ভারতের ধর্মীয় উৎসবের দৃশ্যকে বাংলাদেশের মন্দিরে হামলা বলে প্রচার: ডিসমিসল্যাব

ছবি সৌজন্য: ডিসমিসল্যাব

বাংলাদেশের হিন্দু মন্দিরে হামলা দাবিতে একটি ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে আরটি ইন্ডিয়া নামের একটি ভেরিফাইড এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে। তবে যাচাইয়ে দেখা যায় ভিডিওটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার সুলতানপুর এলাকার একটি ধর্মীয় উৎসবের।

তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতে অপতথ্য ছড়ানোর চিত্র তুলে ধরে এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে।

ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, 'বাংলাদেশের হিন্দু মন্দিরে হামলা- ফুটেজে দাবি করা হচ্ছে দুষ্কৃতিকারীরা প্রতিমা ভাঙচুর এবং ধ্বংস করছে দুষ্কৃতিকারীরা'- এমন ক্যাপশনে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে আরটি ইন্ডিয়া নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে একটি প্রতিমার মাথা খুলে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভিডিওটি ২০০ বারেরও বেশি রিপোস্ট হয়েছে। একই ভিডিও একই দাবিতে পোস্ট করা হয় উইকলি ব্লিটজের সম্পাদক সালেহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরির এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে। তিনি ভিডিওটি পোস্ট করে লেখেন, বাংলাদেশে ইসলামপন্থীরা যখন হিন্দু মন্দিরে হামলা করছে, দেবতাদের প্রতিমা ভাংচুর করছে, তখন তাদের নেতারা ভারত থেকে আলু, মশলা, মসুর ডাল, ডিম ইত্যাদি প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী আমদানি করে প্রচুর নগদ অর্থ উপার্জন করছে।' এই ভিডিওটিও রিপোস্ট হয়েছে ৭৫০ বারেরও বেশি।

ডিসমিসল্যাব এই ভিডিওটির সূত্র যাচাই করতে গেলে সামনে আসে ২৯ নভেম্বর ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ভিডিও। ভিডিওটির ক্যাপশনে হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখা #সুলতানপুরকালীমাতানিরঞ্জন। এই ক্যাপশনের সূত্র ধরে জানা যায় এটি মূলত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার খন্ডকোষের সুলতানপুরের কালী প্রতিমা নিরঞ্জনের একটি দৃশ্য। এটি সুলতানপুরের একটি অভিনব আরাধনা উৎসব। প্রতি ১২ বছর অন্তর এখানে কালী প্রতিমা নিরঞ্জন (বিসর্জন) দেওয়া হয়। ১২ ফুট উচ্চতার কালী প্রতিমাটি একটু একটু করে ভেঙে পুকুরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এরপর নতুন প্রতিমা গড়া হয় এবং ১২ বছর পর বিসর্জন দেওয়া হয়। এই পূজার আরও দৃশ্য পাওয়া যায় সুলতানপুর কিরনময়ী পাঠাগার নামক একটি পেজ থেকে। এই পোস্টে যুক্ত প্রতিমার ভিডিওটির সঙ্গে আরটি ইন্ডিয়ার পোস্ট করা ভিডিওটির মিল আছে। অর্থাৎ, এটি কোন মন্দিরে হামলার ঘটনা না।

ছবি সৌজন্য: ডিসমিসল্যাব

আরেকটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে বাবা বেনারস নামক একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে। পোস্টের ক্যাপশন হলো, 'দেখুন গতকাল বাংলাদেশে কীভাবে হিন্দু মন্দির ভাঙচুর এবং হিন্দু ভক্তদের বিভিন্ন শহরে পেটানো হয়েছে। কিন্তু পুরো পৃথিবী বাংলাদেশের এই হিন্দু গণহত্যার বিষয়ে নীরব।' ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে কিছু লোক একটি স্থাপনা ভাঙচুর করছে।

ভিডিওটি যাচাই করতে গেলে দেখা যায় এটি গতকাল, ১ ডিসেম্বরের কোনো ঘটনা ছিল না। গত ২৯ আগস্ট সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল মনসুরনগর ইউনিয়নের বামনজানি বাজারের পাশে অবস্থিত আলী পাগলার মাজারে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এই মাজারে হামলার ঘটনায় একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দ্য মেট্রো টিভি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে। ভিডিওটির শিরোনাম ছিল, 'ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের আলী পাগলার মাজার।' এই ভিডিওটির সঙ্গে বাবা বেনারস নামের অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়। অর্থাৎ, এই ভিডিওটি হিন্দু মন্দিরে হামলার নয়।

বাবা বেনারস অ্যাকাউন্টটি থেকে এর আগেও একাধিক সাম্প্রদায়িক অপতথ্য প্রচারিত হয়েছে এবং তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। চলতি বছরের আগস্টে রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হতাহতের ঘটনাকে বাংলাদেশি হিন্দু আন্দোলনকারীদের উপর সেনাবাহিনীর হামলা বলে প্রচার করতে দেখা যায়। নভেম্বরে কোহিনুর আক্তার কৃষক লীগের নেত্রী আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে গিয়ে হামলার শিকার হলে বাবা বেনারস অ্যাকাউন্ট এই ঘটনার ভিডিও পোস্ট করে এটিকে হিন্দু নারী ধর্ষণের ঘটনা বলে প্রচার করে।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

4h ago