আওয়ামী লীগ লুটপাটের মহোৎসব সৃষ্টি করেছে: রুহিন হোসেন প্রিন্স

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, সিপিবি, আওয়ামী লীগ,
সিপিবির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বছরব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী সমাবেশ। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ লুটপাটের এক মহোৎসব সৃষ্টি করেছে। জনগণ দুঃশাসনে অতিষ্ঠ, ন্যূনতম ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে। মানুষের প্রকৃত আয় কমলেও মূল্যবৃদ্ধি দৈনন্দিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করলেও, অন্যদিকে ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারা করে কিছু মানুষ বিদেশে লাখ কোটি টাকা পাচার করছে। কিন্তু, তার কোনো বিচার নেই।

আজ সোমবার সিপিবির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বছরব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'তথাকথিত কাঠামোগত উন্নয়ন (যার ভেতরে ভরপুর দুর্নীতি) দিয়ে মানুষকে একটি কাল্পনিক উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখাতে তারা পটু। অন্যদিকে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি তার বিগত দিনের দেওলিয়াপনা আজও ঘুচাতে ব্যর্থ। তাছাড়া জামাতসহ সাম্প্রদায়িক দলগুলো বরাবরের মতই একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানানোর স্বপ্নেই বিভোর। এ সুযোগে বিরাজনীতিকরণের শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।'

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, 'মহান মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ, সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর সার্বিক কার্যক্রম মুক্তিযুদ্ধে এনেছিল নতুন এক মাত্রা, যা জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে আজও স্মরণ করে। আজ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বি-দলীয় লুটপাট ও ক্ষমতাকেন্দ্রীয় ভাগ-বাটোয়ারা ধারার বিপরীতে সিপিবি আদর্শের ঝাণ্ডা নিয়ে অন্যান্য বামপন্থীদের নিয়ে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি যখন কেনাবেচা, আখের গোছানো, নোংরা খেলা, সেখানে নীতির প্রশ্নে আপসহীন কমিউনিস্ট পার্টি।'

'এই সার্বিক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সিপিবি একটি বিকল্প রাজনৈতিক বলয় গড়তে নীতি-নীষ্ঠ জায়গা থেকে লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই সংগ্রামে সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। নীতিহীন শক্তিকে 'না' ও নীতি-নীষ্ঠ শক্তিকে 'হ্যাঁ' বলতে হবে,' বলেন তিনি।

সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নের দাবি জানান তিনি।

সমাবেশে সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, 'বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সিপিবি সবচেয়ে আপসহীন ও মেহনতি মানুষের স্বার্থে যোগ্য রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আর এই শক্তি ও দৃঢ়তা অর্জন করেছে তার ৭৫ বছরের লড়াই-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে।'

তিনি আরও বলেন, 'বেআইনি থাকার পরেও পাকিস্তানের দীর্ঘ শাসন ও শোষণবিরোধী লড়াইয়ে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা ছিল কিংবদন্তীতুল্য। ঐ সময় নানাভাবে কমিউনিস্টদের হত্যা করা হয়। ১৯৫০ সালে ২৪ এপ্রিল রাজশাহীর খাপড়া ওয়ার্ডে কমিউনিস্ট রাজবন্দীদের নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়, যা ছিল প্রথম জেল হত্যা। পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন, দুর্নীতি-লুটপাট রুখে দাঁড়াতে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, জাতীয় সম্পদ রক্ষা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনসহ দেশের সকল শ্রেণি-পেশার আন্দোলনে সিপিবি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।'

সমাবেশের পূর্বে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন- সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। এ সময়ে জাতীয় সংগীত, কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল পরিবেশন করা হয়। এর আগে গণসংগীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা।

Comments

The Daily Star  | English

Cops get whole set of new uniforms

The rules were published through a gazette yesterday, repealing the previous dress code of 2004

2h ago