‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রতি ঘৃণা উসকে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’

গত ১৯ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হকের নেতৃত্ব কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন | ছবি: প্রেস উইং

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিকে 'চক্রান্ত' উল্লেখ করে এই কমিশনের প্রতি যারা ঘৃণা উসকে দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ২৩ জন নারী অধিকারকর্মী।

আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারা এ আহ্বান জানান।

এতে বলা হয়, 'নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন নারীবান্ধব প্রস্তাব পেশ করবে সেটিই প্রত্যাশা এবং সেটিই উচিত। একটি কমিশনের সব প্রস্তাব সবার কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য হবে—এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। যার যার যেসব প্রস্তাবে আপত্তি আছে, সেসব প্রস্তাব নিয়ে তর্ক-বিতর্ক দেশের গণতন্ত্রায়নের জন্য জরুরিও বটে।'

বিবৃতিতে তারা বলেন, 'আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, শুধু নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয় এলেই একদল যেন দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে কি তাদের খুব অসুবিধা হবে? তারা কি এই সমাজের বাইরে? যুক্তি-তর্কের বালাই না রেখে তারা পুরো কমিশন বাতিল করতে চায়। এই হীন চক্রান্ত কেন?'

'আমরা মনে করি, তারা নারীকে হেয় প্রতিপন্ন করে, নারীর প্রতি যে আজন্ম ঘৃণা, হিংস্রতা ও নিপীড়নের মনোভাব লালন করে, সেটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তাদের বক্তব্যে। নারীদের নোংরাভাবে উপস্থাপন করে তারা নিজেদের ব্যক্তিগত চিন্তা, চেতনা ও রাজনৈতিক সংকীর্ণতাও প্রকাশ করছে। এরা নারীর প্রতি এই অসম্মান নিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনার স্বপ্নও দেখে,' যোগ করা হয় বিবৃতিতে।

এতে আরও বলা হয়, 'দেশের ৫১ শতাংশ নারীকে বাদ দিয়ে অথবা পদদলিত করে সরকার গঠনের দিবাস্বপ্ন কতটা অমূলক সেটি বোঝার বোধবুদ্ধি পর্যন্ত তারা হারিয়েছে। আসলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য যে প্রজ্ঞা, ঔদার্য, সহনশীলতা, জ্ঞান, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা জরুরি; তাদের সবার মধ্যেই এসব অনুপস্থিত।'

বিবৃতিদাতারা বলছেন, 'নারী কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে কোথায়, কেন তাদের আপত্তি সেটি নিয়ে তারা কথা বলতে পারেন। রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণ করা কোনো ছেলের হাতের মোয়া নয় যে, কেউ অন্যায়ভাবে হুংকার দেবে, আর ভয় পেয়ে পুরো কমিশন বাদ দিয়ে দিতে হবে।'

'নারী কমিশনের প্রত্যেক সদস্য দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সাধারণ নারীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের নারী সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় নারীদের অশালীন বাক্যে গালমন্দ করা আমরা কিছুতেই মেনে নেব না। তাদের বক্তব্য দেশের সংবিধান এবং প্রচলিত আইন-কানুনকে নানাভাবে ভঙ্গ করছে,' বলা হয় বিবৃতিতে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দুটি দাবি উপস্থাপন করেছেন বিবৃতিদাতারা। সেগুলো হলো—দণ্ডবিধি ও সংবিধান লঙ্ঘনের সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় ঘৃণা ও হুমকি উসকে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং চরমপন্থী হুমকির মুখেও নারীর অধিকার সংশোধন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে, এই মর্মে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জনসমক্ষে পুনর্ব্যক্ত করা।

বিবৃতিতে সই করেছেন: পরিবেশ আন্দোলনকারী ও সাংস্কৃতিককর্মী সৈয়দা রতনা, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন সংগঠক সুলতানা বেগম, মানবাধিকার আইনজীবি ও অধিকারকর্মী ইশরাত জাহান প্রাচী, থিয়েটারকর্মী নাজিফা তাসনিম খানম তিশা, শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী লায়েকা বশীর, নৃবিজ্ঞানী ড. নাসরিন সিরাজ, মানবাধিকার আইনজীবী ও অধিকারকর্মী ব্যারিস্টার তাবাসসুম মেহেনাজ, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী হানা শামস আহমেদ, নৃবিজ্ঞানী নাসরিন খন্দকার, আলোকচিত্রী জান্নাতুল মাওয়া, উন্নয়নকর্মী আদিবা রাইসা, গবেষক ও শিক্ষক কাব্য কৃত্তিকা, ইন্ডিপেনডেন্ট কন্ট্রাক্টর সৈয়দা নূর-ই-রায়হান, গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট অরুণিমা তাহসিন, অ্যাক্টিভিস্ট ও উন্নয়নকর্মী আমিনা সুলতানা সোনিয়া, আর্টিস্ট তারান্নুম নিবিড়, অধিকারকর্মী উযমা তাজ্বরিয়ান, ব্যারিস্টার নুসরাত মেরাজী, নারীবাদী সংগঠক ও ফিউচারিস্ট তৃষিয়া নাশতারান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা এবং সংগীতশিল্পী রজানা ওয়াহিদ।

Comments

The Daily Star  | English

July frontliners dominate the Ducsu race

So far, nine panels have been announced for the 28 Ducsu posts.

10h ago