‘দুর্নীতির মচ্ছব চলছে’, বিশেষ কমিশন গঠনের দাবি রাশেদ খান মেননের

Menon.jpg
রাশেদ খান মেনন। ফাইল ছবি

দেশে দুর্নীতি বন্ধে 'বিশেষ কমিশন' গঠন এবং ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎকারীদের বিচারে 'ট্রাইব্যুনাল গঠন' করার দাবি জানিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

ক্ষমতাসীন জোটের শরিক এ নেতা বলেন, 'দুর্নীতির এই মচ্ছব বন্ধ করতে এখনই বিশেষ কমিশন গঠন করুন, দুর্নীতিবাজদের অর্থ সম্পদ বাজেয়াপ্ত, বিচার করে কঠিনতম শাস্তি দিন। ঋণখেলাপী অর্থ আত্মসাৎকারীদের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করুন।'

সোমবার ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব দাবি জানান মেনন।

তিনি বলেন, 'এ কথা এখন আর অস্বীকার করার উপায় নাই যে, সাবেক পুলিশ প্রধান ও সেনা প্রধানের দুর্নীতির চিত্র হিমশৈলের ক্ষুদ্র চূড়া মাত্র। এখনই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুর্নীতির এই বিস্তার রোধ করা না গেলে হিমশৈলের ধাক্কায় দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির সলিল সমাধি হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা এখানে দেখলাম পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন থেকে দুর্নীতির খবর প্রকাশ করার জন্য সাংবাদিকদের ধমক দেওয়া হয়েছে। অনেক মন্ত্রী এ তথ্যকে অনুমান ভিত্তিক বলে অভিহিত করছেন।'

তিনি বলেন, 'মার্কিন ফিনানশিয়াল ইনটিগ্রেটি ইনস্টিটিউশন দেখিয়েছে যে, বছরে ৭ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে কানাডার বেগম পাড়ায়, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোমে, সিঙ্গাপুর, দুবাইয়ের আধুনিক শপিংমল, রিয়েল এস্টেট ও হুন্ডি ব্যবসায়। এই টাকার লভ্যাংশও দেশে আসছে না। পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ নাই। অথচ প্রবাসীরা বিদেশে হাড়ভাঙা খাটুনীর যে আয় দেশে পাঠায় তার ওপর কর বসানো হচ্ছে। তাদের বিদেশ যাত্রা নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।'

মেনন বলেন, 'এই অর্থ সম্পদ উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে তা ফেরত না দেওয়া, ব্যাংক লুট ও দুর্নীতি। ২০০৯ সালে ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকার এমন ঋণ এখন ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। পুণঃতফসিলীকরণ ও অবলোপন ধরলে এর পরিমাণ ৪ থেকে ৫ লাখ কোটি টাকা দাঁড়াবে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, 'ব্যাংকিং ক্ষেত্রে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে "ব্যাংক কমিশন" গঠন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবদুল মুহিত। পরের অর্থমন্ত্রী তাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। আর এখন ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তুঘলকি কাণ্ড করছে।'

কালো টাকা সাদা করার সুযোগের বিরোধিতা করে মেনন বলেন, 'লুটের টাকাকে যখন সাদা করার জন্য সৎ উপায়ে অর্জিত অর্থের চেয়ে অর্ধেক কর দিয়ে সাদা করার প্রস্তাব করা হয় তখন সেটা সততার জন্য তিরস্কার ও অসততার জন্য পুরস্কারের শামিল হয়ে দাঁড়ায়। এ সম্পর্কে যেসব যুক্তি দেওয়া হচ্ছে তা কেবল অসাড়ই নয়, এ প্রসঙ্গে সরকারের অতীত অবস্থানের বিপরীত। খালেদা জিয়ার জন্য যেটা অনৈতিক, বর্তমানেও সেটা অনৈতিক। আশা করি অর্থমন্ত্রী এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে সংসদকে এর দায়ভার থেকে রেহাই দেবেন।'

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম খুনের ঘটনা প্রসঙ্গে মেনন বলেন, 'এই দুঃখজনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের স্বর্ণ—মাদক চোরাচালানি ও অপরাধ জগতের যে চিত্র বেরিয়ে আসছে যে খবর প্রকাশিত হচ্ছে তাতে সংসদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখা দরকার। আত্মসমালোচনা দরকার।'

রাশেদ খান মেনন বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ভারত তিস্তার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার কথা বলেছে। কিন্তু তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি কোথায় গেল আমরা জানি না। তিস্তা চুক্তি না করে এই সহযোগিতা গাছের গোড়া কেটে উপরে পানি ঢালার শামিল। এই সফরে গঙ্গা চুক্তি নবায়নের কথা এসেছে। এর জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু ওই চুক্তিতে গঙ্গার পানি প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য সংকোশ থেকে খাল কেটে গঙ্গার পানি প্রবাহ বৃদ্ধির যে বিষয়টি ছিল তা ৩০ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। বরং এখন ফারাক্কার ওপরে আরেকটি ব্যারেজ তৈরির কথা এসেছে।'

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংসদে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা বলেছেন। কিন্তু বাজেটে এর কোনো বরাদ্দ নেই। বাজেট বরাদ্দে প্রতিটি ক্ষেত্রেই রংপুর বিভাগ বঞ্চিত হয়েছে। এই আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করে তিস্তাসহ উত্তরবঙ্গের জন্য সমবরাদ্দের ব্যবস্থা নিতে হবে। তিস্তা নিয়ে যেন আমরা ভূ—রাজনীতির দ্বৈরথের শিকার না হই। প্রয়োজনে পদ্মাসেতুর মতো নিজেদের অর্থায়নে তিস্তা কর্তৃক্ষ গঠন করে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।'

রাশেদ খান মেনন বলেন, 'নিষ্ঠুর অলিগার্করা দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই অলিগার্কির স্বার্থ রক্ষার্থে মূল্যস্ফিতি কমিয়ে আনা যায়নি। দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, অর্থপাচার, ব্যাংকিং খাতে লুট ও নৈরাজ্য, খেলাপি ঋণের বিশাল পাহাড় দেশের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর অবস্থায় উপনীত করেছে। এর থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার, জন ও রাষ্ট্রীয় জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনাই ছিল বর্তমান সময়ের জরুরি কর্তব্য। কিন্তু সেই লক্ষ্যে বাজেটে কোন কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায় না। আওয়ামী লীগের যে নির্বাচনী ইশতেহারের কথা বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে বাজেট প্রস্তাবনা তার থেকে যোজন যোজন দূরে, সাংঘর্ষিক।'

মেনন বলেন, 'বাজার সিন্ডিকেট আগের মতো খেলা করছে। মানুষকে তার শিকারে পরিণত করছে। সরকার স্বীকার করছে সিন্ডিকেট রয়েছে। কিন্তু সিন্ডিকেট ভাঙার কোনো উদ্যোগ দেখি না।'

'বিএনপি আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচ পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। আমি সে সময় বিভিন্ন লেখায় দেখিয়েছিলাম দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলেই আমাদের প্রবৃদ্ধি আড়াই ভাগ বৃদ্ধি পেত। বিএনপি আমলের দুর্নীতির বিশ্ব সূচকে আমাদের সেই কলঙ্ক দূর হলেও ওই সূচকে বাংলাদেশ এখনও শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে। বরং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির যে চিত্র সম্প্রতি বেরিয়ে আসছে তা দেশের ভাবমূর্তি কেবল নয়, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা সৃষ্টি করছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Banks see sluggish deposit growth as high inflation weighs on savers

Banks have registered sluggish growth in deposits throughout the current fiscal year as elevated inflation and an economic slowdown have squeezed the scope for many to save, even though the interest rate has risen.

15h ago