খুলনার নারীদের বৈচিত্র্যময় গ্রামীণ বীজমেলা

বীজমেলা
ছবি: স্টার

কালের বিবর্তনে এবং বর্তমান বাস্তবতায় দেশীয় বীজ হারিয়ে যাচ্ছে। বহুজাতিক কোম্পানি এবং হাইব্রিড জাতের ওপর বাড়ছে নির্ভরতা।

হারিয়ে যাওয়া দেশীয় জাতের বীজ সংরক্ষণ, বিনিময় ও প্রদর্শনের লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার খুলনার বটিয়াঘাটার বৃত্তিশলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয় 'গ্রামীণ বীজমেলা' । স্থানীয় মৈত্রী কৃষক ফেডারেশন এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লোকজের আয়োজনে এ মেলায় শতাধিক নারী কৃষক তাদের নিজস্বভাবে সংরক্ষিত বীজ নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। মেলার প্রতিটি স্টলে ৫০ থেকে ৪০০ জাত ও প্রজাতির ফলজ, বনজ ও সবজির স্থানীয় বীজ প্রদর্শিত হয়।

আয়োজকরা বলছেন, গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতিতে নারীর যে ব্যাপক উপস্থিতি এবং তারা যে সরাসরি কৃষিতে অংশ নেন, বিশেষ করে স্থানীয় বীজ সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখেন সেটাকে আরও পরিকল্পিত উপায়ে, সামগ্রিকভাবে এবং অঞ্চলভিত্তিক বৈশিষ্ট্য রেখেই তাদেরকে মূলত উদ্বুদ্ধ করা হয় কীভাবে বীজ সংরক্ষণ করা যেতে পারে। মেলার লক্ষ্য, এই লবণাক্ত অঞ্চলের পরিবেশ-প্রতিবেশ উপযোগী বিভিন্ন প্রকারের দেশীয় প্রজাতির বীজ সংরক্ষণ করা ও বিনিময় করা।

তাছাড়া বীজমেলায় নারীরা তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ পান, যা স্থানীয় কৃষির টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কৃষকের মালিকানায় কৃষিকে এগিয়ে নিতে হলে দেশীয় বীজ সংরক্ষণ ও বিস্তার বাড়াতে হবে ।

মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল নারীদের সংরক্ষিত বীজের প্রদর্শনী। বীজের সংখ্যা, বৈচিত্র্য, মান ও উপস্থাপন কৌশলের ওপর ভিত্তি করে একটি নির্বাচনী প্যানেল বিজয়ীদের নির্বাচিত করে। এ বছর প্রথম স্থান অর্জন করেন সুকদাড়া গ্রামের করুণা মণ্ডল, দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন নমিতা সরকার এবং তৃতীয় হন ঝড়ভাঙ্গা গ্রামের লক্ষ্মী রানী মণ্ডল। মেলায় অংশগ্রহণকারী সব নারী কৃষকদেরও পুরস্কৃত করা হয়। মেলায় স্থানীয় ১৬টি গ্রামের নারী কৃষকরা ব্যতিক্রমধর্মী এই বীজ মেলায় তাদের সংগৃহীত ও সংরক্ষিত বীজ প্রদর্শন ও বিনিময় করেছেন।

এ অঞ্চলের নারীরা বংশ পরস্পরায় বীজ সংরক্ষণ করে আসছেন। আর গত ১২ বছর ধরে নিয়মিতভাবে বীজ সংরক্ষণ ও মেলায় অংশ নিচ্ছেন। তারা শুধু বীজ সংরক্ষণই করেন না, তার গুণগত মান, উৎপাদন পদ্ধতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর সক্ষমতা নিয়েও আলোচনা করেন।

এ বছর প্রথম স্থান অর্জনকারী সুকদাড়া গ্রামের করুণা মণ্ডল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই ধরনের বীজমেলা কেবল বীজ সংরক্ষণে সহায়ক নয়, আমাদের আর্থিক ও সামাজিকভাবে স্বনির্ভর করে তুলতে সাহায্য করছে।'

করুণা মন্ডল প্রায় আড়াই শতাধিক দেশীয় বিভিন্ন প্রকারের বীজ সংগ্রহে রেখেছেন।

বীজ সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে লোকজের সমন্বয়কারী পলাশ দাস বলেন, 'দেশীয় বীজ সংরক্ষণ শুধু আমাদের কৃষি ঐতিহ্য রক্ষাই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাইব্রিড বীজগুলো খরাপ্রবণতা, আকস্মিক বৃষ্টিপাত বা তাপমাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না। কিন্তু স্থানীয় জাতের বীজ শত শত বছর ধরে অভিযোজন ক্ষমতা অর্জন করেছে, যা প্রতিকূল আবহাওয়াতেও টিকে থাকতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'বিরুদ্ধ পরিবেশে হাইব্রিড প্রজাতির বীজ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় যে ঠিকমতো সক্ষম না, তা এই অঞ্চলের নারীরা বুঝেই  নিজেরা বীজ সংরক্ষণ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। যদি হঠাৎ করে বৃষ্টি হয় বা ঝড় হয় বা হঠাৎ করে ঠান্ডা পড়ে তাহলে এই হাইব্রিড প্রজাতির বীজ বা চারা নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে না। কিন্তু স্থানীয় প্রজাতির বীজের এডাপটেশন ক্যাপাসিটি আছে, শত শত বছর ধরে তার এই এডাপটেশন কোয়ালিটি তৈরি হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
NSC shop rent scam in Dhaka stadiums

Shop rent Tk 3 lakh, but govt gets just Tk 22,000

A probe has found massive irregularities in the rental of shops at nine markets of the National Sports Council (NSC), including a case where the government receives as little as Tk 22,000 in monthly rent while as much as Tk 3 lakh is being collected from the tenant. 

19h ago