বৃষ্টির মধ্যেই রাস্তা ঢালাই, কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন

বৃষ্টির মধ্যেই চলছে সড়ক ঢালাইয়ের কাজ। ছবি: স্টার

বর্ষাকালের প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে বান্দরবানে শহরের প্রধান দুটি সড়কে সংযোগ সড়কের জেএসএস গলিতে চলছে ঢালাই কাজ। গলির সড়কটির একপ্রান্তে জেলার সরকারি গার্লস হাইস্কুল, অপর প্রান্তে ট্রাফিক মোড় ও উজানী পাড়ার সড়ক। ভারী বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই কাজ করায় গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিনদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে বান্দরবানে। বৃষ্টির কারণে সড়কে পানি জমে থাকলেও শ্রমিকরা ভেজা অবস্থায় সিমেন্ট-বালু-কংক্রিটের ঢালাই চালিয়ে যাচ্ছেন। 

বান্দরবান পৌরসভার তথ্য বলছে, বান্দরবান পৌরসভার অধীনে সড়কের কাজটি করা হচ্ছে। ইউটিং মং মারমা লাইসেন্সের নামে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন সায়ন চৌধুরী। সড়কটি প্রায় ১৫০ মিটার দীর্ঘ। এই সড়কে আরসিসি ঢালাইয়ের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৬০ লাখ টাকা।

বৃষ্টির ভেতরে ঢালাইকাজ চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সায়ন চৌধুরী বলেন, 'এই অর্থবছরের কাজ, তাই ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করতে হবে। না হলে জামানতের টাকাসহ বাজেটের সব টাকা আটকে যাবে। তাই বাধ্য হয়েই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই করছি।'

বাংলাদেশে সরকারি অর্থবছরের শেষ মাস জুন। অভিযোগ আছে, এই সময়ে এসে প্রকল্পের কাজ অসম্পূর্ণ রেখে বা কোনোরকমে কাজ শেষ করে দিয়ে জুনের মধ্যে শেষ দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা থাকে ঠিকাদারদের মূল লক্ষ্য।

স্থানীয় বাসিন্দা মংক্যপ্রু মার্মা বলেন, এই রাস্তাটা অনেক বছর ধরে সংস্কার করা হয়নি। চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছিল এই গলির বাসিন্দারা। অনেক দাবি-দাওয়ার পর ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ পেয়ে আশা করেছিলাম ভালো কিছু হবে। কিন্তু এখন যেভাবে কাজ হচ্ছে, রাস্তাটা বেশিদিন স্থায়ী হবে না বলে মনে হচ্ছে। বৃষ্টিতেই ঢালাই করা হচ্ছে।

আরেক বাসিন্দা সুইক্য মং মার্মা বলেন, মানুষের ট্যাক্সের টাকায় যদি এভাবে কাজ হয়, তাহলে উন্নয়ন না করাই ভালো ছিল। অন্তত টাকাটা অপচয় হতো না।

বান্দরবান পৌরসভার অফিসের মাঠে কাজে তদারকির দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী (ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট) সত্যজিৎ বলেন, শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় ঢালাই করার কথা ছিল না। হঠাৎ নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের ফোন পেয়ে এসে দেখি বৃষ্টির মধ্যে কাজ চলছে। সঙ্গে সঙ্গে স্যারের নির্দেশে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।

'কংক্রিট ঢালাইয়ের জন্য আবহাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টিতে ঢালাই করলে কংক্রিটের অনুপাত নষ্ট হয়। ফলে পরে ফাটল, গর্ত বা দেবে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটা প্রকৌশলগতভাবে অনুচিত। তবুও জোরপূর্বক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদার। এতে আমাদের কী করার আছে', বলেন তিনি।

জানতে চাইলে বান্দরবান পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া বলেন, আমাদের ওপর জুন ক্লোজিংয়ের চাপ থাকে। তাই অনেক সময় ঠিকাদারদের কাজ অনুমোদন করতে হয়। তবে বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

'গত সপ্তাহেও এ রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে কাজ করার চেষ্টা হয়েছিল। তখন বন্ধ করে দেওয়া হয়। আজও সরকারি ছুটির দিন, তাই কাজ করার অনুমতি ছিল না। যদি প্রমাণ হয় বৃষ্টির মধ্যেই ঢালাই করা হয়েছে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও লাইসেন্সধারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Police grapple with surge in crime

Data from the Police Headquarters presents a grim picture of violent crimes, including murder, mugging, robbery, extortion, and mob violence, in the first six months of 2025.

18h ago