জেল-জুলুম যাই আসুক আমরা এগিয়ে যাব: মির্জা ফখরুল

জেল-জুলুম যাই আসুক আমরা এগিয়ে যাব: মির্জা ফখরুল
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের সামনে জেল-জুলুম যাই আসুক সেগুলো উপেক্ষা করে সামনে দিকে এগিয়ে যাব।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'আমাদের জেগে উঠতে হবে। আমার মকবুল ভাই (ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত মকবুল হোসেন) যিনি ৭ ডিসেম্বর প্রাণ দিয়েছেন, আমার সেই নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ভোলার ভাইয়েরা যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের রক্ত ছুঁয়ে আমরা শপথ নিয়েছি- বাংলাদেশকে একটি উদার রাষ্ট্র তৈরি না করে আমরা ঘরে ফিরব না, বিজয় অর্জন না করার পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।'

তিনি আরও বলেন, 'আজ আমাদের নেতা জিয়াউর রহমানের জন্মদিনে আসুন আমরা শপথ গ্রহণ করি, যে ১০ দফা দাবি দিয়েছি সেই দাবি আমরা আদায় করব। আমরা অবশ্যই বাধ্য করব এই সরকারকে পদত্যাগ করতে। অবশ্যই সংসদ বিলুপ্ত করে নতুন কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে আমরা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে জাতীয় নির্বাচন করতে বাধ্য করব।'

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'আমরা কী আমাদের নেতার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা নিবেদন করছি? আমরা কী আমাদের শপথে অটুট আছি? আমরা কী আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব বাংলাদেশকে টেক ব্যাক বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিতে বলেছেন- আমরা কী সেই লক্ষ্যে স্থির আছি? আমরা কী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই? এখনো আমাদের যেসব বন্ধুরা কারাগারে আছেন তাদের মুক্ত করতে চাই?'

'আসুন তাহলে আর কালক্ষেপণ নয়, আমরা যে আবেগ নিয়ে, যে সাহস নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছি সেই সাহস নিয়ে আগামী দিনগুলোতে অবশ্যই জয়যুক্ত হবো এবং এদেরকে (আওয়ামী লীগ সরকার) পরাজিত করে এ দেশে সত্যিকার অর্থে মুক্ত গণতান্ত্রিক উদার রাষ্ট্র নির্মাণ করব- এই হোক আজকের শপথ,' বলেন তিনি।

জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালনে বিএনপি গত ১৭ জানুয়ারি থেকে ১০ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আপনারা লক্ষ্য করেছেন এই সরকার নির্বাচন না করে ২০১৪ সালে এবং ২০১৮ সালে আগের রাতে নির্বাচন করে জনগণের সঙ্গে পুরোপুরি প্রতারণা করে ক্ষমতায় বসে আছে। এখনো বসে আছে এবং যেমন করে হোক তারা আবারও ক্ষমতায় যেতে চায়। সেখানেই মানুষ জেগে উঠেছে। জিয়াউর রহমানের আদর্শকে সামনে রেখে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে লড়াকু যে জীবন- তা সামনে রেখে, তারেক রহমানের আদর্শকে সামনে রেখে মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। আমরা দেখছি যে, কীভাবে মানুষ এই সরকারের পতন চায়।'

বিজয় কিবোর্ড প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এদের (সরকার) অপকীর্তির কথা বলে শেষ করা যায় না। আজকের পত্রিকায় দেখুন- বিজয় কিবোর্ড আত্মগোপন ও তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন। আমাদের মোবাইলে বিজয় কিবোর্ডকে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। কারণ এই বিজয় কিবোর্ডের মালিকানা হচ্ছে মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের, যিনি তথ্য প্রযুক্তি তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী (ডাক, টেলিযোগাযোগ তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী)। কত বড় ভয়ঙ্কর কথা। দুর্নীতি কি পরিমাণ হতে পারে? কখনোই একজন মন্ত্রী নিজের কোম্পানিকে সরকারের কোনো লাভজনক কাজের মধ্যে জড়াতে পারেন না, এটাই হচ্ছে নিয়ম-নীতি-আইন। সেখানে তারা প্রকাশ্যে এই কাজটা করছে সরকারি ঘোষণা দিয়ে।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'গতকাল টেলিভিশনে দেখলাম, বিদেশে বিশেষ করে লন্ডনেও সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশিরা বাড়ি কিনছে। এরা কারা? এরা হচ্ছে নব্য আওয়ামী লীগাররা যারা দেশের সম্পদ লুট করেছে তারা এসব বাড়ি কিনছে। এখানেই বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য। সেখানেই জিয়াউর রহমান সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য। জিয়াউর রহমান সাধারণ জীবনযাপন করতেন। আমার মনে আছে তার শাহাদাতের পরে যখন তার মরদেহ পুরনো সংসদ ভবন এখন যেটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সেখানে লাশ আনা হলো জনসাধারণকে দেখানোর জন্য, স্রোতের মতো মানুষজন আসতে থাকল, তখন একটু দূরে দুইজন বিদেশে দাঁড়িয়ে দেখছেন তার কফিনের দিকে তাকিয়ে। আমি তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তোমরা তো বিদেশি, তোমরা কেন এসেছ শ্রদ্ধা জানাতে। তারা বললেন, আমরা বিশ্বব্যাংকে কাজ করি। আমরা অনেক দেশের প্রধানমন্ত্রী দেখেছি, রাষ্ট্রপতি দেখেছি, সরকার প্রধান দেখেছি কিন্তু এরকম একজন সৎ প্রেসিডেন্ট আমরা কখনো দেখি নাই। এখানেই পার্থক্য।'

তিনি বলেন, 'সারাদেশের মানুষ জানে আপনারা (আওয়ামী সরকার) সম্পদ লুণ্ঠন করছেন, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন। যাদের পায়ে চম্পল ছিল না তারা এখন রোজগার্ড গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এটাই বাস্তবতা।'

'সেজন্য আমাদের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে আদর্শ সেই আদর্শকে সামনে নিয়ে এগোতে হবে। তার যে অসাধারণ সাহস, তার যে অসাধারণ প্রজ্ঞা, তার যে দূরদৃষ্টি সেই দূরদৃষ্টিকে সামনে নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের সৌভাগ্য যে, নেতৃত্বে আছেন বেগম খালেদা জিয়া ও তার উত্তরসূরি তারেক রহমান।'

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'এই আন্দোলনে যারা ভয় পাচ্ছেন তাদের নেতারা বলছেন, এমনকি গায়ের জোরের প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেছেন- বিএনপি আর গণতন্ত্র- এটা না কি.. গণতন্ত্রের জন্য না কি বিএনপি কথা বলতে পারে না। অথচ এই আওয়ামী লীগ সেই ১৯৭৫ সালে বাকশাল করে গণতন্ত্র হত্যা করেছে, বর্তমানে দিনের ভোটে রাতে ডাকাতি করে এবং বয়কট নির্বাচনে তারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। শুধু জাতীয় নির্বাচন হয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না, আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র সাংঘর্ষিক।'

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, 'জিয়াউর রহমানের কথা শুনলে এদেশের কিছু লোকের গাত্র দায় হয়। বিএনপির শক্তি এই দেশের জনগণ। বিএনপির পক্ষে জনস্রোত দেখে আওয়ামী লীগ ও তাদের সরকারের এতো গাত্রদাহ যে, তারা বিএনপিকে নিয়ে মিথ্যাচার করে, মিথ্যা বানোয়াট কথা বলে। আমি বলতে চাই, কোনো লাভ নেই।'

Comments

The Daily Star  | English
government decision to abolish DSA

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

12h ago