পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি দুর্নীতিকে প্রশ্রয়-সুরক্ষা দেওয়ার অপচেষ্টা: টিআইবি

‘তথ্য মন্ত্রণালয়কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ শুধু দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতাই নয়, পুরো জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অশনিসংকেত।’
ছবি: সংগৃহীত

সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিকে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি সংবিধান পরিপন্থি হুমকি উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বিষয়টিকে সাম্প্রতিক সময়ে ফাঁস হওয়া সাবেক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীর একাংশের দুর্নীতির সুরক্ষা দেওয়ার অপচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

আজ রোববার দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি এই কথা জানায়।

ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া সাবেক পুলিশ কর্তাদের নিয়ে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিকে উটপাখির আচরণসম উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে দেওয়া বিবৃতিটিই পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠনের এমন বিবৃতি যে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের সুরক্ষা দেওয়ার একটি সুপরিকল্পিত প্রক্রিয়া—এমন মনে হওয়া মোটেও অমূলক নয়। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সংগঠনের এ বিবৃতি একদিকে যেমন সংবিধান স্বীকৃত স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি সরাসরি হুমকি ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের প্রচেষ্টা, অন্যদিকে তেমনি নাগরিকের তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিতের অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মূলত বাস্তবতাকে অস্বীকার করে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন যে "উটপাখির মতো বালিতে মুখ গুঁজে" রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে—এমন মন্তব্য করা মোটেই অত্যুক্তি হবে না।'

গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্নীতির খবরে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে—পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এমন বক্তব্যকে বালখিল্যতার সামিল উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'পুলিশের সাবেক শীর্ষ কর্তাদের দুর্নীতির যে বিশাল, অস্বাভাবিক ও অনেকাংশে উৎকট খতিয়ান আমরা গণমাধ্যমের কল্যাণে জানতে পারছি, সেসব সংবাদকে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার খোঁড়া যুক্তিতে থামানোর চেষ্টা করা পুলিশের মতো একটি দায়িত্বশীল সংস্থার ভাবমূর্তি সুরক্ষায় নিজেদের সক্ষমতা ও সৎসাহস নিয়ে প্রশ্ন জন্ম দেয়। এমন স্বার্থের দ্বন্দ্বে দুষ্ট যুক্তির বদলে বিপুল দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ জানা যাচ্ছে, তার জন্য বিব্রতবোধ করে স্বপ্রণোদিত হয়ে পুলিশের তরফ থেকে নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত তদন্তে সহায়তার ঘোষণা দিলে তা বাহিনীর দুর্নীতি প্রতিরোধের সদিচ্ছার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতো। তা একদিকে যেমন পুলিশের ভাবমূর্তির জন্য সহায়ক হতো, অন্যদিকে পুলিশের প্রত্যাশিত পেশাগত মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতো।'

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের পাশাপাশি দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, বিভিন্ন দুর্যোগ-সংকট মোকাবিলা ও মানবসেবায় পুলিশের ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই এবং এ জন্য পুলিশবাহিনী যৌক্তিকভাবেই প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু পুলিশের এই ভূমিকাকে দুর্নীতির তথ্য গোপনের মাধ্যমে অবৈধতা প্রসারের লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগ্রাম, দুর্যোগ কিংবা সংকটে পুলিশের অবদানকে আমরা শুধুমাত্র স্বীকারই করি না, প্রশংসার সঙ্গে স্মরণেও রাখি। কিন্তু এই অবদানকে অপরাধের সুরক্ষার লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহার বা অপরাধীর জন্য বিচারহীনতার সুযোগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার দুরভিসন্ধি পুলিশের নৈতিকতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।'

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে—পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতির পর পুলিশকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম যেন সতর্কতা অবলম্বন করে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিষয়টিকে শুধু দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতাই নয়, পুরো জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অশনিসংকেত হিসেবে মন্তব্য করেছে টিআইবি।

এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'পুলিশ বাহিনীতে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে তথ্য প্রকাশ নিশ্চিতের পরিবেশ সৃষ্টি করার কথা যে মন্ত্রণালয়ের, সেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেই তথ্য গোপনের মাধ্যমে দুর্নীতিকে সুরক্ষা দিতে উদ্যোগী হতে দেখা যাচ্ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার ঘোষণাসহ একটি গণতান্ত্রিক ও জনকল্যাণে নিবেদিত দাবি করা সরকারের জন্য এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে! আমরা আশা করব, পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ওপর সাংবিধানিকভাবে অর্পিত দায়িত্বকে স্মরণ করে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ সব ধরনের অপরাধকে সুরক্ষা দেওয়ার এই হীন প্রচেষ্টা থেকে বেরিয়ে অভিযোগের নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত তদন্তে সহায়ক ভূমিকা পালনে উদ্যোগী হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
RMG export to EU rises

Garment export to US falls 9.16% in Jan-Aug

Data released from the Office of Textiles and Apparel (OTEXA) showed the fall

2h ago