বাংলাদেশ তো আল্লাহর রহমতে একটু ভালো আছে: শামীম ওসমান

'গত ৩০০ বছরের ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনের অর্থনেতিক অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। ৩০০ বছরের ইতিহাসে জিডিপি তাদের নিচে নেমে গেছে। এই যদি হয় সেই দেশগুলোর অবস্থা। তাহলে বাংলাদেশতো আল্লাহর রহমতে একটু ভালো আছে বলে,' মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। 
শামীম ওসমান। ফাইল ছবি

'গত ৩০০ বছরের ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনের অর্থনেতিক অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। ৩০০ বছরের ইতিহাসে জিডিপি তাদের নিচে নেমে গেছে। এই যদি হয় সেই দেশগুলোর অবস্থা। তাহলে বাংলাদেশতো আল্লাহর রহমতে একটু ভালো আছে বলে,' মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। 

বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'আপনারা সুযোগ নিতে চান। আপনারা খেলতে চান। আপনারা মরণ খেলা খেলতে চান। বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চান। আপনারা খেলবেন আমাদের সাথে? কবে খেলবেন বলেন। আমরাও খেলতে চাই। খেলা হবে। আপনারা খেলবেন ধ্বংসের পক্ষে আর আমরা খেলবো ধ্বংসের বিপক্ষে। তারেক রহমান সাহেবের কথায় খেলেন।'

শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষ্যে জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি।

শামীম ওসমান বলেন, 'লন্ডন থেকে নির্দেশ আসছে আর আপনারা বাংলাদেশে বসে লাফাছেন। লাফান কোনো সমস্যা নাই। খালেদা জিয়া অসুস্থ। একটা প্রশ্ন রাখতে চাই, যেই ভদ্রলোক লন্ডন থেকে বসে হুকুম দিচ্ছেন। এই ভদ্রমহিলা তো ওনার মা হয়। মা এত অসুস্থ, অবস্থা খারাপ, কই ছেলে হয়ে তো আসলেন না বাংলাদেশে? কেন আসলেন না? বুকের কলিজা নাই, সাহস নাই কিংবা মানসিকভাবে দুর্বল যে আমি খুন করেছি, গেলে ফেঁসে যাবো। বাদ দেন আপনি লন্ডনেই থাকেন। আরামে থাকেন। আপনার বউ। শাশুড়ি তো মায়ের মতো। কই ওনি তো আসতে পারতেন, উনিও তো আসলেন না। লন্ডন থেকে পাস করা ব্যারিস্টার নাতনি। নাতনি আপনিও তো আসলেন না দাদির পক্ষে মামলা লড়তে। তাহলে যারা তার কথায় নাচছেন তারা কি একবার বুঝেন, যে তার মায়ের জন্য আসে না, বউ তার শাশুড়ির জন্য আসে না, যেই নাতনি তার দাদির জন্য আসে না, আপনি যখন বিপদে পড়বেন উনি কি আপনার জন্য আসবে? যে যা কিছুই করেন ২০২৪ সালে শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবে।'

শামীম ওসমান বলেন, 'এ নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের সৃষ্টি হয়েছে। এই নারায়ণগঞ্জ সকল আন্দোলনের সূতিকাগার। এই নারায়ণগঞ্জের কথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বার বার তার জীবনিতে বলে গেছেন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এ নারায়ণগঞ্জ ৫২'র ভাষা আন্দোলন, ৬২'র, ৬৬'র আন্দোলনের, ৬৯'র গণ অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে দিয়েছে। সেই নারায়ণগঞ্জের মাটিতে ওই সমস্ত স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, বিএনপি জামায়াতের দোসররা যেই ভাষায় জাতির জনকের কন্যাকে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলে মিটিং করছে, মিছিল করছে, আমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কর্মীদের কথায় জনগণের কথায় আমি মিটিং ডেকেছি।'

তিনি বলেন, 'এই মিটিং এখন আমাদের করার কথা না। দেশের, পৃথিবীর যে অবস্থা টালমাটাল। এখন আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে দাঁড় করিয়ে রাখার কাজ। কিন্তু মিডিয়াতে দেখলাম, ঢাকায় মিছিল হচ্ছে। ওরা স্লোগান দেয় পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। অর্থাৎ যেভাবে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যা করেছে ঠিক সেই ভাবে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারকে হত্যা করতে চায়। বাঙালি জাতিকে আবারও তারা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে চায়।'

তিনি বলেন, 'আজকে কী হচ্ছে দেশে? সরকার পরিবর্তনের খেলা? সরকার তো পরিবর্তন হবেই। আজকে না হয় কালকে হবে, হতেই পারে। জনগণ যদি ভোট না দেয় তাহলে আমরা থাকবো না ক্ষমতায়। সরকার পরিবর্তনের খেলা হচ্ছে না। দেশকে ধ্বংস করার খেলা হচ্ছে।'

'আমি নিজেকে রাজনীতিবিদ বলতে লজ্জা পাই। যখন দেখি টেলিভিশনের পর্দায় জাতীয় পর্যায়ের বিএনপির নেতা মির্জা ফখরুল সাহেবরা হাসতে হাসতে বলে কিছুদিন পর চোখে সর্ষে ফুল দেখবেন। কারা দেখবে? আওয়ামী লীগ দেখবে সর্ষে ফুল? কেন সর্ষে ফুল দেখব? উৎসাহের সঙ্গে বললেন বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে। শ্রীলঙ্কা কি হয়েছে? শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়ে গেছে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হলে আপনারা খুশি হবেন কেন? আপনাদের তো খুশি হওয়ার কথা না। সাজেশন থাকলে সাজেশন দেন। দায়িতশীল বিরোধী দল হলে সাজেশন দেন কোথায় ভুল করছি, কীভাবে দেশটাকে এগিয়ে নেওয়া যায় সেটা বলেন। কিন্তু সেটা না বলে বললেন বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে। কি খুশি আপনারা!'

আগে হাজার বছরে একটা বঙ্গবন্ধু আসত। শত বছরে একটা মীর জাফর আসতো। কিন্তু এখন দেখি বাংলাদেশে বছরে বছরে একটা খন্দকার মোশতাক জন্ম নেয়। জেলায় জেলায় নেয়, মহল্লায় মহল্লায় নেয়, দলের ভেতরে নেয়, দলের বাইরে নেয়। মোশতাকরা ষড়যন্ত্র করে জিয়াউর রহমানের সহযোগীতা নেয় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করবে।

আগামী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে শামীম ওসমান বলেন, 'আপনাদের এ কথা বলবো না আওয়ামী লীগ, যুবলীগ বা ছাত্রলীগ করেন। এ কথাও বলবো না আমরাই পারফেক্ট আর কেউ পারফেক্ট না। আমি শুধু একটা কথা বলবো, শেখ হাসিনা এখন আওয়ামী লীগের সম্পদ না। শেখ হাসিনা আগামী দিনের সুন্দর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। ওরা এই সুন্দর ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করতে চায়। তাই জাতির জনকের কন্যা যখন গত ১৬ আগস্ট বক্তব্য দেন চারদিক থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আরেকটি ৭৫'র ঘটনার, ২১ আগস্টের চেষ্টা করা হচ্ছে, সাবধান থাকবেন আপনারা।'

শামীম ওসমান বলেন, 'আমাদের বিরুদ্ধে বলছেন বলেন কোন সমস্যা নাই। আমরা কিছু বলবো না। কিন্তু মানুষ আপনার বাবা মাকে নিয়ে কথা বলছে। রাজনীতিতে এমন ভাষা থাকতে পারে না। আপনারা মনে করছেন এসব কথা বললে আপনাদের আঘাত করবো। কিন্তু না করবো নাা। মানুষ আপনাদের এগুলো এখন পছন্দ করে না। আমাদের ভুল থাকলে ভুল ধরিয়ে দেন। ভুল হলে ধরিয়ে দেন। কিন্তু আপনারা তা করছেন না। আপনাদের টার্গেট সরকার ফেলা না বরং শেখ হাসিনাকে ফেলে দেওয়া।'

শামীম ওসমান বলেন, 'সামনে একটা কঠিন সময় আসতেছে। এসময় শেখ হাসিনার সরকারকে নষ্ট করার জন্য না। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাবে এজন্য না। ওরা বাংলাদেশটাকে ধ্বংস করতে চায়। ওরা এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারে নাই। না মানারই কথা। ওরা ঈমানদার। ওরা ওদের জায়গায় ঠিক আছে কিন্তু আমরা বিভক্ত। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিভক্ত। এখন এক হওয়ার সময়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হক নিপুর সঞ্চালনায় ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি চন্দন শীলের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, জেলার সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল প্রমুখ।

Comments