চট্টগ্রাম

কলোনিতে ঢোকার মুখে ফটক নির্মাণের সিদ্ধান্ত এপিবিএনের, শঙ্কায় ১৪২ দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী পরিবার

স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘আন্ধাইয়ার কলোনি’র প্রবেশপথ। ছবি: স্টার

চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত একটি আবাসিক কলোনির প্রবেশপথে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন-৯) নিরাপত্তা ফটক স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। এতে নির্বিঘ্ন চলাচল বিঘ্ন হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন ১৪২টির মতো দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী পরিবার।

দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী পরিবারগুলোর সদস্যরা ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফরিদা খানমের কার্যালয়ে আবেদন করেছেন। আবেদনে কলোনির প্রবেশপথে ফটক নির্মানের বিপক্ষে তাদের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। 

জাতীয় দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী সংস্থা চট্টগ্রাম শাখার এই কলোনিটি বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার বিআরটিসি ট্রাক ডিপোর পেছনে অবস্থিত, স্থানীয়দের কাছে 'আন্ধাইয়ার কলোনি' নামে পরিচিত।

দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী সংস্থা চট্টগ্রাম জেলা ও জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, দৃষ্টি-প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনে জেলা প্রশাসন ওই কলোনি নির্মাণের জন্য প্রায় ৩০ কাঠা জমি ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিয়েছে। গত ৩৬ বছর ধরে সেখানে বাস করছেন দৃষ্টিহীন মানুষ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

কলোনির বেশিরভাগ বাসিন্দা ভিক্ষাবৃত্তি বা হালকা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দৃষ্টি-প্রতিবন্ধীদের পাশাপাশি শারীরিক প্রতিবন্ধী কয়েকজনের পরিবারও সেখানে বাস করেন। তাদের দৈনন্দিন চলাচলের জন্য ১০ ফুট প্রশস্ত ৪৭৬ ফুট লম্বা এই রাস্তাটিই একমাত্র ভরসা। মানবিক বিবেচনায় কলোনিতে গ্যাস ও ওয়াসার সংযোগও পেয়েছেন বাসিন্দারা।

দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী সংস্থার কলোনির বাইরে আলাদা জায়গায় এপিবিএন-৯ এর সদস্যদের কিছু আধা-পাকা ঘর রয়েছে এবং তারা এ রাস্তা ব্যবহার করেন। এপিবিএন-৯ এর সদস্যদের কনস্টেবল থেকে এএসআই পদমর্যাদার অনেকে সেখানে ভাড়া থাকছেন, যা স্থানীয়দের কাছে 'মাটি ভাড়া' হিসেবে পরিচিত।

এপিবিএন সদস্যদের ঘরগুলোর জায়গা এপিবএনের জমিতেই বলেন জানান 'আন্ধাইয়ার কলোনীর' বাসিন্দারা।

সাবেক চসিক মেয়র মনজুর আলমের মেয়াদকালে দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের চলাচলের সুবিধার্থে ওই রাস্তা পাকা করা হয়েছিল।

গত বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ১০ ফুট রাস্তা ধরে ঢুকতেই ডান পাশে এপিবিএনের 'লিমা-ব্যাট চেক পোস্ট' স্থাপনা। চেকপোস্ট পেরিয়ে একটু সামনে হাতের ডান পাশ থেকেই শুরু এপিবিএনের সদস্যদের ঘর।

কিছু দূর হাঁটার পর দেখা গেল রাস্তায় ময়লা পানি জমে আছে। রাস্তায় বালু কিংবা খোয়াভর্তি বস্তা ফেলে চলাচল করছেন অন্ধ ও প্রতিবন্ধী লোকজন। রাস্তার একেবারে শেষ মাথায় এ কলোনির অবস্থান।

সেখানে গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখা গেলো দ্বিতল একটি মসজিদের কাজ চলছে। লোকজন সেমিপাকা ও টিনসেড ঘরে বসবাস করেন। কয়েকটি এনজিওর পোস্টার দেখা গেছে সেখানে। কলোনিটি তিন দিক দিয়ে বিভিন্ন কারখানা দিয়ে ঘেরা।

দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী সংস্থা চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক মো. আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি চোখে দেখি না। সাত বছর বয়স থেকে এখানে বসবাস করি। ৯৯ বছরের জন্য প্রশাসন আমাদের সংগঠনের পক্ষে লিজ দিয়েছে। আমরা যারা দৃষ্টি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী তারা এখানে বাস করি।'

তিনি বলেন, 'আগে এখানে রাস্তা ছিল না। আমাদের অবস্থা দেখে সাবেক মেয়র রাস্তাটি করে দিয়েছেন। আমাদের সামনে যারা এপিবিএনের সদস্যরা বসবাস করে তাদের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক। ১০-১৫ বছর ধরে এখানে তারা ঘর তুলে থাকছেন। তাদের নালার পানি আমাদের রাস্তায় এসে জমা হয়। আমাদের কষ্ট হলেও মেনে নিয়েছি।

আলম আরও বলেন, 'এখন তারা আমাদের চলাচলের একমাত্র সড়কে গেট বসিয়ে নিরাপত্তার নামে আমাদের চলাচল সীমিত করতে চাচ্ছেন। তারা আমাদের বলছেন যে গেট বসিয়ে আমাদের কার্ড করে দেবেন।'

মো. আলম আরও বলেন, 'রাস্তার জায়গাটি উন্মুক্ত। তারা নিজেদের জায়গায় রাস্তার পাশ দিয়ে দেয়াল তুলে তাদের স্থাপনার নিরাপত্তা দিক। তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা চাই রাস্তা বন্ধ করে কোনো গেট বা অন্য কিছু যেন না হয়।'

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম 'অন্ধ ও বিকলাঙ্গ কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি'র সাধারণ সম্পাদক এবং ওই কলোনির বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর বলেন, 'কিছুদিন আগে এপিবিএনের অধিনায়ক আমাদের কয়েকজন ডেকে নিয়ে গেছেন। বলছেন যেভাবেই হোক গেট হবে, কেউ আটকাতে পারবে না। আমাদের লোকজন ভিক্ষাবৃত্তি করে খায়। একেক জন একেক কাজ করেন, একেক সময় বাসায় ফেরেন। একটা কার্ড দিয়ে কতজন চলতে পারবে। ছোট একটা পকেট গেটে আমাদের চলাচল সীমিত হয়ে যাবে।'

এ বিষয়ে জানতে এপিবিএন-৯ এর অধিনায়ক (সিও) মো. শামসুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। পরে কথা বলব।'

এরপর তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

Comments

The Daily Star  | English

Aid allocation to be trimmed in next budget

The plan comes as $42.85b foreign funds remained unused at start of current FY

14h ago