দেশজুড়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, নিহত অন্তত ১৮

ঢাকার মিরপুর-১০ এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দিনভর পুলিশের সংঘর্ষ চলে। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে অন্তত ১৮ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে আজ সকাল থেকে সারা দেশে 'কমপ্লিট শাটডাউন' কর্মসূচি ছিল। এতে দিনভর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

ঢাকা মেডিকেলে সাংবাদিকসহ ৬ মরদেহ

ঢাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ নিহত ছয়জনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আছে।

দ্য ডেইলি স্টারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া।

তিনি জানান, নিহত ছয় জনের মরদেহ বর্তমানে ঢামেক মর্গে রাখা আছে।

জানা গেছে নিহতদের মধ্যে একজন ঢাকা টাইমসের নিজস্ব প্রতিবেদক মেহেদি হাসান (২৮)।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যাত্রাবাড়ীর হানিফ ফ্লাইওভারের কাছে সংবাদ সংগ্রহের কাজ করছিলেন মেহেদি।

বাকিদের মধ্যে আছেন কাজলার এক রিকশাচালক, শনির আখড়া এলাকার দোকানি ওয়াসিম (৪০), যাত্রাবাড়ীর ক্যামিকেল ব্যবসায়ী নাজমুল (২৮) ও আজিমপুরের মোহাম্মদ আলী (২২)। এ ছাড়াও গতকাল শনির আখড়ায় সংঘর্ষে আহত হয়ে ঢামেকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ইকবাল (২২)।

রামপুরায় গাড়িচালক নিহত

আজ দুপুরে ঢাকার বাড্ডা-রামপুরা এলাকায় পুলিশ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাতে একজন নিহত হন। এই ঘটনায় আহত হন আরও ও শতাধিক মানুষ।

নিহত দুলাল মাতবর পেশায় গাড়িচালক। সংঘাতের সময় তিনি একটি মাইক্রোবাস চালিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ফরাজি হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রুবেল হোসেন ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেন।

উত্তরায় নিহত ৪

উত্তরা-আজমপুর এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টার জানান, সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত ব্যক্তিকে এই হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে চারজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।

উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সেখানে প্রায় পাঁচশ জন আহত চিকিৎসা নিয়েছেন।

সাভারে শিক্ষার্থী নিহত

সাভারে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেওয়া মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।

তার নাম শেখ আশাবুল ইয়ামিন। তার বাবা মো. মহিবুদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসূফ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিহত শিক্ষার্থীর শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।'

ধানমন্ডিতে রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজর শিক্ষার্থী নিহত

রাজধানীর ধানমন্ডিতে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজ (১৭) নিহত হয়েছেন।

সিটি হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক ওসমান গণি ডেইলি স্টারকে বলেন, ফারহানকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।

তিনি আরও জানান, বিকেল ৫টা পর্যন্ত অন্তত ২০০ জন আহত হয়ে তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। আহতদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী।

মাদারীপুরে ধাওয়ায় লেকে ডুবে শিক্ষার্থী নিহত

মাদারীপুরে ছাত্রলীগ ও পুলিশের ধাওয়া খেয়ে লেকে ঝাঁপ দেওয়ার পরে পানিতে ডুবে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।

নিহত দীপ্ত দে (২২) মাদারীপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী। মাদারীপুর জেলা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল শকুনি লেক থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে।

শিক্ষার্থীরা জানান, শকুনি লেকপাড় এলাকায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। পরে পুলিশও ছাত্রলীগের সঙ্গে হামলায় যোগ দেয়। রাবার বুলেট-টিয়ার শেল ছোড়ে। হামলা থেকে বাঁচতে কয়েকজন আন্দোলনকারী শকুনি লেকে ঝাঁপ দেন। এ সময় একজন পানিতে চলিয়ে যান।

মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক আহাদুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের ডুবুরি দল তাকে উদ্ধার করে। তার মরদেহ সদর হাসপাতাল মর্গে আছে।'

নরসিংদীতে স্কুলশিক্ষার্থীসহ নিহত ২

নরসিংদী সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক স্কুলশিক্ষার্থীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। নরসিংদী সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে স্কুলশিক্ষার্থী তাহমিদ তামিম (১৫) নিহত হন। অন্যদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইমন আহমেদ (২২) নামে আরও একজন মারা যান।

নরসিংদী জেলা হাসপাতালের আরএমও মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, নিহত স্কুলশিক্ষার্থীর গায়ে রাবার বুলেটের চিহ্ন আছে। নিহত তাহমিদ তামিমের বাড়ি সদর উপজেলার চিনিশপুরে। সে নরসিংদী এন কে এম হোমস অ্যান্ড স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

অন্যদিকে নরসিংদী সদর হাসপাতালের আরএমও মো. মাহমুদুল কবির বাশার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, নিহত ইমনের গায়ে রাবার বুলেটের চিহ্ন আছে।

তার বাড়ি সদর উপজেলার পলাশ থানায়।

চট্টগ্রামে নিহত ২

চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই জন নিহত হয়েছেন।

নিহতদের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা তুহিন শুভ্র দাস দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকায় পুলিশবক্সে অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনকারীরা। পরে পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে ৯ জন আহত হন।

এতে গুলিবিদ্ধ দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়।

যোগাযোগ করা হলে চমেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গুলিবিদ্ধ দুই যুবককে হাসপাতালে আনা হয়। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল।'

পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে একজন এবং তার কিছু সময় পরে আরেকজন মারা যান বলে জানান হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা তুহিন শুভ্র দাস।

Comments