নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে গেলে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে: রয়টার্সকে বিএনপি

ছবি: রয়টার্স
  • অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।
  • বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান জানিয়েছেন, বিএনপির জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই।
  • অভ্যন্তরীণ জরিপ চালিয়ে বিএনপি দেখেছে, তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়ী হবে।

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন না হলে 'জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ' এবং দেশে অস্থিরতা তৈরি হবে বলে সতর্ক করেছে বিএনপি।

নির্বাচন পিছিয়ে ২০২৬ সালে যেতে পারে—বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই সতর্কবার্তা দিয়েছে দলটি।

শিক্ষার্থীদের রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভের মুখে ভারতের দীর্ঘ দিনের মিত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নেন। এরপর গত বছরের আগস্ট থেকে শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দক্ষিণ এশিয়ার ১৭ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার দেশটি পরিচালিত হচ্ছে।

দেশের বৃহত্তম দুই দল—শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ বছরের শেষে নির্বাচন চায়। তবে গত মঙ্গলবার ড. ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।

তিনি বলেন, এতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজের সময় পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো এবং পশ্চিমা কিছু দেশ অভিযোগ করে আসছিল, হাসিনার সরকার থাকাকালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে ব্যাপক কারচুপি হয়েছিল; যদিও শেখ হাসিনা সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য ও ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম মার্চ মাসের শুরুতে বলেছিলেন, 'বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিশিং ব্যবস্থায় আমি মনে করি না একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে।'

কিন্তু বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য এবং সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল মঈন খান বলেছেন, চলতি বছরের মধ্যেই গণতন্ত্রে ফিরতে চায় বিএনপি।

গত শনিবার রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারকে ইঙ্গিত করে মঈন খান বলেন, 'আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করব যে, তাদের জন্য সর্বোত্তম হলো যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেওয়া এবং সম্মানজনকভাবে বিদায় নেওয়া।'

বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থানরত মঈন খান আরও বলেন, 'ডিসেম্বরে নির্বাচনের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। নির্বাচন ডিসেম্বরে না হয়ে আরও পরে হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।'

'বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হবে। এর অর্থ কিছু অস্থিরতা হতে পারে...সময়ই বলে দেবে।'

বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে মঈন খানই প্রথম এ (চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচন না হলে তার পরিণতি) ব্যাপারে মুখ খুললেন।

জোটে যাবে না বিএনপি

শেখ হাসিনা ও তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, অথবা আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে আওয়ামী লীগ অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বাধীন তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি। ছাত্রনেতাদের ভাষ্য, বাংলাদেশের মানুষ দুটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের ওপর বিরক্ত, তারা পরিবর্তন চান।

কিন্তু মঈন খানের বলেছেন, বিএনপির জরিপে উঠে এসেছে, আগামী বছরের মধ্যে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে সহজেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিএনপি জয়ী হবে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঢাকায় ফিরতে পারেন।

সম্প্রতি তারেক রহমান ও তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতের বেশ কিছু রায় পাল্টে গেছে। এতে তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথ সুগম হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস ও হৃদরোগে ভুগছেন। গত জানুয়ারি থেকে তিনি লন্ডনে চিকিৎসাধীন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকের পর মঈন খান বলেন, 'তিনি বাংলাদেশে যেমন ছিলেন, তার চেয়ে এখন অনেকটা ভালো আছেন'। তবে সক্রিয়ভাবে তার রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা কম।

তিনি জানান, জোটবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা বিএনপির নেই। তবে নির্বাচিত হলে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ অন্যান্য দলকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চায়।

'নির্বাচনের পরে গণতন্ত্রের পক্ষে থাকা সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করা গেলে আমরা খুশি হবো,' বলেন তিনি।

Comments