সিলেটে সমাবেশ নিয়ে ‘কৌশলী’ বিএনপি

আগামী ১৯ নভেম্বর সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশের প্রচারে ছাত্রলীগ-পুলিশের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করা হলেও সফলভাবে সমাবেশ আয়োজনের ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপি। এ জন্য দলটি কিছু কৌশলও বেছে নিয়েছে।
সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে সিলেটে। ছবি: স্টার

আগামী ১৯ নভেম্বর সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশের প্রচারে ছাত্রলীগ-পুলিশের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করা হলেও সফলভাবে সমাবেশ আয়োজনের ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপি। এ জন্য দলটি কিছু কৌশলও বেছে নিয়েছে।

বিএনপির সমাবেশের দিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেট জেলায় এবং আগের দিন সকাল থেকে সমাবেশের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি।

দেশের অন্যান্য স্থানে সমাবেশের ২ দিন আগে থেকে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক আসলেও সিলেটে কেবল সমাবেশের দিন পরিবহন ধর্মঘট ঘোষণা বিএনপির কৌশলী কিছু উদ্যোগের ফসল বলে মনে করছেন রাজনীতিবিদরা।

১৯ তারিখের সমাবেশের আগে গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার সিলেটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ৭৭তম আজিমুশ্বানে ইজতেমা।

ইজতেমা আয়োজনে সিলেট সিটি মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন এবং ইজতেমার ফলে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট ডাকতে দ্বিধায় ছিলেন। এ কারণেই কেবল আগামী শনিবার সমাবেশের দিন সিলেট জেলায় ধর্মঘট ডাকা হয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ।

এ ইজতেমাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তাজনিত হুমকি আছে জানিয়ে তা ১৯ নভেম্বরের পর আয়োজনের জন্য গত মঙ্গলবার সিলেট মহানগর পুলিশ আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামকে জানালেও সংগঠনকটির আমির মুফতি মাওলানা রশীদুর রহমান ফারুক ইজতেমার তারিখ পেছাতে অসম্মতি জানান।

'বরুণার পীর' হিসেবে পরিচিত মুফতি রশীদুর রহমান ফারুক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর 'ধর্মীয় পীর' বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির কয়েকজন নেতা। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও 'বরুণার পীরের' ভক্ত হওয়ায় ইজতেমার আয়োজন পুলিশি বাধার মধ্যেও পেছানো হয়নি।

সমাবেশের আগের দিন সিলেটে আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এড়াতে নগরীর অন্তত ২৫টি কমিউনিটি সেন্টার ১৮ নভেম্বর রাতের জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সেখানে বিএনপির কর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বিভাগের প্রতিটি উপজেলা থেকে আসা কর্মীদের জন্য আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশস্থলের পাশে শামিয়ানা টাঙিয়ে আলাদা আলাদা ক্যাম্প করা হচ্ছে, যাতে কর্মীরা সমাবেশস্থলেই থাকতে পারেন।

সমাবেশের জন্য ৭০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রশস্তের মঞ্চ নির্মাণ কাজও ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ও গণসমাবেশ উপলক্ষে গঠিত প্রচার ও মিডিয়া উপকমিটির আহবায়ক আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেশ কয়েকটি জায়গায় অতি উৎসাহী কিছু রাজনৈতিক ও পেশাজীবী বিএনপির শান্তিপূর্ণ প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে যা গণতান্ত্রিক দলের কর্মসূচির জন্য অযাচিত বাধা।'

'যত বাধাই আসুক, সমাবেশ সফল করত যা যা করণীয়, সবই করা হচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

সমাবেশের অভ্যর্থনা উপকমিটির আহবায়ক ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের নেতা-কর্মীরা সমাবেশ সফল করতে বদ্ধপরিকর। অনেকেই আগ্রহী হয়ে কমিউনিটি সেন্টারও ভাড়া করে রেখেছেন। পরিবহন ধর্মঘটের আশঙ্কা আছে। তবে আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক সম্প্রীতির শহরে এ গণসমাবেশে এমন কোনো বাধা আসবে না। সব মিলিয়ে সমাবেশ সফল হবে বলে আমরা আশাবাদী।'

তবে গত ১০ দিনে দলটির অন্তত ২০ জন নেতা-কর্মীকে পুলিশ নানান অভিযোগে আটক করেছে। এ ছাড়া বিভাগের অন্তত ১০ জায়গায় প্রচারাভিযানে পুলিশ ও ছাত্রলীগ বাধা দিয়েছে এবং অন্তত ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। 

Comments