ঢাবি ক্যাম্পাস ‘উন্মুক্ত’ করার দাবি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষক নেটওয়ার্কের বৈঠক

শামসুজ্জামান শামস, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন,
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যান ও মানব চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া, ডাকসু ও শিক্ষক সমিতি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা এবং সিন্ডিকেট, সিনেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বিষয়সহ অন্যান্য যেকোনো সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্যরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্যরা সম্প্রতি ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া কিছু 'উদ্বেগজনক' ঘটনার ব্যাপারে উপাচার্যকে নিজেদের 'আশঙ্কার' কথা জানান এবং এর থেকে উত্তরণের পরামর্শ দেন।

আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বলা হয়, বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে তাদের দীর্ঘ 'গঠনমূলক ও ফলপ্রসু' আলোচনা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত করার আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেয়, যা জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মাধ্যমে জনমনে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিয়েছে।'

এতে উল্লেখ করা হয়, 'আমাদের মনে রাখা দরকার যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এক ঐতিহাসিক জনপরিসর। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা থাকার কারণে জাতীয় অনেক উদযাপনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক। ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানসহ প্রায় সব জাতীয় ও রাজনৈতিক আন্দোলন এখানেই শুরু হয়েছে।'

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, 'এছাড়া নানান সভা-সেমিনারসহ, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার প্রাণকেন্দ্রও এই বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাকৃতিক পরিবেশ হিসেবেও এই এলাকাটুকু পুরো শহরের নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা। আশপাশে গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিপণিকেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ অফিস কাছাকাছি হওয়ায় সিটি করপোরেশনের যে রাস্তাগুলো ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে চলে গেছে সেগুলোতে যান চলাচল ক্যাম্পাসের বাইরের নাগরিকদের অধিকার।'

এ কারণে জনদুর্ভোগ হ্রাস করে ঢাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসের জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করার উপায় নিয়ে বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

এছাড়া বৈঠকে রাতের আঁধারে মেট্রোরেলের পিলারে আঁকা জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতিজড়িত গ্রাফিতি মুছে ফেলার ঘটনার নিন্দা জানানো হয় বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। বলা হয়, 'এ ধরণের ঘটনা যেন আর না ঘটে সে বিষয়ে প্রশাসনকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়। প্রশাসন এ দায় স্বীকার করেছেন, দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে ৩১ ডিসেম্বর চারুকলার শিক্ষার্থীদের সাথে ঘটা অন্যায় পুলিশিং বিষয়ে প্রক্টোরিয়াল টিমের কর্মপরিধি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সকল শিক্ষার্থী সংগঠনের সঙ্গে পরামর্শ ও মত বিনিময়ের ওপর জোর দেওয়া হয় যেন পরবর্তীতে ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।'

সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে প্রক্টর অফিসকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার পরামর্শ দেওয়া হয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে।

শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলছে, বৈঠকে ইতিবাচক সমালোচনাকে প্রশাসন গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার প্রতিশ্রুতি দেন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়েমা হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম এবং প্রক্টর সাইফুদ্দিন ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, অধ্যাপক মারুফুল ইসলাম, অধ্যাপক কামাল আহমেদ চৌধুরী, তাসনীম সিরাজ মাহবুব, ড. রুশাদ ফরিদী, ড. মোশাহিদা সুলতানা, ড. কাজলী সেহরীন ইসলাম, দীপ্তি দত্ত, মারজিয়া রহমান এবং ড. সামিনা লুৎফা।

Comments

The Daily Star  | English
Unhealthy election controversy must be resolved

Unhealthy election controversy must be resolved

Just as the fundamental reforms are necessary for the country, so is an elected government.

9h ago