মিয়ানমারে বোমা বিস্ফোরণের শব্দে টেকনাফে অন্তত ২৫ ঘরে ফাটল

সীমান্তের ওপারেই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অব্যাহত হামলার প্রভাব পড়ছে এপারেও। টেকনাফের সীমান্তবর্তী আচারবুনিয়া গ্রামে এমন অন্তত ২৫টি ঘর দেখা গেছে, যেখানে বোমা বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট শব্দে ফাটল ধরেছে। ছবি: স্টার

সীমান্তের ওপারে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট ভূকম্পনের কারণে কক্সবাজারের টেকনাফের একটি গ্রামে অন্তত ২৫টি মাটির ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে দাবি করেছেন গ্রামবাসী।

সাবরাং ইউনিয়নের আচারবুনিয়া গ্রামটি নাফ নদীর তীরে অবস্থিত। নদীটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে বিভক্ত করেছে। সীমান্তবর্তী এই গ্রামের ঠিক ওপারে মংডু শহরে কয়েক মাস ধরে মিয়ানমার জান্তা সেনা ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে ভয়াবহ লড়াই চলছে।

শুক্রবার আচারবুনিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো মাটি ও ইট দিয়ে তৈরি এবং সেখানে বসবাস করেন নিম্ন আয়ের মানুষ। ঘরে ফাটল ধরায় সেখানে বসবাস করা তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অব্যাহত হামলার প্রভাব পড়ছে এপারেও। টেকনাফের সীমান্তবর্তী আচারবুনিয়া গ্রামে এমন অন্তত ২৫টি ঘর দেখা গেছে, যেখানে বোমা বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট শব্দে ফাটল ধরেছে। ছবি: স্টার

মিয়ানমারে চলা যুদ্ধের পরোক্ষ শিকার হওয়ায় গভীর হতাশা প্রকাশ করেন ওই গ্রামের মানুষ। তারা বলছেন, এখন ঘর মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত টাকাও তাদের নেই।

গ্রামের এক বাসিন্দা জাহেদ উল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান যখন সীমান্তের ওপারে বোমা বর্ষণ করে, তখন আমাদের বাড়িঘর এমনভাবে কেঁপে ওঠে, যেন ভূমিকম্প হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বোমা বিস্ফোরণের শব্দ এত প্রচণ্ড যে, আমাদের মাটির ঘরগুলো কেঁপে ওঠে। সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আমার এবং আমার ভাইয়ের ঘরে ফাটল ধরেছে।'

'গত তিন মাস ধরে একটু একটু করে ফাটল ধরতে ধরতে এখন আমাদের ঘরগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে,' যোগ করেন তিনি।

গ্রামের গৃহবধূ হামিদা খাতুন জানান, মিয়ানমারের দিক থেকে বোমা বিস্ফোরণে বাড়ির দেয়াল ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে।

তিনি বলেন, 'যখন প্রচণ্ড শব্দে বোমা বিস্ফোরিত হতে থাকে, তখন তো আমাদের বাচ্চারাও ভয়ে চিৎকার করে উঠে। টানা বিস্ফোরণের শব্দে আমরা প্রায় তিন মাস রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারিনি।'

'আমরা সবসময় ভয়ে থাকি। কোনো বোমা যদি ভুলবশত আমাদের এলাকায় এসে পড়ে, আমরা তো মুহূর্তের মধ্যেই মারা যাব,' যোগ করেন তিনি।

টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা সরকারি সহায়তা পাবেন।

বিস্ফোরণের ফলে যে আফটার শক হচ্ছে, তার ফলে এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি ধারনা করছেন।

শুক্রবার বিকেলে এই প্রতিবেদক যখন শাহপরীর দ্বীপ জেটি পরিদর্শনে যান, তখনও মিয়ানমারের একটি জঙ্গি বিমান মংডু শহরে বোমাবর্ষণ করছিল।

জঙ্গি বিমানটি বেশ কয়েকটি ড্রাইভ করে এবং মংডু শহরে প্রায় তিন-চারটি বোমা ফেলে ঘাঁটির দিকে চলে যায়।

শুক্রবার রাতে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হামিদ টেলিফোনে জানান, ওই রাতে হামলার তীব্রতা বেড়ে যায় এবং বিস্ফোরণের শব্দও শুনতে পেয়েছেন তারা।

তিনি বলেন, 'রাতে অবিরাম মর্টারশেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই আমরা।'

তার ভাষ্য, 'এখন অবশ্য এসব বিমান হামলা ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt issues ordinance amending Anti-Terrorism Act

Activities of certain entities, and activities supporting them can now be banned

39m ago