প্রচণ্ড শীতে ছিন্নমূল জনতার পাশাপাশি ভুগছে পশু-পাখিও

ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

জানুয়ারির শুরু থেকে রাজধানীতে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শহরের ছিন্নমূল জনতা, বিশেষ করে রাস্তায় রাত কাটানো গৃহহীনরা। স্বস্তিতে নেই শহরের পশু-পাখিরাও।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, কমলাপুর, গুলিস্তান, সদরঘাট, হাইকোর্ট ও মিরপুর-১ মাজার এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায়, শীতের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বেশ বেগ পাচ্ছেন ফুটপাতে রাতযাপন করা ছিন্নমূল জনতা।

ফার্মগেট অঞ্চলে আবর্জনা নিয়ন্ত্রণ ও টোকাইয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা গোলাম রাব্বি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুইদিন ধরে শীত ও বাতাসের প্রভাবে টিকতে পারছি না। রাতে কাঁপতে কাঁপতে কখনো দাঁতে দাঁত লেগে যাচ্ছে।'

২৪ বছর বয়সী রাব্বি গত আট বছর ধরে ফুটপাতে রাত যাপন করেন। তিনি জানান, সাধারণত আনন্দ সিনেমা হলের সামনে ঘুমানোর ব্যবস্থা করলেও শীতের প্রকোপে গত দুইদিন ধরে আশ্রয় নিয়েছেন মেট্রোরেলের নিচে।

হাইকোর্ট মাজার প্রাঙ্গণে একটি ভ্যানের উপর অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেওয়া এক নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই সন্তান নিয়ে তিনিও শীতের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বেগ পাচ্ছেন।

এক ও চার বছর বয়সী দুই সন্তানের মা জরিনা বেগম আরও বলেন, স্বামী চলে যাওয়ার পর গত দুই বছর ধরে কার্জন হল ও হাইকোর্ট অঞ্চলের ফুটপাত ও সেখানে থাকা ভ্যানগুলোতেই রাত যাপন করছেন।

ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করা এই নারী জানান, শীতবস্ত্র হিসেবে তাদের তিনজনের জন্য কেবল একটি কাঁথা ও একটি কম্বল রয়েছে।

ভিক্ষাবৃত্তি ও ফুটপাতে রাত যাপনের ওপর নির্ভর করা আরেক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয় বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে। নাম প্রকাশ করতে না চেয়ে তিনি জানান, শীতের বিরুদ্ধে তার একমাত্র সম্বল একটি কম্বল।

সেই কম্বল গায়ে দিয়েই কাঁপতে কাঁপতে ফুটপাতে বসে ছিলেন। জানালেন, কেউ সাহায্য বা শীতবস্ত্র দিয়ে যাবে, সেই অপেক্ষায় আছেন।

ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

পশু-পাখিদের কষ্ট

শীতে ভুগতে হচ্ছে শহরের পশু-পাখিদেরও। রাস্তায় থাকা বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়াল থেকে শুরু করে দোকানে থাকা মুরগিকেও শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে।

মিরপুরের পূর্ব শেওড়াপাড়ার পাকার মাথা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার এক বেওয়ারিশ কুকুরকে শার্ট পরিয়ে দিচ্ছেন এক যুবক।

জিজ্ঞেস করলে নাম প্রকাশ না করে সে যুবক বলেন, 'আমি কুকুর পালি না। কিন্তু এই কুকুরটা আমাদের বাসার সামনেই সবসময় ঘুরঘুর করে। একে কাঁপাকাঁপি করতে দেখে একটা শার্ট দিলাম।'

ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

পূর্ব শেওড়াপাড়ায় এক মুরগির দোকানে দুপুরবেলায়ও লাইট জ্বালিয়ে রাখতে দেখা যায়। দোকানদার মোহাম্মদ বশির জানান, মুরগির কথা চিন্তা করেই এই ব্যবস্থা।

কাঁপতে থাকা মুরগিগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, 'এই প্রচণ্ড বাতাস ও শীতে যে এরা কষ্ট পায়, তা বুঝি। কিন্তু মুরগিকে তো জামা-কাপড় পরানো যায় না। কিছু যেহেতু করার নেই, তাই লাইট জ্বালিয়ে রেখেছি। এতে অল্প তাপ আসে, সেটা পাক।'

Comments

The Daily Star  | English

Top criminal Subrata Bain held in secret Rab custody since 2022: commission

The Commission of Inquiry on Enforced Disappearances submitted the findings to the chief adviser yesterday

25m ago