প্রধানমন্ত্রীর কোনো কথা বিশ্বাস করি না: মির্জা ফখরুল

ফখরুল
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্টার ফাইল ছবি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'আমরা কখনোই প্রধানমন্ত্রীর কোনো কথা বিশ্বাস করি না। এটা এ কারণে যে তারা যা বলে, তা করে না।'

'বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন করা হবে না, আন্দোলন দমন করা হবে না' প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা বলেছি, তাদের সব কথাবার্তায় তারা প্রতারকের ভূমিকা পালন করে।'

আজ বুধবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দায়ী উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের কিছু সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী চক্রের হাতে দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা জিম্মি হয়ে আছে। মূল্যবৃদ্ধির এই দুর্নীতিবাজ চক্রের শীর্ষ অবস্থানে আছে সরকারের চালিকাশক্তিরাই। সরিষায় ভূত থাকলে ভূত তাড়াবে কে? রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন যা হওয়ার তাই হচ্ছে বাংলাদেশে।'

তিনি বলেন, 'এখানকার যে মূল্যস্ফীতি, এখানে যে অর্থনৈতিক দুরাবস্থার সবকিছুর মূলে সরকারের দুর্নীতি। এই দুর্নীতির কারণেই দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, তাদের দুর্নীতির কারণে আজকে সারাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার দাপটে মধ্য বিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্ররা পিষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সরকারের দুর্নীতি, টোটাল ফেইলিওর, অব্যবস্থাপনার কারণে আজ এই অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে।'

'যেখানে বিনিয়োগ করার প্রয়োজন নেই, সরকার সেখানেই টাকা দিচ্ছে' উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু ৩০ হাজার কোটি টাকার উপরে নিয়ে গেল। এয়ারপোর্টের রাস্তার সমস্যা, এখানে প্রতি কিলোমিটারে ২৩০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ কী অবস্থা? ১০ বছরে এখন পর্যন্ত এই অবস্থা। অর্থাৎ এসবের মূল কারণটাই হচ্ছে দুর্নীতি।'

'জ্বালানি তেলের বেলায় কী দুর্নীতি করেছে, বিপিসি একইভাবে দুর্নীতি করেছে। বিদ্যুতের বেলা দেখেছেন, তারা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। সেই কারণে আজকে এই দুর্নীতি হচ্ছে। হয়ত বিশ্ববাজারের কারণে সহনীয় পর্যায় কিছু হতে পারত। কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে সেটা সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতির কারণে। ১৯৭৪ সালে তারা এভাবে দুর্নীতি করেছে, আজকেও একইভাবে তারা দুর্নীতি করছে,' যোগ করেন তিনি।

এই অবস্থার পরিবর্তনে 'রাজপথে আন্দোলন' সংগঠিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই দুর্নীতিবাজ সরকারের জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা জনগণের কল্যাণের তোয়াক্কা না করে নিদারুণভাবে নিষ্ঠুর ও নির্দয় হয়ে পড়েছে।'

দেশের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ‍ও মূল্যস্ফীতির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'সরকারি হিসেবেই গত জুন মাসের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড। বর্তমানে মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও অনেক কমে গেছে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষ নানাভাবে ব্যয় কমিয়ে টিকিয়ে থাকার চেষ্টা করছেন। নিজের আয় দিয়ে আর চলতে না পারায় স্ত্রীকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে অনেকেই ফ্যামিলি বাসা ছেড়ে উঠেছেন মেসে। মানুষ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'কাঁচাবাজার থেকে একটি পরিবারের যা যা কিনতে হয়, তার প্রায় সব কিছুরই দাম আরেক দফা বেড়েছে। এই তালিকায় চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা আছে, তেমনি আছে সবজি, ডিম, মুরগির দাম। পিছিয়ে নেই মাছ ব্যবসায়ীরাও। এই মূল্যবৃদ্ধি সেসব সীমিত আয়ের মানুষের ওপরে সরাসরি আঘাত, যারা ইতোমধ্যে মূল্যস্ফীতিতে নাকাল।'

বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য আরেক দফা বাড়ানোর বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর ইঙ্গিত, ওয়াসার পানির মূল্য আবারও বৃদ্ধির উদ্যোগের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'মানুষ যখন চরম দুরাবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছে তখন সরকারের মন্ত্রীদের আবোল-তাবোল বক্তব্য কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতোই মনে হয়। মানুষের দুরাবস্থা নিয়ে মন্ত্রীরা তামাশা করছেন।'

'পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, অভাবের তাড়নায় প্রাণপ্রিয় সন্তানকে বিক্রি করতে খাগড়াছড়ির এক হাটে তুলেছেন মা সোনালী চাকমা। ছয় বছরের সন্তান রামকৃষ্ণ চাকমার বিনিময়ে ১২ হাজার টাকা দাম চেয়েছে তার মা। কী নিদারুণ অভাব আর কষ্টে থাকলে একজন মা সন্তানকে বাজারে বিক্রির জন্য আনতে পারে। এতেই স্পষ্ট বাংলাদেশ নামক "বেহেশতের" বর্তমান হাল চিত্র। দেশের মানুষ এই দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়। লুটপাট, দুর্নীতি, অর্থপাচার আর অপশাসন দেশটাকে সত্যিকার অর্থে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে,' বলেন তিনি।

বামদলীয় জোটের কর্মসূচিতে সমর্থন

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বাম দলীয় জোটের আগামী ২৫ মার্চের আধা বেলা হরতালের আহ্বান প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা বলেছি, যে কোনা দলের যে কোনো ন্যায়সঙ্গত দাবির আন্দোলনে আমরা সমর্থন করি সবসময়। 

'আয়নাঘরে বন্দি' ও নেত্র নিউজের প্রতিবেদন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আয়না ঘরে বন্দি বলেন, নেত্র নিউজের প্রতিবেদন বলেন, এসব কথাগুলো আমরা বহু আগে থেকে বলছি। এই যে গুম করে নিয়ে যায়, তারপরে অনেককে গুম করে রাখে, অনেককে মেরে ফেলে, তারপরে অনেককে ছেড়ে দেয়, তারপরে তারা ভয়ে কোনো কথা বলে না, এই বিষয়গুলো আমরা বহুবার বলেছি।'

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

2h ago