আচরণবিধি লঙ্ঘন: শামীম ওসমানের পক্ষে ভোট চেয়ে পাড়ায়-পাড়ায় মিছিল

শামীম ওসমানের নির্বাচনী এলাকা ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মিছিল করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রার্থীর পক্ষে মিছিল-সমাবেশের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানের পক্ষে ভোট চেয়ে পাড়ায়-পাড়ায় মিছিল করতে দেখা গেছে।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর শামীম ওসমানের নির্বাচনী এলাকা ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মিছিল করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

এসব মিছিলে শামীম ওসমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া, শামীম ওসমানের পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে স্লোগান দেওয়া হয়।

খণ্ড খণ্ড এসব মিছিলের বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের ৯টি ওয়ার্ডে শামীম ওসমানের পক্ষে একযোগে খণ্ড খণ্ড মিছিল করেন তার অনুসারী আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অপরদিকে ফতুল্লার কাশীপুর, এনায়েতনগর, তল্লা, কায়েমপুর, সস্তাপুর, ফতুল্লা বাজার ও কুতুবপুরসহ অন্যান্য এলাকায়ও মিছিল করেন তার অনুসারীরা।

সিদ্ধিরগঞ্জের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সানারপাড় এলাকায় মহানগর শ্রমিক লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন মোল্লার নেতৃত্বে একটি মিছিল হয়।

সিদ্ধিরগঞ্জের ২ নম্বর ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে আরেকটি মিছিল হয়। মিছিল শুরুর আগে শফিকুল ইসলাম এক ভিডিওতে সাংবাদিকদের বলেন, 'শামীম ওসমানের ভোটের প্রচারণায় আমরা মিছিল করব।'

ফতুল্লা বাজার এলাকায় ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলীর নেতৃত্বে এবং কায়েমপুর এলাকায় থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফায়জুল ইসলামের নেতৃত্বে মিছিল হয়।

তল্লা এলাকায় যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লবের নেতৃত্বে শামীম ওসমানের পক্ষে মিছিল করেন তার অনুসারী নেতাকর্মীরা। কুতুবপুরে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর হোসেনে মীরুর নেতৃত্বে মিছিল হয়। মীর হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক ও চাঁদাবাজির বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।

কাশীপুর ইউনিয়নে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান এম সাইফউল্লাহ বাদলের ছেলে নাজমুল হোসেন সাজনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা মিছিল করেন।

প্রতিটি মিছিল থেকে শামীম ওসমানের পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে স্লোগান দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের প্রতিটি এলাকায় আনন্দ মিছিল হয়েছে। এটা শামীম ওসমানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আনন্দ মিছিল। এসব স্থানে কাউকে প্রচার-প্রচারণা করতে নিষেধ করা হয়েছিল। তবে কেউ কেউ নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে স্লোগান দিয়েছে।'

'যারা ব্যানারে ভোট চাওয়ার ব্যাপারে লিখেছে এবং ভোট চেয়ে স্লোগান দিয়েছে তারা অতি-উৎসাহী। শামীম ভাই আমাদের কোনো প্রকার প্রচারের জন্য বলেননি। আমরা নিজেদের উদ্যোগে কেবল আনন্দ মিছিল করেছি', বলেন তিনি।

এদিকে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কজুড়ে শামীম ওসমানের হাত উঁচিয়ে ধরা বড় কয়েকটি ছবি সম্বলিত ফেস্টুন দেখা গেছে।

এর আগে, শামীম ওসমানের পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে কয়েকটি ব্যানার ও ফেস্টুন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, সানারপাড় ও চিটাগাং রোড এলাকায় সাঁটানো হয়েছিল। তবে বিকেলের পর সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা নিজ উদ্যোগে কিছু ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়েছিলাম। পরে আচরণবিধির কথা ভেবে সরিয়ে নিয়েছি।'

এসব মিছিলের বিষয়ে জানতে শুক্রবার বিকেল থেকে আজ বিকেল পর্যন্ত শামীম ওসমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শামীম ওসমানের পক্ষে ভোট চেয়ে মিছিলের বিষয়ে জেনেছি। আমি নিজেও কয়েকটি পাড়া-মহল্লায় শামীম ওসমানের কর্মী-সমর্থকদের মিছিল করতে দেখেছি। এসময় তারা নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন। তাদের মিছিলের কারণে পাড়া-মহল্লায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এটি সরাসরি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন।'

'মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন তিনি (শামীম ওসমান) আইনকে শ্রদ্ধা করেন বলে সাংবাদিকদের সামনে জানালেন। কিন্তু একদিন পরেই তিনি তার লোকজন দিয়ে মিছিল করিয়ে, ভোট চেয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেন। আমি বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে খুদেবার্তা পাঠিয়ে জানিয়েছি। এ ঘটনায় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এবং এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে আমি লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করব।'

এই আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে তার কোনো কর্মী-সমর্থক মিছিল বা ভোট প্রার্থনা করতে পারবেন না। এটা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কেউ মিছিল করেছে, এ বিষয়ে অবগত নই। তবে এমনটা হয়ে থাকলে তদন্ত করে নির্বাচন কমিশন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।'

Comments

The Daily Star  | English
NSC shop rent scam in Dhaka stadiums

Shop rent Tk 3 lakh, but govt gets just Tk 22,000

A probe has found massive irregularities in the rental of shops at nine markets of the National Sports Council (NSC), including a case where the government receives as little as Tk 22,000 in monthly rent while as much as Tk 3 lakh is being collected from the tenant. 

16h ago