১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে বিএনপির পদযাত্রা: মির্জা ফখরুল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা করবে বিএনপি।
আজ শনিবার বিকেল ৫টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'আমাদের এবারের কর্মসূচি হবে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে। গ্যাস-বিদ্যুৎ-চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।'
ইউনিয়ন পর্যায় থেকে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এবার ইউনিয়ন পর্যায় থেকে আমরা পদযাত্রা শুরু করব। এরপরে ধীরে ধীরে আমরা উপজেলা-জেলা-মহানগর এবং এরপর তাদের যে ক্ষমতার মসনদ, সেই মসনদ জনগণ দখল করে নেবে, জনগণের সরকার গঠন করবে।'
'আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, আমরা ধীরে ধীরে চলছি, আমরা মানুষের অধিকারকে রক্ষা করার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে চলছি। আপনারা দেখেছেন যে, ঢাকায় ইতোমধ্যে পদযাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছি এবং মানুষকে নিয়ে এগিয়ে চলার মধ্য দিয়ে যে একটা লংমার্চ, সেই লংমার্চের মধ্য দিয়ে আমরা এদের পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের একটা রাষ্ট্র বানাতে চাই', যোগ করেন তিনি।
ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচি সফল করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান রেখে তিনি বলেন, 'আসুন আজকে গ্রামের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ইউনিয়নের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা-জেলার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানোর জন্য আমরা এগিয়ে চলি, এগিয়ে চলাই হবে আমাদের বিজয়।'
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের একপাশের সড়কে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে এই সমাবেশ হয় ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের আয়োজনে। ঢাকা ছাড়াও অন্য ৯টি বিভাগীয় শহরে একযোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
১০ দফা দাবিতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে, এটি তার চতুর্থ কর্মসূচি। গত ২৪ ডিসেম্বর ৯ বিভাগীয় শহরে এবং ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল, ১১ জানুয়ারি সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি এবং ২৫ জানুয়ারি সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।
শনিবার ঢাকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম-পিপলস পার্টি আলাদা আলাদা সমাবেশ করে। তারাও ১১ ফেব্রুয়ারি পদযাত্রার অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
দুপুর ১২টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। সমাবেশের কার্যক্রম বেলা ২টায় শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৫টায়।
কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্টুরেন্ট মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়কের ২ পাশে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল। নেতাকর্মীরা লাল-হলুদ-নীল-সবুজ টুপি পড়েন, তাদের কারও কারও হাতে ছিল জাতীয় ও বিএনপির পতাকা।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। এটা প্রমাণিত হয়েছে, আবার যেসব উপনির্বাচন হয়ে গেল, সেই উপনির্বাচনগুলোতে। আমি সে বিষয়ে যাব না। আমি শুধু বলতে চাই একটি কথা। হিরো আলম (বগুড়া উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী), সে আজকে প্রমাণ করেছে যে, আওয়ামী লীগ এই হিরো আলমের কাছেও কতটা অসহায়, যে তাকে (আওয়ামী লীগ) রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জিততে হয় ৬-৭শ ভোটে।'
তিনি বলেন, 'আজকে প্রমাণিত হয়েছে যে, আবদুস সাত্তার (উকিল আবদুস সাত্তার), যিনি দলত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তাকে আওয়ামী লীগের নিজের লোক মনে করে জয়ী করতে বিরোধী প্রার্থীকে গুম করতে হয়।'
এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে কী, সুষ্ঠু হবে কী, আপনারা ভোট দিতে পারবেন? মির্জা ফখরুলের এমন প্রশ্নের জবাবে নেতাকর্মীরা সমস্বরে 'না' সূচক শ্লোগান দেন।
বাজারের অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'বাজারের অবস্থা আপনারা জানেন। এক লাফে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ২৬৩ টাকা বেড়েছে। আজকে মা-বোনেরা এখানে আছেন। তারা জানেন, কী কষ্ট করে তাদের সংসার চালাতে হয়।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই সরকার আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিয়েছে। তারা আজকে ঋণগ্রহণ করছে। আপত্তি নেই। উন্নয়নের জন্য অবশ্যই ঋণ নিতে হবে, ঋণ নিতে হয়। কিন্তু সেই ঋণের টাকা নিয়ে যদি পাচার করে কানাডার বেগমপাড়ায় গিয়ে বাড়ি তৈরি করেন, ঋণ এনে ফ্ল্যাট কেনেন, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম তৈরি করেন, তাহলে সেই ঋণের টাকা বাংলাদেশের মানুষ পরিশোধ করবে কেন? ঋণের টাকা আনবেন আর আমাদের জনগণের পকেট কেটে টাকা নিয়ে যাবে। মানুষের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন মানুষ সরকারের পতন দেখতে চায়, পরিবর্তন দেখতে চায়।'
তিনি বলেন, 'আমরা দেখছি যে, তারা (সরকার) মেগাপ্রজেক্ট আবার শুরু করেছে। পাতাল রেলের প্রজেক্ট করেছে, সেই প্রজেক্টে ৫২ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। আর আমার সাধারণ মানুষকে গরীব-দুস্থ ভাতা দিত, সেই ভাতার টাকা তারা (সরকার) চুরি করে লুট করতে শুরু করেছে এবং সেই ভাতার টাকাও বন্ধ করে দিচ্ছে।'
'এই সরকার আজকে সাধারণ মানুষের দিকে তাকায় না। তারা (ক্ষমতাসীনরা) তিলে তিলে বড় হচ্ছে, ফুলে-ফেঁপে উঠছে। পাকিস্তান আমলে এই আওয়ামী লীগ শ্লোগান দিত ২২ পরিবারকে দূর করতে হবে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আজকে সেই আওয়ামী লীগ কয়েক হাজার পরিবার তৈরি করেছে, যে পরিবার বাংলাদেশের সমস্ত সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে যাচ্ছে। আজকে এ দেশ লুটেরাদের বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। এই লুটেরার নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ', বলেন তিনি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, 'এখনো সময় আছে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। এই আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আন্দোলনের পতন ঘটাব, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনব, কারাবন্দী সব রাজবন্দীদের মুক্ত করব।'
ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'আজকে আমাদের কৃষ্টি, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ, আমাদের ঐতিহ্য সব কিছুকে ধ্বংস করেছে। আমাদের সংসদ ধ্বংস করেছে, আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে, আমাদের ধর্মবোধকে ধ্বংস করছে। আমাদের সত্যিকার অর্থে একটা নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে। এই সরকার দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে যাচ্ছে।'
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজুলল হক মিলন, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুজ্জামান রিপন, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরাফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, বেনজীর আহম্মেদ টিটু, সাইফুল আলম নিরব, নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন এবং সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী বক্তব্য দেন।
এ ছাড়া, ঢাকা মহানগর বিএনপির তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানী, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন এবং ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বক্তব্য দেন।
Comments