কুমিল্লার বীরচন্দ্র গণপাঠাগারের লুট হওয়া বই ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান

পাঠাগারে আগুনের ক্ষত। ছবি: স্টার

কুমিল্লার বীরচন্দ্র গণপাঠাগার থেকে লুট হওয়া বই ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নগরের বিশিষ্টজনরা। এর পাশাপাশি দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়া টাউন হল সংস্কারের দাবি উঠেছে নগরবাসীর পক্ষ থেকে। এটি টাউন হল পাঠাগার নামেও পরিচিত।

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর গত সোমবার বিকেলে বিজয় মিছিল থেকে কান্দিরপাড়ের টাউন হল পাঠাগারে হামলা করা হয়। এ সময় টাউন হলের দোতলার উত্তর অংশে অবস্থিত পাঠাগার ভাঙচুরের পাশাপাশি হাজার হাজার বই লুট হয়ে যায়। আগুন দেওয়া হয় ভাঙা বুকশেলফে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় অনেক দুষ্প্রাপ্র গ্রন্থ।

সম্প্রতি সেখানে গিয়ে ভাঙচুরের চিহ্ন ও আগুনে পোড়া বইয়ের ধ্বংসস্তূপ চোখে পড়ে। দেখা যায়, দোতলার সবগুলো বইয়ের আলমারি ভাঙা। অনেক ম্যাগাজিন, ভাঙা কাচের টুকরো ও বেশ কিছু বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। নিচের প্রবেশপথে পাঠাগার তত্ত্বাবধায়কের কক্ষটি পোড়া।

১৮৮৫ সালে ত্রিপুরার রাজা বীরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুরের দান করা জমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই গণপাঠাগারটি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখানে দুইশ বছর আগে মুদ্রিত বইও ছিল।

ভেঙে ফেলা বুকশেলফ। ছবি: স্টার

পাঠাগারের তত্ত্বাবধায়ক রঞ্জিত দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সোমবার তিনি দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য বাইরে যান। বাইরে থেকেই তিনি জানতে পারেন যে পাঠাগারে হামলা হয়েছে। অনেক বইও পুড়ে গেছে।

এই ঘটনার পর গত দুই দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী এই পাঠাগারের লুট হওয়া বই ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন শহরের বিশিষ্টজনরা। এদের ভেতর আছেন লালমাই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান, সিপিবি নেতা শেখ আবদুল মান্নান, বিকাশ চন্দ্র দেব, আহসানুল কবির, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব খায়রুল আনাম রায়হান, সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলমসহ কুমিল্লার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

বিষয়টি নিয়ে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মাহাবুবুল আলম সিদ্দিকি বলেন, 'টাউন হল পাঠাগার ও বইগুলো আমাদের কুমিল্লার সম্পদ। এগুলো যারা নিয়েছেন, তারা যেন স্বউদ্যোগে সেগুলো লাইব্রেরিতে ফিরিয়ে দেন।'

একই দাবি জানান রাজনীতিবিদ শাহ মোহাম্মদ সেলিম। তার ভাষ্য, 'বীরচন্দ্র গণপাঠাগারের বইগুলো কেবল কুমিল্লার নয়, বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ।'

টাউন হল: ছবি: স্টার

এই পাঠাগারে প্রায় ২৪ হাজার বই রক্ষিত ছিল বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে লেখক ও গবেষক আহসানুল কবীর ডেইলি ষ্টারকে বলেন, 'এখানে শত বছরের পুরোনা বই আছে পাঁচ হাজারের বেশি। এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকার প্রথম সংখ্যা থেকে প্রায় সবকটি সংখ্যাই এখানে রক্ষিত ছিল। এখানে মহাকবি ফেরদৌসী রচিত শাহনামার প্রথম সংস্করণের কপি ছিল। ছিল আধি রাজমালার প্রথম সংস্করণের কপিও। ছিল পুঁথির সংগ্রহ।'

গণপাঠাগারের দুষ্প্রাপ্র বই ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি টাউন হলের ক্ষয়িষ্ণু মিলনায়নতটি সংস্কার ও এখানকার জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবিও এসেছে কুমিল্লার লেখক, শিল্পী, সাংস্কৃতিককর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে।

Comments

The Daily Star  | English
National election

Political parties must support the election drive

The election in February 2026 is among the most important challenges that we are going to face.

7h ago