আওয়ামী লীগের সম্মেলন: হ্যাটট্রিক না শেষ মুহূর্তের চমক

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ শনিবার। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এ সম্মেলন কেবলই একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র, কারণ আওয়ামী লীগে বড় কোনো পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে না বলে ইতোমধ্যে দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ
স্টার ফাইল ছবি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ শনিবার। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এ সম্মেলন কেবলই একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র, কারণ আওয়ামী লীগে বড় কোনো পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে না বলে ইতোমধ্যে দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তবে, অনেক আওয়ামী লীগ নেতা এখনো মনে করছেন সাধারণ সম্পাদক পদের ক্ষেত্রে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা শেষ মুহূর্তে কোনো চমক নিয়ে আসতে পারেন, কারণ দলীয় সূত্রমতে দলীয় প্রধান এখনো কাউকে 'গ্রিন সিগন্যাল' দেননি।

ওবায়দুল কাদের ২০১৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২০১৯ এর সম্মেলনে পুনর্নির্বাচিত হন, এবার নির্বাচিত হলে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে হ্যাটট্রিক করবেন তিনি। 

আগামী বছরের এপ্রিলে কাদের রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে পারেন বলে সূত্র জানিয়েছে। সেক্ষেত্রে ওবায়দুল কাদের তার নির্ধারিত ৩ বছর মেয়াদ পূরণ করতে পারবেন না।

এক্ষেত্রে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের সাধারণ সম্পাদক পদে আসার সম্ভাবনা প্রবল বলে দলীয় সূত্র জানায়।

এদিকে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ১২তম জাতীয় নির্বাচনের পরে আগেভাগেই একটি সম্মেলন করতে পারে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলটি এবং নির্বাচনের পর দলের পদগুলোতে একটি বড় রদবদল আসতে পারে।

বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, 'দলের কমিটিতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।'

'আগামী জাতীয় নির্বাচনের পরে আমরা আগেভাগেই একটি সম্মেলন করতে পারি। তখন বড় ধরনের রদবদল হতে পারে,' বলেছিলেন তিনি।

অবশ্য শুক্রবার তিনি এ অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে বলেন, 'কে কোন দায়িত্বে, সেটা ব্যাপার নয়। দায়িত্ব বদলালেও তো আমরা এই দলেই আছি। কেউ নিখুঁত না, আমিও না। নতুন কমিটিতে পদ বদলে গেলেও কাজ করে যেতে আপত্তি নেই।"

দলীয় সূত্র জানায়, দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বড় ধরনের রদবদল হতে পারে।

সম্মেলনে বর্তমান কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ ও দীপু মনিকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে যুগ্ম-সম্পাদক পদে আসতে পারেন সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস কিংবা সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।

সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও আসতে পারে নতুন মুখ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা অবশ্য বাড়ানো হবে না। কারণ দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ৮১ সদস্যের এই কমিটিকে আর বড় করতে চান না।

তবে সূত্র জানায়, সাবেক ছাত্রনেতা এবং দলের অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনের সাবেক নেতাদের মধ্যে ২০-২৫ জন নতুন মুখ হিসেবে কমিটিতে আসতে পারেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে বড় ধরনের কিছু পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে, যেগুলো সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে।

যেমন, জেলা সম্মেলনের ৪৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক করার বাধ্যবাধকতা থাকছে। মহিলা শ্রমিক লীগকে সহযোগী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ এবং গঠনতন্ত্র এটি অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

এদিকে, এবারের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শেখ রেহানা, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, সজীব ওয়াজেদ জয় ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিকে দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, তার অপেক্ষায় আছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীরা।

গত শনিবার রাতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকে এমন দাবি তুলেছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র সদস্য।

বৈঠকে সভাপতি শেখ হাসিনা জবাব দেন যে, তাদের (পরিবারের সদস্যরা) ইচ্ছা, আগ্রহ থাকলে তারা কমিটিতে আসবেন। তবে তিনি তাদের কোনো চাপ দিতে চান না বলেও বৈঠকে জানান আওয়ামী লীগ প্রধান। সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর থেকে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। এবারের সম্মেলনে দশমবারের মতো তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হচ্ছেন।

'উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়' স্লোগান নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের পর রমনায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইবি) মিলনায়তনে প্রায় ৭ হাজার কাউন্সিলর ও ১৪ হাজার প্রতিনিধি ভোট দেবেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের নির্বাচিত করতে।  আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচন পরিচালনা করবেন।

সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশল ও ঘোষণাপত্র গৃহীত হবে এবং এ ঘোষণাপত্রের আলোকে আগামী নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন করা হবে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, আজকের সম্মেলন থেকেই দলের সভাপতি শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য দলের প্রচারণা শুরু করবেন।

Comments