এখনো ন্যায্য মজুরি পান না নারী কৃষি শ্রমিকরা

সবজিখেতে কাজ করছেন এক নারী শ্রমিক। ছবি: এস দিলীপ রায়

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কর্ণপুর গ্রামের ৫৬ বছর বয়সী আকলিমা বেগম গত ১৫ বছর ধরে কৃষি শ্রমিকের কাজ করছেন। একা এবং অন্য নারী-পুরুষ শ্রমিকদের দলে কাজ করলেও তিনি কখনও ন্যায্য মজুরি পাননি। এটি তার জীবনের বড় দুঃখ। জীবিকার তাগিদে কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হলেও ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি তাকে পীড়া দেয়।

আকলিমা বেগম ডেইলি স্টারকে জানান, নারী কৃষি শ্রমিকরা পুরুষ শ্রমিকের মতোই কঠোর পরিশ্রম করেন। একই সময়ে মাঠে আসেন এবং কাজ শেষ করে ফেরেনও একই সময়ে। অথচ মজুরি পান পুরুষ শ্রমিকের প্রায় অর্ধেক। একজন পুরুষ শ্রমিক যখন ৫০০ টাকা পান, নারী হওয়ায় তিনি পান মাত্র ২৫০ টাকা।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী গ্রামের নারী কৃষি শ্রমিক ললিতা রানী (৪৮) একই কথা বলেন। তিনি পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করলেও অর্ধেক মজুরি পান। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ললিতা বলেন, 'আমরা কখনই পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে কম কাজ করি না।'

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর এলাকার নারী কৃষি শ্রমিক সুলতানা খাতুন (৫০) জানান, কম মজুরিতে কাজ না করলে তারা কাজই পান না। গ্রামে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ায় খেত মালিকরা এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। তিনি নিশ্চিত করেন, নারী শ্রমিকরা মাঠে সব ধরনের কাজই করেন।

এই গ্রামের পুরুষ কৃষি শ্রমিক সিরাজুল ইসলাম (৫৫) ডেইলি স্টারকে জানান, নারী শ্রমিকরা পুরুষ শ্রমিকদের মতোই সমান কাজ করেন কিন্তু কম মজুরি পান। স্বল্প মজুরিতে পাওয়া যাওয়ায় খেত মালিকরা এখন পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে নারী শ্রমিকদের নিয়োগ দিতে বেশি আগ্রহী। তিনি বলেন, 'আমরা এখন ৪৫০-৫০০ টাকা মজুরি পাচ্ছি। নারী শ্রমিকরা অর্ধেক মজুরি পান। কোন কোন এলাকায় হয়তো একটু বেশি দেওয়া হয়।'

অন্যদিকে, লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট গ্রামের খেত মালিক সেকেন্দার আলী (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, নারী শ্রমিকরা পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে কম কাজ করতে পারেন এবং একটু দেরি করে মাঠে আসেন। একারণেই তাদের মজুরি কম দেওয়া হয়। তিনি আরও যোগ করেন, 'বর্তমানে নারী শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি। প্রতিদিন অনেক নারী শ্রমিক কাজ সংগ্রহ করতে পারেন না।'

নারী কৃষি শ্রমিকদের এই মজুরি বৈষম্যের কারণ হিসেবে লালমনিরহাট জেলা সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির ডেইলি স্টারকে জানান, নারী কৃষি শ্রমিকদের কোনো সংগঠন নেই এবং অনেকে সাময়িক সময়ের জন্য কাজ করায় তারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারছেন না। তিনি বলেন, তাদের সংগঠনভুক্ত করতে এবং ন্যায্য মজুরির জন্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে তারা কাজ করছেন।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, নারী কৃষি শ্রমিকের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন হলেও সাম্প্রতিক সময়ে এদের সংখ্যা বাড়ছে এবং কৃষিতে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তিনি স্বীকার করেন, এলাকাভেদে নারী কৃষি শ্রমিকদের মজুরি কম-বেশি হয়ে থাকে।

Comments

The Daily Star  | English

Foreign observers who endorsed past three polls won’t be allowed: CEC

Experienced and reliable observers will be permitted to monitor the upcoming national election, he says

1h ago