সরকার কি ভারতের আনুকূল্যে টিকে আছে: ফখরুল
পরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গে টেনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রশ্ন তুলেছেন, সরকার কি ভারতের আনুকূল্যে টিকে আছে?
তিনি বলেন, আমরা জানতে চাই, এই সরকারের কাছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এবং ভারত সরকারের কাছেও; পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে কথা বলেছেন তার অর্থ কী? তাতে কি এটা দাঁড়ায় যে, এই সরকার টিকে আছে ভারতের আনুকূল্যে?
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফখরুল বলেন, আজ অত্যন্ত কঠিন সময়ে আমরা স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছি। আজকে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই একটি স্বাধীন রাষ্ট্র থাকবে কি না? বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক দেশ থাকবে কি না? বাংলাদেশ মানুষের অধিকারগুলো ফিরিয়ে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরি করবে কি না। এই প্রশ্নগুলো এসেছে কারণ আমরা দেখলাম, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের মানুষের সব অধিকারগুলো তারা কেড়ে নিয়েছে। সংবিধান পরিবর্তন করেছে, মানুষের এক দিন ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচনের যে সুযোগ ছিল, সেই ভোট দেওয়ার ক্ষমতা তারা হরণ করে নিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে দিয়ে। এখন এই আওয়ামী লীগ সরকার ভয়ঙ্করভাবে লুট-তরাজ-ডাকাতির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে মানুষের পেটে হাত দিয়েছে।
তিনি বলেন, সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। এমন একটা দ্রব্য নেই যার দাম ২ থেকে ৪ গুণ বাড়েনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির যে সংকট। সে সংকট তো আছে কিন্তু আপনারা কেন আগে থেকে ব্যবস্থা নেননি। বারবার করে বলা হয়েছিল, আপনারা যে লুট-তরাজ করছেন সেটা বন্ধ করেন। দুর্নীতি বন্ধ করেন। করোনা যখন হলো আমরা বলেছিলাম, সাধারণ মানুষের কাছে ক্যাশ টাকা পৌঁছে দেন।
সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, আপনারা জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছেন শতকরা ৫১ ভাগ। বলছেন, বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে সেই কারণে আমরা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। যখন দাম কমেছিল তখন কিন্তু আপনারা জ্বালানি তেলের দাম কমাননি। আজকে যখন আবারও দাম কমতে শুরু করেছে তখনো কিন্তু আপনারা জ্বালানি তেলের দাম কমাচ্ছেন না। পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বলেছে, তাদের ৪৮ হাজার কোটি টাকা সারপ্লাস ছিল। তাহলে সহনীয় পর্যায়ে থাকতে ৪৮ হাজার কোটি টাকার তেল আমদানি করতে পারতেন না? ৩৪ ভাগ কর দিতে হয়। সরকার কি পারতো না, এই ৩৪ ভাগ কমিয়ে একবারে শূন্যে নিয়ে আসা অথবা কয়েক ভাগ রাখতে? পারতো কিন্তু তারা তা করবে না কারণ এখানে তারা লুট করেছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে যারা আওয়ামী লীগ করে, তাদের দুর্নীতির টাকা যারা পাচার করে, তাদের আরও সুবিধা দেওয়ার জন্য তারা এলএনজি আমদানি করছে। দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নিচ্ছে না।
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এত দিন রোল মডেল বলা হয়েছে। এখানে নাকি মানুষে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে, যে কারণে গ্রামে-গঞ্জে নাকি গরিব মানুষ দেখা যায় না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এখন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা শতকরা ৪২ ভাগ হয়েছে। অনেকগুলো জেলা আছে যেখানে এখনো মানুষ দুবেলা দুমুঠো ভাত খেতে পায় না। এই যে দুর্নীতি শুরু হয়েছে এর জন্য এককভাবে দায়ী আওয়ামী লীগ। আজকে আওয়ামী লীগ দুর্নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করে দিয়েছে, বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি আরও বলেন, গত পরশু আওয়ামী লীগের মিটিং হয়েছে। সেখানে নেতারা সন্ত্রাসী ভাষায় কথা বলেছে, হুমকি দিয়েছে। এতই যদি হুমকি দেন তাহলে আবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আপনাদের সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতের সহযোগিতা দাবি করেন কেন! আমরা জানতে চাই, এই সরকারের কাছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এবং ভারত সরকারের কাছেও; পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে কথা বলেছেন তার অর্থ কী? তাতে কি এটা দাঁড়ায় যে, এই সরকার টিকে আছে ভারতের আনুকূল্যে?
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, এই সরকার দুর্নীতিবাজদের সরকার। এই সরকার চোরের সরকার। এরা অবৈধ, এদের কোনো বৈধতা নেই। রাতের অন্ধকারে নির্বাচন করেছে। জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। এত চ্যালেঞ্জ করবেন না! ক্ষমতা ছেড়ে রাস্তায় নামুন। দেখা যাক, এ দেশের জনগণের শক্তি বেশি নাকি আপনাদের শক্তি বেশি। ক্ষমতায় থেকে অনেক লম্বা লম্বা কথা বলা যায়। ক্ষমতা ছেড়ে রাস্তায় এলে বোঝা যাবে এ দেশের কয়টা মানুষ আপনাদের পক্ষে আছে।
Comments