পঙ্গু হাসপাতাল: শয্যা খালি নেই, রোগীদের জায়গা হচ্ছে মেঝে-বারান্দায়

শয্যা সংকটে পঙ্গু হাসপাতালের মেঝেতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন দুর্ঘটনায় আহত বহু রোগী। ছবি: শাহীন মোল্লা

ভাঙা পা নিয়ে পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারের কাছে মেঝেতে জায়গা পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জের মুদি দোকানদার আহসান উল্লাহ। গত সোমবার রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আহত হন তিনি।

ঘটনার দিনই হাসপাতালে পৌঁছানোর পরও অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায় মেঝেতে আছেন ৭০ বছরের এই প্রবীণ। তার মেয়ে খাদিজা বেগম বলেন, দুর্ঘটনার পর সরাসরি আমরা এখানে এসেছি, কিন্তু হাসপাতালে বিছানা না পেয়ে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে।

পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) এ শয্যা আছে এক হাজার। সম্প্রতি ব্যাপকহারে হাসপাতালটিতে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। এতে করে হাসপাতালটির মেঝে ও বারান্দাগুলোও রোগীদের দিয়ে ভরে গেছে।

এর মধ্যে গত শনিবারই বিশেষায়িত এই হাসপাতালে চিকিৎসা রোগী ছিলেন ১ হাজার ১০০ এর বেশি। এর আগের দিন শুক্রবারও রোগী ছিলেন ১ হাজার ৬৯ জন। মূলত সড়ক দুর্ঘটনা ও বিভিন্নভাবে পড়ে গিয়ে আহত রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন।

গতকাল রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের কাছে বাসে চড়তে গিয়ে তার ডান পায়ের ওপর বাসের চাকা চলে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে জরুরি বিভাগের বাইরে অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

ছবি: শাহীন মোল্লা

শনিবার লক্ষ্মীপুরের সবজি বিক্রেতা ৫৫ বছর বয়সী বাবুল হোসেনকে পঙ্গু হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গত ১৮ ডিসেম্বর তার পা ভেঙে যায়। প্রায় এক সপ্তাহ পর ঢাকায় এই হাসপাতালে আসেন তিনি। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন থাকলেও শয্যা স্বল্পতার কারণে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে মেঝেতে আছেন তিনি।

তারা স্ত্রী সাজেদা বেগম বলেন, হাসপাতালের কর্মীদের কাছে সাহায্য চাইলে বলে উপায় নেই। এভাবে আর কত অপেক্ষা করা যায়, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

একইভাবে, দুর্ঘটনায় পড়ে গত ২৬ ডিসেম্বর কুর্মিটোলা বিহারী ক্যাম্পের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ নান্নুর বাম পায়ের হাড় ভেঙে যায়। তবে তার ভাগ্য কিছুটা ভালো। শুরুতে মেঝেতে জায়গা হলেও পায়ে রড ঢুকিয়ে অস্ত্রোপচারের পর শুক্রবার বিছানা পেয়েছেন তিনি। কিন্তু শয্যা সংকট থাকায় হাসপাতালের কর্মীরা তাকে বাড়িতে চলে যেতে বলছেন। প্রতি তিনদিন পর পর হাসপাতালে এসে ডাক্তার দেখানোর কথা বলছেন তারা।

হাসপাতালের একজন নার্স দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, হাসপাতালে যে হারে রোগী আসছেন তাতে পুরোনো রোগীদের দ্রুত ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তিনি বলেন, যাদের ১৫ দিন হাসপাতালে রাখা দরকার তাদেরকে সাত-আট দিন পরই বাড়িতে চলে যেতে বলা হচ্ছে। এছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই।

নিটোরের পরিচালক ডা. মো. আবুল কেনান শয্যা সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনার রোগীরা এই হাসপাতালে আসেন। সম্প্রতি এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। রোগীদের মেঝেতে রাখা উচিত কাজ না হলেও আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে যাতে কাউকে ফিরে যেতে না হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, 'প্রতি ১০ জন রোগীকে ছেড়ে দেওয়ার বিপরীতে ২০ জন নতুন রোগী আসে। অনেক রোগী কয়েক মাস ধরে থাকেন। এতে করে জরুরি পরিস্থিতির জন্য শয্যা খালি রাখা যায় না।'

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

4h ago