ডিজিটাল বাংলাদেশ করায় হয়রানি ছাড়াই ঘরে বসে হজের সব কাজ করা যাচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

ডিজিটাল বাংলাদেশ করায় হয়রানি ছাড়াই ঘরে বসে হজের সব কাজ করা যাচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

ডিজিটাল বাংলাদেশ করায় হয়রানি ছাড়াই ঘরে বসে হজের সব কাজ করা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ বুধবার ঢাকার আশকোনায় হজ কার্যক্রম-২০২৪ এবং হজযাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশ আজকে স্বাধীন দেশ। আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তিনি তার আজীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই কিন্তু আমাদের এই স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আর এই স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন বলেই আজকে আমরা স্বাধীনভাবে, আমাদের দেশের মানুষ হজ করার সুযোগটা পাচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'বাঙালি জাতি এক সময় দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত ছিল। এক সময় চিন্তাই করতে পারতো না বা সেই সঙ্গতিও অর্জন করতে পারেনি। স্বাধীনতার অর্জনের ফলেই আজকে সেটা সম্ভব হয়েছে।'

এর আগে হজযাত্রীরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। সেই প্রসঙ্গ ধরে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমার একজন বোন যিনি হজ করতে যাচ্ছেন, তিনি বললেন—এখন কত সহজভাবে এখন ঘরে বসে হজের সব কাজ সম্পন্ন করতে পারছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব ২০০৮ এর নির্বাচনী ইশতেহারে সেই ঘোষণাটা দিয়েছিলাম। আজকে তার সত্যিকার বাস্তবায়ন হয়েছে। আর বাস্তবায়ন হয়েছে বলেই আজকে এই সুযোগটা সকলে পেয়েছেন। প্রথমবার যখন সরকারে এসেছিলাম, তখন মোবাইল ফোন যাতে সকলের হাতে পৌঁছায় সে ব্যবস্থাটাও করে দিয়েছিলাম।

'ডিজিটাল বাংলাদেশ করবার জন্য স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করা, ব্রডব্যান্ড সমস্ত জায়গায় পৌঁছে দেওয়া, ওয়াই-ফাই কানেকশন দেওয়া, এসব করার ফলে কিন্তু আজকে এই সহজ পদ্ধতিতে আপনারা হজ করতে যেতে পারেন এবং কাজগুলো ঘরে বসে করতে পারেন কোনো রকম হয়রানি হতে হয় না। তাছাড়া সরাসরি যাতে রেজিস্ট্রেশন করা যায়, সেই ব্যবস্থাটাও আমরা করে দিয়েছি এবং যারা নিজেরা কম্পিউটার ব্যবহার করবেন না, যেমন প্রত্যেকটা এলাকায় আমরা তো ডিজিটাল সেন্টার তৈরি করে দিয়েছি। এই ডিজিটাল সেন্টারে বসে কিন্তু রেজিস্ট্রেশন করা যেতে পারে। করতে পারেন। সে ব্যবস্থাটাও আমরা করে দিয়েছি,' যোগ করেন তিনি।

সৌদি বাদশা ও প্রাইম মিনিস্টার এবং হজ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'তারা বাংলাদেশের হজের ব্যাপারে অনেক উদার এবং অনেক সহযোগিতা আমাদের করে যাচ্ছেন, সে জন্য আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।'

তিনি বলেন, 'আমি ১৯৮৪ সালে প্রথম যখন ওমরাহ করতে যাই এবং এর পরে ১৯৮৫ সালে প্রথম যখন হজ করি, তখন হজের যে অব্যবস্থাপনা এবং এরপর যতবার আমি এসেছি, সৌদি বাদশার অতিথি হিসেবেই আমি এসেছি সেই ৮৫ সাল থেকে। সব সময় হজ ক্যাম্পগুলো ঘুরে বেড়াতাম। কোথাও কী সমস্যা আছে; আমি ফিরে এসে চিঠি দিতাম। এখানে আমাদের যিনি অ্যাম্বাসেডর আছেন, তার সঙ্গে কথা বলতাম। যদিও তখন আমি এমপিও না, মন্ত্রীও না কিছুই না—একজন নাগরিক হিসেবে। কিন্তু আমার কথায় তারা গুরুত্ব দিয়েছেন এবং আস্তে আস্তে আমরা এই হজ ব্যবস্থাপনাকে আরও উন্নত করতে পেরেছি। সেটা করতে পেরেছি বলেই আজকে সকলে আপনারা ভালোভাবে হজ করতে পারছেন বা হজ করতে যেতে পারছেন এবং আরও সহজ হচ্ছে।'

আশকোনা হজ ক্যাম্পের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এখান থেকে আমরা একটা আন্ডারপাস করে দিচ্ছি। এই হজ ক্যাম্প এবং বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের সঙ্গে বিমানবন্দরের যোগাযোগটা আন্ডারপাস দিয়েই হবে। খুব সহজে আপনারা পৌঁছে যেতে পারবেন। মালপত্রও নিয়ে যাওয়া যাবে, সে ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। পায়ে হেঁটে যাওয়ার দরকার হবে না, তার জন্য আমরা বিশেষ ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এখানে সোজা স্কেলেটর থাকবে, গলফ কার্টের মতো ব্যাটারিচালিত গাড়ি থাকবে।'

সারা দেশে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'রেলে এসে নেমে সরাসরি বিমানবন্দরে চলে যাওয়া যাবে।'

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'আমাদের কোনো বিমান ছিল না। আমি আসার পর নিজস্ব বিমানও ক্রয় করেছি। আগে দুই-তিনটা ঝরঝরে ছিল, খুবই খারাপ অবস্থা কিন্তু এখন আমি একেবারে আধুনিক বিমান কিনে দিয়েছি। কারণ সৌদির বিমান আমাদের হজযাত্রীদের নেন, পাশাপাশি আমরা আমাদের নিজস্ব বিমানে পাঠাতে পারি, আগে তো ভাড়া করে আনতে হতো! এখন আর খুব বেশি লাগে না। আমরা নিজেদের বিমানেই করতে পারি। সে ব্যবস্থাটাও আমরা করতে পেরেছি।'

দেশবাসীর সহযোগিতায় বাংলাদেশ এতদূর এগিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'প্রতিবারই যারা (হজে) যাচ্ছেন, কোনো সমস্যা হচ্ছে, সেটাকে উন্নত করার পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং এই ক্ষেত্রে সব সময় সৌদি সরকার আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।'

হজযাত্রীদের বাংলাদেশ ও সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'আপনারা দেখছেন যে প্যালেস্টাইনে কী হচ্ছে। যেভাবে সেখানে গণহত্যা চালানো হচ্ছে। ওখানে নারী-পুরুষ, ছোট শিশুদেরও রেহাই দেওয়া হচ্ছে না। যেখানেই আমি কথা বলছি, আমার কণ্ঠ সোচ্চার—আমি প্রতিটি জায়গায় এর প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। প্যালেস্টাইন আরব ভূ-খণ্ডে, তাদের জায়গা তারা পাবে। এটা তাদের অধিকার। এই অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারে না। কাজেই সেই অধিকার তাদের দিতে হবে। আজকে যদি আমাদের সকল মুসলিম কান্ট্রিগুলো এক হয়ে একযোগে কাজ করতে পারতো, তাহলে আরও আমরা এ ব্যাপারে অনেক অগ্রগামী হতে পারতাম।

'ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আমি একাই একমাত্র বোন। আমি বলছি, আমি একমাত্র বোন আছি, কাজেই আমার এটাই কথা সকলে এক হোন এবং এই ধরনের অন্যায়-অবিচার যেন আমাদের ওপর না হয় সেদিকে যাওয়ার জন্য সকলে সোচ্চার থাকবেন,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy in early 2025

According to the latest data from the United Nations High Commissioner for Refugees (UNHCR), 2,589 Bangladeshis landed in Italian shores in January and February this year while 1,206 went to the European country in the two months last year

2h ago