রাজনীতি

‘নির্বাচনে পরাজয়ের ভয়ে ভোটদানের সুযোগ দিতে চায় না সরকার’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বিএনপি বাংলাদেশে সমঝোতা, শান্তি ও উন্নয়নের রাজনীতি করতে চায়। পাহাড়ি- বাঙ্গালি মিলিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন জিয়াউর রহমান। সরকার সর্বোত্তম মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের খেতাব কেড়ে নিতে চায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বিএনপি বাংলাদেশে সমঝোতা, শান্তি ও উন্নয়নের রাজনীতি করতে চায়। পাহাড়ি- বাঙ্গালি মিলিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন জিয়াউর রহমান। সরকার সর্বোত্তম মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের খেতাব কেড়ে নিতে চায়।

আজ শনিবার বিকেলে কুমিল্লায় বিএনপির গণমিছিলের প্রাক্কালে তিনি এসব কথা বলেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, '২০১৮ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের ভয়ে সরকার রাতেই ভোট বাক্সে ব্যালট ভরে রেখেছিল। এখন তারাই বলে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা তো নিজেরাই ভোট দিয়েছি। সিইসি বলেন, দিনের ভোট যেন রাতে না হয়। সেজন্য তিনি ইভিএমে ভোটগ্রহণ করতে চান।'

'একবার ১৯৯১ সালে শহীদ জিয়াকে সাধারণ মেজর বলে নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে বিএনপি ছাড়া নির্বাচনে ১৫৩ আসনে প্রার্থী খুঁজেই পাননি। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার ভয়ে জনগণকে ভোটদানের সুযোগ দিতে চায় না সরকার। ২০১৮ সালে যদি এক বেলাও ভোট হতো তাহলে বিএনপি বিজয়ী হতো। এখন সবাই স্বীকার করে রাতে ভোট হয়েছিল', বলেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, 'জিয়াউর রহমান রাজনীতিবিদ ছিলেন না, সেনাপ্রধান হয়ে তিনি গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। অথচ সরকার নিজেকে গণতান্ত্রিক দাবি করে মানুষের ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। যারা নিজেদের গণতন্ত্রকামী রাজনীতিবিদ দাবি করে, তারাই মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'তারা (আওয়ামী লীগ) ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচারের সঙ্গে নির্বাচনে যায়নি? ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে যদি তারা না যেত, তখন এরশাদের পতন হতো না? ওয়ান ইলেভেনের অবৈধ সরকার নাকি তাদের আন্দোলনের ফসল। বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। বিএনপি দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিল।'

'এ দেশে বিএনপি সামরিক শাসন জারি করেনি। বিএনপি দেশে গণতন্ত্র হত্যা করেনি। বিএনপি গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চায় বলেই দাবি করছে, জনগণকে ভোটের অধিকার দিতে হবে। আর জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেজন্যই দরকার নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার। আর সে দাবির জন্যই যে আন্দোলন, সে আন্দোলনে কয়েক মাসে আমাদের অনেক সঙ্গী মারা গেছেন। অনেকে জীবন দিয়েছেন। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী জেলে গ্রেপ্তার হয়ে আছেন', বলেন তিনি।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, '১০ দফার ভিত্তিতে আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা আদায় করতে হবে। এই ১০ দফার পর রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের জন্য আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ২৭ দফার একটি কর্মসূচি নিয়েছেন। এই দাবিগুলো আদায়ে আমরা বলিনি সরকার পদত্যাগ করলে আমরা ক্ষমতায় বসবো। আমরা বলেছি, পদত্যাগ করে একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন, যেখানে সবাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। সেখানে জনগণ যাকে ভোট দেবে, তারাই দেশ পরিচালনা করবে এবং এই কারণেই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম।'

'আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো, শ্লোগান দেন আর ভোটকেন্দ্রে লোক বসিয়ে রেখে ডাকাতি করতে চান। নির্বাচনের নামে প্রহসন করেন। এটা চলবে না, এই কারণে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। আজ হালাল উপার্জন করে কোনো মানুষ ভালোভাবে চলতে পারছে না। কারণ প্রতিদিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। এ অবস্থায় দেশ চলতে দেওয়া যায় না', বলেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, 'আজ আমাদের দেশ অসম্মানিত হচ্ছে। বিশ্বে গণতান্ত্রিক প্রোগ্রামে বাংলাদেশ দাওয়াত পায় না। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় বিদেশিরা, আমরা লজ্জিত এসব কারণে। আমরা আর লজ্জিত হতে চাই না। এ দেশ রক্তে স্বাধীন দেশ, আমরা এ দেশকে নিয়ে গর্বিত হতে চাই।'

তিনি আরও বলেন, 'একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও সুশাসন, সেই লক্ষেই আমাদের আন্দোলন। এই আন্দোলনের বিজয় বাংলাদেশের বিজয়। কাজেই বাংলাদেশের বিজয় মানে জনগণের বিজয়। এই লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে। আন্দোলনে এ পর্যন্ত অনেকেই জীবন দিয়েছেন, প্রয়োজনে আরও জীবন দিতে হবে। এ লড়াইয়ে আমরা জিতবোই।'

এসময় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিনসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কান্দিরপাড় কলেজ রোডে বিএনপি অফিসের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

Comments