জাহাঙ্গীর কবির নানকের মোহাম্মদপুরের বাসায় তল্লাশি
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের বাসায় তল্লাশি করেছে সেনাবাহিনী।
বুধবার সন্ধ্যায় ৭টার দিকে মোহাম্মদপুর এলাকার শ্যামলী রিং রোড সংলগ্ন টিক্কা পাড়ার হাজী চিনু মিয়া লেনের আটতলা ভবনের দোতলা ও তিনতলায় অভিযান শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীও উপস্থিত ছিলেন। তবে এক ঘণ্টা সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
সেখানে উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, অ্যাপার্টমেন্টটি তালাবদ্ধ বা সিল করার জন্য তারা পুলিশকে ফোন করেছেন কিন্তু পুলিশ রিসিভ করেনি। উৎসুক জনতা ভিড় করায় নিরাপত্তার স্বার্থে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেননি।
এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে দ্য ডেইলি স্টারের এই প্রতিবেদক রাত ১০টা থেকে পরবর্তী দেড় ঘণ্টায় মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পরিদর্শকের (তদন্ত) নম্বরে অন্তত ২০ বার ফোন করেন। তবে তারা কেউ রিসিভ করেননি।
পরবর্তীতে রাত পৌনে ১২টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আবারও ঘটনাস্থলে আসেন।
শিক্ষার্থীরা উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, সন্ধ্যার পর পর তল্লাশি শুরু হয়। আজ সকালে ও দুপুরে কয়েকটি গাড়িতে বস্তা থেকে শুরু করে অনেক কিছু নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা সন্দেহ করি কিছু থাকতে পারে। সে জন্য সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আমরা তল্লাশি শুরু করি।
তারা বলেন, তল্লাশি করে আগ্নেয়াস্ত্র বা টাকা-পয়সা পাওয়া যায়নি। ছিল কি না আমরা নিশ্চিত না। যেহেতু সকালে ও দুপুরে গাড়ি ভরে বস্তা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা অনেক বাড়ির দলিল পেয়েছি, যেগুলো অন্যের নামে। চাকরির ক্ষেত্রে তিনি এবং আওয়ামী লীগের লোকজন যে সুপারিশ করতেন, সেই প্রমাণ আমরা তার বাড়ি থেকে পেয়েছি। তার স্বাক্ষরের ভিত্তিতে অনেক চাকরি পরীক্ষার্থীর রেজাল্ট বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেই প্রমাণ আমরা পেয়েছি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের টাকা-পয়সা কোথায় থেকে আসতো, কোথায় যেত এবং কার কাছে কত টাকা যেত সেই লিস্ট ভেতরে পাওয়া গেছে।
বাসার ভেতরে টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) অনেক মালামাল পাওয়া গেছে, যেমন—চাল, ডাল, তেল। দুস্থদের ভেতরে যে কম্বল বিতরণ করা হয়, অনেক সংখ্যক সেই কম্বল পাওয়া গেছে। ত্রাণ সামগ্রী হিসেবে দেওয়া হয় যে বিস্কিট সেগুলোও অনেক পরিমাণে পাওয়া গেছে, যেগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ব্র্যান্ডের ঘড়ির খালি বক্স পাওয়া গেছে। দুএকটি ঘড়ি আমরা যেগুলো দেখেছি, প্রতিটিতে নৌকা প্রতীক ও আওয়ামী লীগের পতাকা এবং ভেতরে জয় বাংলা লেখা ছিল। অর্ডার দিয়ে বানিয়ে আনা হয়েছিল। প্রতিটি ঘড়ি মেয়েদের। প্রতিটি কাগজ আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখেছি, লকারে কিছু পাওয়া যায়নি। মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের কিছু ছবি পাওয়া গেছে বাসার ভেতরে, বলেন তারা।
ভবনের নিরাপত্তাকর্মী আনোয়ার হোসেন জানান, ধানমন্ডির একটি বাসায় থাকতেন নানক। মাঝে মাঝে মোহাম্মদপুরের এই অ্যাপার্টমেন্টে আসতেন। তবে গত ৫ আগস্টের পরে আর আসেননি।
তিনি আরও জনান, গত নির্বাচনের সময় ওই ফ্ল্যাটটি মোহাম্মদপুর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্প অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা যায়, অ্যাপার্টমেন্টের মেঝেতে কাগজপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
Comments