্বিগুণ পানি আছে এখন। সাথে সাথে আবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে আমাদের সিলেট বা ওই অঞ্চলে বন্যার। সেই বন্যাও হয়তো আসবে। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলে সেটা মোকাবিলা করার সক্ষমতা কিন্তু বাংলাদেশের আছে এবং আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে আমরা এটা ব্যবস্থা নেই। অবস্থা বুঝে যখন যেটা করণীয় আমরা সে ব্যবস্থা নিচ্ছি,' বলেন তিনি।

বাম ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা সব সময় মনে করি, অতি বাম খুব প্রোগ্রেসিভ দল, তারা খুবই গণমুখী দল। আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, ঠিক আছে তারা আমাকে উৎখাত করবে। পরবর্তীতে কে আসবে তাহলে, সেটা কি ঠিক করতে পরেছে? সেটা আমার প্রশ্ন, কারা আসবে? কে আসবে? কে দেশের জন্য কাজ করবে? কাকে তারা আনতে চায়? সেটা কিন্তু স্পষ্ট না। আর সেটা স্পষ্ট না বলে তারা কিন্তু তারা কেউই জনগণের সাড়া পাচ্ছে না।'

তিনি বলেন, 'আন্দোলন করে যাচ্ছে কেউ ফিউগেটিভ হয়ে বিদেশে বসে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের বদৌলতে প্রতিদিন অনলাইনে আন্দোলন-সংগ্রাম করেই যাচ্ছে। নির্দেশ দিয়েই যাচ্ছে। সেখানেও প্রশ্ন আছে। যারা আন্দোলন করার করুন, আমরা তো বাধা দিচ্ছি না!

'অবশ্য আমার মনে হয়, আমাদের একটু নতুন পথ নিয়ে নেওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আমরা যদি আমাদের পুলিশকে বলে দেই, আমেরিকার পুলিশ যেভাবে আন্দোলন থামায়, সেটা অনুসরণ করতে পারে। সেটা করতে পারি। আমার মনে হয়, আমাদের পুলিশ আমেরিকান পুলিশকে অনুসরণ করতে। কারণ আমরা তো ধৈর্য ধরতে বলেছিলাম। সেই ২৮ অক্টোবর ২০২৩ সালে আমি তো পুলিশকে বলেছিলাম ধৈর্য ধরতে। ধৈর্য ধরতে গিয়ে তাদের পিটিয়ে মেরেছে। সেই সাথে তাদের হাসপাতালে আক্রমণ, গাড়ি পোড়ানো। কাজেই আমার মনে হয়, এখন আমাদের পুলিশ কিন্তু আমেরিকান স্টাইলে আন্দোলন দমানোর ব্যবস্থাটা নিতে পারে। আমার মনে হয়, সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে আমাকে সমর্থন করবেন।'

বাংলাদেশি হত্যার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'প্রতিবাদ শুধু এখানেই না, আমেরিকায় বসেও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'বিভিন্ন স্কুল, বিভিন্ন শপিং মল, রেস্টুরেন্টে অনবরত গুলি হচ্ছে আর মানুষ মারা যাচ্ছে। এমন কোনো দিন নাই বোধ হয়, আমেরিকায় মানুষ না মারছে। তাদের সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। তাদের দেশে এই যে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। গুলি করে একেবারে সাধারণ নিরীহ মানুষগুলোকে হত্যা করা হচ্ছে। এটাও তো তাদের দেখা উচিত। নিজের ঘর আগে সামলানো উচিত। এটা প্রতি নিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করা।

'এর আগেও আমাদের বাংলাদেশি কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করেছি এবং বিচার করে তারা আমাকে জানিয়েছে। আমাদের যেটুকু করার সেটা আমরা করে যাচ্ছি,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago