তথ্য প্রাপ্তিতে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছেন ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন: তথ্য কমিশন

সাদিয়া উম্মুল বানিন। ছবি: সংগৃহীত

সাংবাদিক যথা নিয়মে তথ্য চাইলেও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা হিসেবে শেরপুরের নকলা উপজেলার ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই তথ্য প্রাপ্তির আবেদন গ্রহণ করেননি।

এর মাধ্যমে তিনি তথ্য প্রদানে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছেন বলে তথ্য কমিশন প্রকাশিত সিদ্ধান্তপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

কমিশনের ওয়েবসাইটে সম্প্রতি এ সিদ্ধান্তপত্র প্রকাশ করা হয়।

দৈনিক দেশ রূপান্তরের নকলা সংবাদদাতা গত ৫ মার্চ দুপুরে ইউএনও কার্যালয়ে গিয়ে কিছু তথ্য চাইতে গেলে তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও অসদাচরণের অভিযোগ আনে উপজেলা প্রশাসন।

পরে ইউএনও সাদিয়া উম্মুল ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার অনুমোদন দিলে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শিহাবুল আরিফের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

তথ্য কমিশন ওই ঘটনা তদন্ত করে ইউএনওর তথ্য প্রদানে অনীহার প্রমাণ পেয়েছে। গত ২ এপ্রিল ওই ইউএনওর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে তথ্য কমিশন। কিন্তু রোববার পর্যন্ত জনপ্রশান মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানা গেছে।

সাদিয়া উম্মুল এখনো নকলা উপজেলার ইউএনও হিসেবে কর্মরত আছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তথ্য কমিশনের পক্ষ থেকে শুধু তথ্য দেওয়া সংক্রান্ত বিষয়টি অনুসন্ধান করা হয়েছে। মোবাইল কোর্টের বিষয়টি তথ্য কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত নয়।

কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুক নকলায় সরেজমিন তদন্তে যান। তার তদন্তে ইউএনওর পক্ষ থেকে তথ্য প্রদানে বাধা সৃষ্টি করেছেন—এমন প্রমাণ মিলেছে।

গত ২ এপ্রিল তথ্য কমিশনের শুনানিতে উপস্থিত হয়ে ইউএনও সাদিয়া উম্মুল নিজের যুক্তি তুলে ধরেন।

কিন্তু তথ্য কমিশনের দেওয়া সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, 'কমিশন স্ব-প্রণোদিতভাবে বিষয়টি অনুসন্ধান করেছেন। শুনানি ও অনুসন্ধান কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত কার্যপত্র পর্যালোচনা করে পরিলক্ষিত হয় যে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (আরটিআই) তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর ২৭(১) ধারা মোতাবেক কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ছাড়াই তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন।'

কমিশনের সিদ্ধান্তপত্রে আরও বলা হয়েছে, 'শেরপুরের নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত আরটিআই কর্মকর্তা সাদিয়া উম্মুল বানিন তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর ২৭(৩) ধারায় বর্ণিত তথ্য প্রাপ্তিতে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছেন বলে কমিশন সিদ্ধান্তে উপনীত হন।'

'এর মাধ্যমে তিনি অসদাচরণ করেছেন মর্মে গণ্য করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে সুপারিশ করা হয়,' সিদ্ধান্তপত্রে উল্লেখ করা হয়।

তথ্য কমিশনের এমন সুপারিশের এক মাসের বেশি সময় হয়ে গেলেও নকলা ইউএনওর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের বিষয়, তাকে নকলা উপজেলা থেকে এখনো সরানো হয়নি।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে শেরপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তার কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।

ডিসি বলেন, 'এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত উপর থেকে আসে, আমাদের কাজ বাস্তবায়ন করা। আমাদের পর্যায় থেকে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।'

জানতে চাইলে ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এসব বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করি। এখন পর্যন্ত আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি।'

নকলার ইউএনওর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগের কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাদিয়া উম্মুলের বিষয়ে এখন পর্যন্ত বিভাগীয় কোনো ব্যবস্থার নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। তবে তথ্য কমিশনের সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় পেয়েছে। এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে শিগগির সিদ্ধান্ত হবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Money laundering: NBR traces Tk 40,000cr in assets abroad

The National Board of Revenue has found assets worth nearly Tk 40,000 crore in five countries which it believes were bought with money laundered from Bangladesh, said the Chief Adviser’s Office yesterday.

3h ago