ত্বকী হত্যার ১৩৫ মাস

‘ওসমান পরিবারকে একদিন কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে’

‘একটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে ১৩৫ মাস লাগে না। এ সরকারের সদিচ্ছা থাকলে র‌্যাবের তদন্ত অনুযায়ী চিহ্নিত হত্যাকারীদের বিচার হতো।'
ত্বকী হত্যার বিচার দাবিতে চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বলন করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৩৫ মাস উপলক্ষে আলোক প্রজ্বলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। প্রতিমাসের মতো শনিবার সন্ধ্যায় চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।

জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য রাখেন ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান মাসুম, সদস্যসচিব হালিম আজাদ, ন্যাপ নেতা আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের তরিকুল সুজন, বাসদের আবু নাঈম খান, সমমনার দুলাল সাহা, সিপিবি নেতা শিবনাথ চক্রবর্তী প্রমুখ।

গণতন্ত্রহীন সমাজে দুর্বৃত্তরাই শক্তিমান হয় মন্তব্য করে রফিউর রাব্বি বলেন, 'সেই সমাজে মানুষের কোনো অধিকার থাকে না, বিচারব্যবস্থা ধ্বংস হয়। এটি আমাদের দেশে অব্যাহত রয়েছে। সংবিধান বলছে, রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সমান অধিকার। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। একদিকে আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় আজিজ-বেনজীররা তৈরি হচ্ছে আর অন্যদিকে নিরন্ন মানুষের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। আজিজ-বেনজীররা প্রত্যেক জেলায় আছে, সরকারের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে বেড়ে উঠছে। যখন এটির বহিঃপ্রকাশ ঘটছে তখন সরকার না জানার ভান করছে।'

'সমাজের এই প্রক্রিয়া দুই-চারদিনে গড়ে ওঠেনি। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতা ধরে রাখতে জনগণের বিপক্ষে দুর্বৃত্ত শক্তি গড়ে তুলেছে। যখন তারা বুঝতে পারে, জনগণ ভোট দিলে ক্ষমতা থাকবে না, তখন একটি সরকার স্বৈরাচার হয়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য গণমুখী, জননির্ভরশীল একটি দেশপ্রেমিক সরকার দরকার', বলেন তিনি।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ কিশোর ত্বকী নগরীর শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়। ৮ মার্চ তার মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার হয়। ত্বকী হত্যার পর ১১ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এই হত্যা মামলাটির তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের চারবারের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের নির্দেশে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, 'ত্বকীকে হত্যা করেছে ওসমান পরিবার, নির্দেশদাতা শামীম ওসমান। দেশে একদিন আইনের শাসন গড়ে উঠবে, সেদিন ত্বকী হত্যার বিচার করতেই হবে। ত্বকী হত্যার জন্য শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।'

তিনি বলেন, 'দেশের জনগণ ত্বকী হত্যার বিচার করবে। এমন একদিন আসবে, যেদিন জনগণের কাছে প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহি করতে হবে।'

হালিম আজাদ বলেন, 'একটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে ১৩৫ মাস লাগে না। এ সরকারের সদিচ্ছা থাকলে র‌্যাবের তদন্ত অনুযায়ী চিহ্নিত হত্যাকারীদের বিচার হতো। কেননা, র‌্যাব তদন্ত করে সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, গডফাদার পরিবারের সন্তান ত্বকীকে হত্যা করেছে। এ গডফাদার পরিবারকে রক্ষা করার জন্য বিচার বন্ধ রাখা হয়েছে।'

'স্থানীয় প্রশাসনকে বলতে চাই, নির্লজ্জভাবে থাকবেন না। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তসংশ্লিষ্ট সকল ফাইল আদালতে জমা দিন। নইলে আপনাদেরও একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে', যোগ করেন তিনি।

দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন গণসংহতির তরিকুল সুজন। তিনি বলেন, 'হত্যার বিচার কোনো শুভবোধের বিষয় নয়। বিচার পাওয়া একজনের নাগরিক অধিকার। লুটেরা, খুনি, ভোটচোরদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হলে দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ হবে।'

আওলাদ হোসেন বলেন, 'এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ওসমান পরিবার জড়িত, তা মানুষ জেনে গেছে। গণতান্ত্রিক সরকার যেদিন আসবে সেদিন ত্বকী হত্যার বিচার হবে এবং যে সরকার এ বিচার বন্ধ রেখেছে তাদেরও বিচার হবে।'

তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী ছাড়াও আলোচিত সাগর-রুনি, তনু, নারায়ণগঞ্জের আশিক, চঞ্চল, ভুলুসহ সারাদেশের সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন বক্তারা।

বক্তব্য শেষে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি শেষ হয়।

Comments

The Daily Star  | English
justice delayed due to fake cases

A curious tale of two cases

Two cases were filed over the killing of two men in the capital’s Jatrabari during the mass uprising that toppled the Awami League government.

17h ago