দক্ষিণ বা উত্তরপন্থী না—বিএনপি মধ্যপন্থী, তাই সবার সঙ্গে আলোচনা: সালাহউদ্দিন

ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, 'আমরা দক্ষিণপন্থাও না, উত্তরপন্থাও না। আমরা বাংলাদেশের পন্থা, মধ্যপন্থায় বিশ্বাস করি। সে জন্য সব রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক শক্তি এবং জনগণের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছি।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা মনে করি, বিএনপি একটি গণমানুষের দল। সে কারণে আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে চাই এবং এ দেশের রাজনীতিতে পারস্পারিক সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থান আমরা সৃষ্টি করতে চাই।'

'সব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আদর্শিক-দার্শনিক মতপার্থক্য থাকলেও জাতীয় স্বার্থে সবাই যাতে এক জায়গায় বসতে পারি, সে রকম একটা পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করতে চাই,' যোগ করেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

ইসলামিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপি যোগাযোগ বাড়াচ্ছে, জোট হিসেবে আপনারা কোন কোন দলকে চাচ্ছেন জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, 'ইসলামপন্থী দল বাংলাদেশের একটি অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। যেখানে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগের বেশি ইসলাম ধর্মাবলম্বী—মুসলিম, তাদের (ইসলামপন্থী দল) প্রতি রাজনৈতিক সমর্থন না থাকলেও (জনগণের) মানসিক সমর্থন আছে যে, এই দেশে যারাই রাজনীতি করুক, কুরআন-সুন্নাহবিরুদ্ধে কোনো আইন প্রণয়ন করা যাবে না। শরিয়াহবিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করা যাবে না। এই বক্তব্য তারাও দেয়, আমরাও দেই।'

তিনি বলেন, 'গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অনেক সময় জাতীয় সংসদে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে অনেক বিষয়ে কম্প্রোমাইজড ওয়েতে আইন প্রণয়ন করতে হয়। সব মতাদর্শের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধভাবে যদি আইন প্রণয়ন করা যায়, সেই আইন টিকে, বাস্তবায়ন করা যায়। বিশাল জনগোষ্ঠীর মতামতের বাইরে যদি কোনো আইন প্রণয়ন করা হয়, সেই আইন কিন্তু বাস্তবায়ন করা যায় না।' 

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, 'এক বছর মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট সময়, কম সময় নয়। নিরপেক্ষ ও নির্মোহ মূল্যায়ন করলে আমি বলবো, সরকারের কাছে আমরা আরও বেশি কিছু আশা করেছিলাম। এই জাতি আরও অনেক বেশি আশা করেছিল।'

'যেহেতু অনির্বাচিত সরকার ও বিধ্বস্ত রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতির সময় তাদের দায়িত্ব নিতে হয়েছে; বিধ্বস্ত অর্থনীতি, ব্যাংকগুলো লুণ্ঠিত অবস্থায় তারা পেয়েছে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি একদম বলতে গেলে শূন্যের কোটায় ছিল, সেখানে থেকে এই সরকারকে বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটতে হয়েছে। জনগণের দাবির কোনো শেষ ছিল না, মব কালচারের সৃষ্টি হয়েছে। এতো সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে যে পর্যায়ে তারা এখন উন্নীত হয়েছে, আমি বলবো, তাদের পক্ষে এর বেশি অর্জন করা হয়তো সম্ভব ছিল না। তবে জাতির আশা অনেক বেশি ছিল,' বলেন তিনি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, 'বিশেষ করে গণতন্ত্রের পরিবর্তে মব সংস্কৃতির যে প্রবণতা এসেছে, সরকার যথা সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়নি বলেই এই ক্ষেত্রে আমি তাদের একটু ব্যর্থতা দেখি। যেসব বিষয়ে প্রায়োরিটি ফিক্স করা উচিত ছিল এবং আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব প্রায়োরিটি ফিক্স করা উচিত ছিল তারা সেদিকে গুরুত্ব দেননি।'

'না দেওয়ার কারণ হচ্ছে সরকারে যারা আছেন, তাদের মধ্যে রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা কম জনের আছে। আমলাতন্ত্র ও পুলিশ প্রশাসন এখনো ভঙ্গুর অবস্থায় আছে—তাদের দিয়ে প্রশাসন চালানো, রাষ্ট্র পরিচালনা করা খুবই কঠিন,' যোগ করেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, 'আমি মনে করি, ভবিষ্যৎ সরকারকে এই চ্যালেঞ্জটাই মোকাবিলা করতে হবে। গত ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্মিত ব্যুরোক্রেসি তারা রেখে গেছে। সেটা ব্যুরোক্রেসি, সাংবিধানিক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান দিয়ে জনপ্রত্যাশা পূরণ করা যাবে সামনে—আমি মনে করি না। অন্তর্বর্তী সরকার খুব একটা আশাব্যঞ্জক কিছু করতে পারেনি, এটা একটা কারণ।'

Comments