বরিশালে টিসিবির ৬০ হাজার কার্ড বাতিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

টিসিবি কার্ড বাতিলের প্রতিবাদে বরিশাল সিটির মানিক মিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ। ছবি: টিটু দাস/স্টার

বরিশালে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ড বঞ্চিতরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে। 

আজ মঙ্গলবার সকালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মানিক মিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে টিসিবি কার্ড বাতিলের প্রতিবাদ জানায় তারা। 

বিক্ষোভে ২ নম্বর ওয়ার্ডের স্বল্প আয়ের মানুষ, শারীরিক প্রতিবন্ধীসহ প্রায় ৫০০ মানুষ অংশ নেয়।

অসহায় পরিবারের সদস্যদের নাম টিসিবি ফ্যামিলি কার্ডের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তারা। 

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আসমা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তার স্বামী দিনমজুর। দুই সন্তান রয়েছে। পরিবারে আর কারও আয় নেই।

তিনি বলেন, 'এতদিন টিসিবি কার্ডের সুবিধা পেলেও, এখন হঠাৎ করে বাতিল করা হয়েছে। আমরা দিন আনি দিন খাই। আমাদের কার্ড কেন বাতিল করা হলো?'

নিম্ন আয়ের জনগণের জন্য বরাদ্দ টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর সময় বিতরণ হওয়া ৯০ হাজার কার্ডের মধ্যে ৬০ হাজারই বাতিল করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। 

সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে, নিয়ম ভেঙে ও এক পরিবারে একাধিক টিসিবি কার্ড গ্রহণের মতো অভিযোগে এসব কার্ড বাতিল হয়েছে। 

নগরীর কাউনিয়া মেইন রোডের বাসিন্দা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী নজরুল ইসলাম বলেন, 'একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও আমি টিসিবির কার্ড পাইনি। তাহলে কারা এগুলো পেয়েছে?'

নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের ক্লাব রোডের বাসিন্দা মো. হালিম বলেন, 'মাছ বিক্রি করে কোনোরকম জীবনযাপন করি। টিসিবির কার্ড বাতিল হওয়ায় এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছি।'

একই ওয়ার্ডের ক্লাব রোডের আরেক বাসিন্দা রঙ্গিনি হাওলাদার বলেন, 'আমার পরিবারের সব সদস্য মারা গেছে। কোন আয় ইনকাম নেই, একটি ঝুপড়ি ঘরে অন্যের জায়গায় থাকি।আমার কার্ড বাতিল হয়ে গেছে।' 

যোগাযোগ করা হলে ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মর্তুজা আবেদিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনেকের বাড়িতেই একাধিক কার্ড এসেছে। আবার সাবেক এক কাউন্সিলরের নিজের নামেও কার্ড এসেছে। যারা কার্ড পাওয়ার তারা পাচ্ছে না, অন্যদিকে যাদের বাড়িঘর রয়েছে তারা একাধিক কার্ড পাচ্ছে, এই সমস্যা নিরসন হওয়া দরকার।'

এই ওয়ার্ডের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কাউন্সিলর মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, 'আগে এই ওয়ার্ডে ৩ হাজার ৮৬৩ জনের টিসিবি কার্ড ছিল। এর মধ্যে ১২০০ কার্ড তারা পেয়েছেন। কেন এসব কার্ড বাতিল হয়েছে, সেটা টিসিবি বলতে পারবে, আমাদের দায়িত্ব শুধু বিতরণ করা।'

জানতে চাইলে টিসিবি বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শতদল মন্ডল বলেন, 'সফটওয়্যারে ঢাকায় যাচাই-বাছাই করে কার্ড বাদ হয়েছে। যাদের পরিবারের একাধিক সদস্য কার্ড পেয়েছিল, তাদেরটি সাধারণভাবেই  বাতিল হয়েছে। এছাড়া তথ্য অসম্পূর্ণ ও ভুল থাকায় বাতিল হয়েছে। এর বাইরে কোনো অভিযোগ রয়েছে কিনা, সেটা দেখতে হবে।'

বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. রায়হান কাওসার বলেন, 'এক কোটি কার্ডের মধ্যে ৫৭ লাখ কার্ড বাতিল হয়েছে, এর মধ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৯০ হাজার কার্ডের মধ্যে, মাত্র ৩১ হাজার টিসিবি কার্ড আমরা পেয়েছি। আরও প্রায় ৫ হাজার কার্ড আসার অপেক্ষায় আছে।'

তিনি বলেন, 'আমরা নিজ উদ্যোগে কোনো কার্ড বাতিল করিনি। টিসিবি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সফটওয়্যারে যাচাইকালে যেসব পরিবারের একাধিক সদস্য পাওয়া গেছে সেগুলোর মধ্যে একটি রেখে বাকিগুলো বাতিল করেছে। এছাড়া অনেক তথ্য অসম্পূর্ণ বা ভুল থাকায় সেগুলো বাতিল হয়েছে।'

'এর বাইরে শুধু মোবাইল নম্বর যথাযথ না থাকায় অনেক কার্ড, উপকারভোগীর বদলে অন্য কারও নামে চলে এসেছে বলে আমরা শুনেছি। এসব ক্ষেত্রে সংশোধন করা হবে। তবে স্মার্ট কার্ড এখন পর্যন্ত অ্যাক্টিভেট হয়নি। যাচাই-বাছাই করে অ্যাক্টিভেট করা হবে। আর যাদের বাতিল হয়েছে, তাদের যৌক্তিক অভিযোগ থাকলে সেগুলো দেখা হবে,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Not satisfied at all, Fakhrul says after meeting Yunus

Not satisfied at all, Fakhrul says after meeting Yunus

"The chief adviser said he wants to hold the election between December and June"

1h ago