মারমা-ম্রো নববর্ষ উৎসব ‘সাংগ্রাই পোয়ে’

ছবি: সংগৃহীত

বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও বয়োজ্যেষ্ঠ পূজার মধ্য দিয়ে বান্দরবানে মারমা ও ম্রো সম্প্রদায়ের নববর্ষ উৎসব 'সাংগ্রাই পোয়ে' ও 'চাংক্রান পোয়ে' শুরু হয়েছে।

আজ রোববার সকালে জেলার ঐতিহ্যবাহী বোমাং রাজার মাঠে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিমি। এরপর শুরু হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা।

রঙ-বেরঙের ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, মুখোশ ও মোটিফ হাতে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিহিত নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী মানুষ শোভাযাত্রায় অংশ নেন। নাচ-গান ও উল্লাসে মুখরিত হয়ে ওঠে বান্দরবানের রাজপথ। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে শেষ হয়।

ছবি: সংগৃহীত

শোভাযাত্রায় মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র বুং (ছোট ঢোল), পাই (বড় ঢোল), হ্ন্যেহ্ (বিশেষ বাঁশি) এবং ম্রো সম্প্রদায়ের বাঁশের বাঁশি 'প্লুং' বাজিয়ে উৎসবের আনন্দের আমেজ বহুগুণ ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

ইনস্টিটিউটের হলরুমে পরে আয়োজিত হয় বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা। এবারের সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন পরিষদের ব্যবস্থাপনায় এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

মারমা, ম্রো, খেয়াং ও চাক সম্প্রদায়ের মানুষ মিয়ানমারের সৌর বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী এ উৎসব পালন করে থাকে। একই সময়ে বাংলা নববর্ষ ও সাংগ্রাই একযোগে উদযাপিত হওয়ায় দুই সংস্কৃতির মধ্যে এক অনন্য ঐক্য খুঁজে পান অনেকেই।

মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাই উৎসব এবং বাঙালি সংস্কৃতির বাংলা নববর্ষ দুটোই নতুন বছরের সূচনায় প্রাচীন উৎসব। উৎসব দুটি ভিন্ন ভৌগোলিক, ধর্মীয় ও জাতিগত প্রেক্ষাপটে পালিত হলেও কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতি ও সামাজিক ঐতিহ্যের ভিত্তিতে এগুলোর রয়েছে ঐতিহাসিক সংযোগ।

বান্দরবানে শুরু হওয়া এই উৎসব চলবে ১৪ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত। এর মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী মৈত্রী পানি বর্ষণ, পিঠা উৎসব, বলি খেলাসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

জেলার প্রতিটি উপজেলায় মারমা, ম্রো, চাক, খেয়াংসহ প্রায় ১০টি সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতিটি গ্রামে পালন করবেন 'সাংগ্রাই' উৎসব। শুধু নববর্ষ উদযাপন নয়, বরং মারমা, ম্রোসহ সব জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সামাজিক বন্ধনের অনন্য প্রকাশ এই উৎসব।

ছবি: সংগৃহীত

সাংগ্রাই উৎসব মূলত থেরবাদী বৌদ্ধদের নববর্ষ উৎসব। এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো—যেমন: মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া এবং আরাকান ও চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের মারমা, রাখাইন, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, ম্রো, ত্রিপুরাসহ প্রায় ১১টি জনগোষ্ঠীতে পালিত হয়।

মিয়ানমারে এই উৎসব 'থিংইয়ান' নামে পরিচিত, যা পালিত হয়ে আসছে প্যাগান সাম্রাজ্য (৯ম–১৩শ শতাব্দী) থেকে। এমনকি তারও আগে আরাকান রাজ্যেও এর চর্চা ছিল।

Comments

The Daily Star  | English

Public service recruitment: Govt to scrap political vetting

The practice of vetting a candidate’s political affiliation through intelligence agencies before recruitment and promotion in public service is set to be scrapped following the recommendation of the Public Administration Reform Commission.

15h ago