রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরই ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব: আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, প্রস্তাবিত 'জুলাই সনদ' বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর।
তিনি বলেন, 'প্রয়োজনে কমিশন সব অংশীদারদের সঙ্গে আবারও বসবে এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা করবে।'
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে সংলাপের দ্বিতীয় পর্যায়ের ২৩তম দিনের আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
আলী রীয়াজ জোর দিয়ে বলেন, যেসব বিষয়ে ইতোমধ্যেই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। কমিশন এই প্রক্রিয়াকে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জারি রাখবে বলেও জানান তিনি।
আজকের সংলাপে পাবলিক সার্ভিস কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, নিয়ন্ত্রক ও নিয়ন্ত্রক মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়, ন্যায়পালের প্রতিষ্ঠান, উচ্চকক্ষ গঠন ও ক্ষমতা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি, ইলেকটোরাল কলেজের ভূমিকা, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, মৌলিক অধিকারের সম্প্রসারণ এবং রাষ্ট্রের পরিচালনার মূলনীতি আলোচ্যসূচিতে ছিল।
আলী রিয়াজ জানান, ছয়টি উপ-কমিশনের সুপারিশের সারসংক্ষেপ ইতোমধ্যে অংশগ্রহণকারী পক্ষগুলোর কাছে তুলে ধরা হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ঐকমত্য হয়েছে। একটি চূড়ান্ত তালিকা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, 'আজকের মধ্যেই দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপ শেষ করতে চায় কমিশন। আজকের আলোচ্যসূচির বেশিরভাগ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন। আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের বিষয়ে গৃহীত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগুলো আপনাদের জানানো হবে। পাশাপাশি কয়েকটি অনিষ্পন্ন বিষয় আছে, যা আমরা আজকের সভার মধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে চাই।'
তিনি আরও বলেন, আজকের আলোচনায় আগের দিনগুলোর যেসব আলোচনা অসম্পূর্ণ ছিল, তা থেকেই শুরু হবে — বিশেষত সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক এবং ন্যায়পালের ওপর আলোকপাত করা হবে।
'এরপর আমরা বাকি বিষয়গুলোর নিষ্পত্তির দিকে এগিয়ে যাব এবং সংলাপ পর্ব শেষ করব,' বলেন তিনি।
আলী রীয়াজ জানান, প্রায় ১৩টি প্রধান বিষয়ে ইতোমধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোকে ভিন্নমত জানাবার সুযোগও দেয়া হয়েছে, এবং যারা আজ আনুষ্ঠানিকভাবে তা লিপিবদ্ধ করতে চান, তাদের সেই সুযোগ থাকবে বলেও জানান তিনি।
জুলাই সনদের খসড়া সম্পর্কে তিনি বলেন, কমিশন অংশগ্রহণকারী পক্ষগুলোর কাছ থেকে পরামর্শ এবং সংশোধনী প্রস্তাব পেয়েছে।
'আপনাদের মতামতের ভিত্তিতে সনদের চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই সনদের দুটি মূল উপাদান রয়েছে— প্রথমত, পটভূমি এবং গৃহীত সিদ্ধান্তের তালিকা; দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যতে সংলাপে ফিরে আসার একটি নবায়ন প্রতিশ্রুতি,' ব্যাখ্যা করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'আজকের সেশনের পরপরই গৃহীত ও বিতর্কিত বিষয়গুলোর তালিকা সম্পূর্ণ করে সব পক্ষের সঙ্গে শেয়ার করা হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো সম্মিলিত ঐক্যমত্য, এবং আমরা তা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'
আলোচনা সভাটি পরিচালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। সভায় কমিশনের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান এবং আইয়ুব মিয়া।
Comments